মঙ্গলবার ● ২৫ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রমেল চাকমা হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট পালিত (ভিডিওসহ)
রমেল চাকমা হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট পালিত (ভিডিওসহ)
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (১২ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৩৪মি.) এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) নেতা রমেল চাকমাকে সেনাবাহিনীর হেফাজতে হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে অবস্থান ধর্মঘট শান্তিফুর্ণভাবে পালন করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নেতাকর্মীরা।
২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত হিলউইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক মন্টি চাকমার নেতৃত্বে প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেন। স্বারকলিপি গ্রহণ করেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী। রমেল চাকমা হত্যার সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার দাবিতে রমেল চাকমা হত্যা প্রতিবাদ কমিটির পাশাপাশি দুর্গম প্রত্যন্ত ও কুতুবছড়ি,ঘিলাছড়ি ও নানিয়ারচর এলাকা থেকে আগত সাধারন নারী পুরুষও এ অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ প্রদত্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর লিখিত স্বারকলিপির মূল বিষয়টি হুবহু তুলে ধরা হল: পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নানিয়ারচর শাখার সাধারন সম্পাদক, নানিয়ারচর কলেজের ছাত্র ও এইচএসসি পরিক্ষার্থী রমেল চাকমাকে গত ৫ এপ্রিল ২০১৭ নানিয়ারচর বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর মেজর তানভীরের নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা তাকে নানিয়ারচর জোনে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালালে রমেল চাকমা অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং গুরুতর জখম হন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরে তাকে থানায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে চাইলে ওসি আব্দুল লতিফ তার শারীরিক সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে তাকে পুলিশের হেফাজতে নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং রমেল চাকমাকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। সেনাবাহিনী সদস্যরা রমেল চাকমাকে স্থানয়ি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে তাদেরকে জানানো হয় যে, এরকম গুরুতর আহত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রমেল চাকমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। অবশেষে সেনাবাহিনী রমেল চাকমাকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। তবে সেখানে পুলিশী প্রহরায় তাকে চিকিৎসা দেওয়া হলেও তার পরিবারের সদস্য কিংবা আত্মীয় স্বজন কাউকে তার সাথে স্বাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। গত ১৯ এপ্রিল ২০১৭ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমেল চাকমা মারা যান। কিন্তু রমেল চাকমার মরদেহটি বাড়ীতে নিয়ে যেতে ও ধর্মীয় বিধান মোতাবেক সৎকার করতে দেওয়া হয়নি।সেনাবাহিনী ২১ এপ্রিল ধর্মীয়, সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা ও পরিবারের সদস্য ও জ্ঞাতিবর্গের উপস্থিতি ছাড়া নিজেরাই পেট্রোল ঢেলে রাশটি পুড়ে ফেলে। রমেল চাকমাকে ট্রাক পোড়ানো ও বাস লুটের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নানিয়ারচর জোনের সদস্যরা দাবি করেছেন। কিন্তুু নানিয়ারচর কিংবা অন্যকোন থানায় তার বিরুদ্ধে উক্ত মামলায় কিংবা অন্য কোন মামলায় তার নাম পাওয়া যায়নি, যা ওসি আব্দুল লতিফ স্বীকার করেছেন। তাই সেনাবাহিনীর উপরোক্ত দাবি সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। যদি রমেল চাকমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ কিংবা মামলা থেকে থাকে তাহলেও দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার সুবিচার পাওয়ার অধিকার ছিল। অপরদিকে তাকে জোনে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালানোর কোন এখতিয়ার ও ক্ষমতা সেনাবাহিনীর নেই। তারা রমেল চাকমাকে তার প্রাপ্য সকল প্রকার নাগরিক ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। আমরা মনে করি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক গণতান্ত্রিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তার সহযোগী সংগঠনের ওপর চলমান রাজনৈতিক দমন পীড়নের অংশ হিসেবে রমেল চাকমাকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা আপনার কাছে নিন্মোক্ত দাবি জানাচ্ছি: ক. রমেল চাকমার মৃত্যুর জন্য দায়ী নানিয়ারচরের জোন কমান্ডার বাহলুল আলম ও মেজর তানভীরসহ অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। খ. পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। গ. রমেল চাকমার পরিবারকে যথোপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপুরন দিতে হবে। ঘ. ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের উপর চলমান সেনা দমনপীড়ন, তথা অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, নির্যাতন, মিথ্যা মামরা দিয়ে হয়রানী বন্ধ করতে হবে। স্বারকলিপি প্রদান শেষে নেতাকর্মীসহ সাধারন জনগণ দুর্গম এলাকা থেকে আগত নারী পুরুষ জেলা প্রশাসকের দক্ষিন গেইটে অবস্থান ধর্মঘটে অবস্থান নেন। অবস্থান ধর্মঘট চলাকালে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)এর অঙ্গসংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সাধার সম্পাদক মন্টি চাকমা অভিযোগ করেন, সকাল ১০ টায় তাদের কর্মসূচি শুরু করার কথা থাকলেও বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর বাধাঁর কারণে তারা সকাল সাড়ে এগারটায় কর্মসূচিস্থলে উপস্থিত হন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) সফিউল সারোয়ার অবস্থান ধর্মঘট পালনের বেঁধে দেয়া সময়সীমা দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট পালন হয়। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট( ইউপিডিএফ) এর অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি অত্যন্ত শান্তিপূর্ন ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালন হয়েছে বলে জানান মন্টি চাকমা। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন শৃংখলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলিতে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল।
ভিডিও