রবিবার ● ৮ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি ১৩ জন আনন্দ ৫ জনের কান্না
বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি ১৩ জন আনন্দ ৫ জনের কান্না
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :: স্বাধীনতার ৪৪ বছর সিরাজগঞ্জে বেঁচে থাকা ১৮জন বীরাঙ্গনার মধ্যে ১৩জনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ৷ স্বীকৃতি পাওয়া ১৩ বীরাঙ্গনার মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে আর স্বীকৃতি থেকে বাদ পড়া ৫জন বীরাঙ্গনার মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ-হতাশা আর কান্না ৷ গুমরে গুমরে কাঁদছেন এসকল বীরমাতারা ৷ অবিলম্বে তাদের নাম অন্তভুক্তের দাবী জানিয়েছেন বীরমাতাগন ৷
জানা যায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনীর লালসার ও নির্মম নির্যাতনের শিকার হয় সিরাজগঞ্জের ৩৫ নারী ৷ ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিরাজগঞ্জে এসে ৩৫ জন বীরাঙ্গনাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে তাদের বুকে টেনে নিয়েছিলেন ৷ সেই সম্মান ছাড়া ৪৩ বছরে তাকের ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি ৷ স্বাধীনতার ৪৪ বছর লাঞ্চন-বঞ্চনা-অভাব-অনটন-অসুখ ছিল তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী ৷ বিনা চিকিত্সায় ১৭ মারা গেছেন ৷ নানা লাঞ্চনা-বঞ্চনার আর অভাব অনটনের সাথে মোকাবেলা করে এদের মধ্যে ১৮জন এখনও বেঁচে রয়েছে ৷ জীবন সায়াহ্নে এসে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে একটু শান্তিতে ও মর্যাদার সাথে মৃত্যুবরণ করতে চাইতেন এসকল বীরমাতারা ৷ বীরাঙ্গনাদের দাবীর প্রেক্ষিতে সোমবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের ৪১জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেন ৷ এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের ১৩জনের নাম রয়েছে ৷ বাদ পড়েছেন ৫জন ৷
বাদপড়া বীরাঙ্গনাদের মধ্যে (রাহেলা বেগম) :: পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের জননী বীরমাতা রাহেলা বেগম৷ আটবছর আগে একটি বেসরকারী টেলিভিশনে তার নির্যাতনের সাক্ষাতকার প্রচার হয় ৷ আর সে কথা শুনেই জামাতা মেয়েকে তালাক দেয় ৷ সেই তালাকপ্রাপ্ত মেয়েকে নিয়ে রাস্তার ধারে পিঠা বিক্রি এবং সুতাকলে কাজ করে সংসার চলছে তার ৷ (নুরজাহান) :: আরেক বীরমাতা নুরজাহান বেগম বুয়া আর সুতা মিলে কাজ করে কোন রকম জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে৷ (হাজেরা বেগম) :: ৭১’র পাক বাহিনীর হাতে সম্বম হারানো বঙ্গবন্ধুর বীরমাতা হাজেরা বেগম ৷ সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের রেললাইনের ধারে বাস করছেন এর বীরমাতা ৷ দিনমজুর ছেলে যা আয় করে তা দিয়েই চলছে পাঁচজনের সংসার৷ (আয়েশা):: বীরাঙ্গনা আয়েশা খাতুন ৷ বয়স পয়ষট্টি ছুই ছুই ৷ শহরের সন্নিকটে তেলকুপি গ্রামে রাস্তার ধারে বসতবাড়ী ৷ স্বামী মারা যাবার পর বহুকষ্টে জীবনযাপন করছেন ৷ একটি বেসরকারী সংস্থা থেকে সামান্য আয় ঋণ নিয়ে ছেলেকে দিয়ে প্লাষ্টিকের ব্যাগের ব্যবসা শুরু করেন কিন্তু বর্তমানে অর্থাভাবে সেটিও বন্ধ রয়েছে ৷ (করিমন):: খুড় কুটো আর বেত দিয়ে শীতল পাটি এক মেয়েকে সাথে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে বঙ্গবন্ধুর বীরমাতা করিমনের ৷ জায়গা নেই-ঘর নেই ৷ ছেলের ঘরের বারান্দায় মেয়েকে নিয়ে কোনমতে রাত্রিযাপন করে এই মাতা ৷ এতো কষ্টের মাঝেও জেলার ১৮ বীরমাতা বেসরকারী সংস্থা উত্তরণ মহিলার সংস্থার ছায়াতলে একত্রে তারা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির আশায় দিন গুনছিল ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত সঙ্গী ১৩জন গেজেট ভুক্ত হলেও বাকী ৫জনের কপালে জোটেনি স্বীকৃতি ৷ এ দুঃখ যেন পাহাড়ের মতো তাদের বুকে চেপে বসেছে ৷
কান্নাজড়িত কন্ঠে বীরাঙ্গনা রাহেলা খাতুন, করিমন ও আয়েশা বলেন, দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির আশায় বেঁচে আছি ৷ অনেক প্রতিশ্রতি পেয়েছি ৷ কিন্তু সাথী বোনদের নাম গেজেটে থাকলেও আমরা এখনও বঞ্চিত ৷ এ দুঃখ যেন পাহাড়সম ৷ অবিলম্বে তাদের নাম গেজেটে অন্তভূক্তির দাবী জানিয়েছেন এ বীরমাতাগন ৷ শুধু বাদপাড়া বীরমাতা নয় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া বীরমাতাগনও তাদের সাথীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবী জানিয়েছেন ৷
বীরাঙ্গনাদের মায়ের মমতায় আগলে রাখা সিরাজগঞ্জের উত্তরণ মহিলা সংস্থার পরিচালক সাফিনা লোহানী জানান, সিরাজগঞ্জের ৩৫ বীরাঙ্গনা মাতার মধ্যে রোগব্যাধি ও দারিদ্র্যের কারণে ধুঁকে ধুঁকে ১৭জন মারা গেছেন ৷ বাকি ১৮ জনের মধ্যে ১৩ জন স্বীকৃতি পেয়েছেন ৷ ৫জনের নাম বাদ পড়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন সেই সাথে বাদ পড়া বাকী ৫জনসহ মৃত বীরাঙ্গনাদের পরিবারদের স্বীকৃতি প্রদানের দাবী জানিয়েছেন ৷
আপলোড : ৮ নভেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : রাত ৯.০৭ মিঃ