মঙ্গলবার ● ২ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » রাউজানে এক যুবককে গুলি করে হত্যা
রাউজানে এক যুবককে গুলি করে হত্যা
রাউজান প্রতিনিধি :: (১৯ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৫৫মি.) রাউজানে মধ্যরাতে ঘুমন্ত এক যুবককে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্বরা। ধারণা করা হচ্ছে প্রতিপক্ষের লোকজন এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। নিহত যুবকের নাম পারভেজ হোসেন (২০)। তার পিতার নাম মোহাম্মদ ফরিদ। ১ মে সোমবার দিবাগত রাতে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে উপজেলার রাউজান ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের শমসের নগর এলাকার ভেঙ্গৃু চকিদারের বাড়িতে।
উল্লেখ্য, গত এক মাসের ব্যবধানে রাউজানে তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। জানা যায়, গত ৩০ মার্চ ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক নূরুল আলম নুরু নামের এক ব্যাক্তিতে হত্যা পর কর্ণফুলির তীরে লাশ ফেলে দেয়া হয়। গত ১৪ এপ্রিল ক্রিকেট খেলতে গিয়ে সহপাঠিদের ক্রিকেট ষ্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করলে ইয়াছিন আশরাফ জিল্লু নামে এক স্কুল ছাত্র গুরুতর আহত হয়ে হাসপালে ভর্তি হয়। ১৬ দিন লাইফ সার্পোটে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ২৯ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত সোমবার মধ্যরাতে রাউজান ইউনিয়নে পারভেজ হোসেন হত্যাকান্ডের স্বীকার হলো। ২ মে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল সরোজমিনে দেখা যায়, ভেঙ্গু চকিদারের বাড়ির পুকুর ঘাটে মাথার কুলিবিহীন পারভেজের নিথরদেহ পরে আছে। লাশের ডান পাশে পরে আছে দেশীয় তৈরী একটি কাটাঁ বন্দুক। বন্দুকের ভিতর রয়েছে এক রাউন্ড কার্তুজ। লাশের বাম পাশে পুকুর পাড়ে বড় আকৃতির একটি গাছ রয়েছে । গাছটি রক্তাক্ত অবস্থায়। গাছের গোড়ালীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাথার মগজ। ধারণা করা হচ্ছে নিহত পারভেজকে গুলি করার পর গাছের সাথে মাথা থেঁতলে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিমত পারভেজ দৈনিক হিসাবে কাজ করতেন বিভিন্ন স্থানে। পাশাপাশি স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে যোগাযোগ ছিল তার। হয়তো গ্রুপিং এর স্বীকার হয়ে প্রতিপক্ষের হাতে সেই নিহত হয়।
হত্যাকান্ডের স্বীকার পারভেজের পিতা মোহাম্মদ ফরিদ প্রবাসে ১০ বছর। গত দশটি বছর হয়ে গেলেও ওমান প্রবাসী ফরিদ খোঁজ খবর নেয়নি পরিবারের। তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তান নিয়ে স্ত্রী ছৈয়দুর নূর এক সময় মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে। পরবর্তীতে পারভেজ লেখাপড়া বন্ধ করে শ্রমজীবি হিসাবে দৈনিক কাজ করে সংসার চালাতেন।
পারভেজের মা ছৈয়দুর নূর বিলাপ করতে করতে সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, আমার ছেলে রাত ১১টায় ঘরে এসে ঘুমিয়ে পরেছিল। কে বা কাহারা আমার ছেলেকে শেষ রাতে ডেকে নিয়ে গেল। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। মায়ের বিলাপে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় তারা ভোরে নামাজ পড়তে উঠে প্রথমে পারভেজের নিথর দেহ পরে থাকতে দেখে প্রতিবেশি ময়নাল উদ্দিন নামে তার এক চাচা লাশ দেখে বাড়ির সবাইকে খবর দিলে পারভেজকে সনাক্ত করা হয়।
লাশের পাশে অস্ত্রের রহস্য নিয়ে স্থানীয়রা ধারনা করছেন, সন্ত্রাসীরা হত্যার পর লাশের পাশে অস্ত্র রাখার উদ্যেশ্য, আত্মহত্যা হিসাবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্ট করা হয়েছে। প্রথমে স্থানীয়রা আত্মহত্যা মনে করলেও গাছের সাথে মাথা থেঁতলানোর দৃশ্যসহ নানা নমুনায় হত্যা করার প্রমান পাওয়া যায়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাউজান ইউনিয়নের চেয়ারম্যন বিএম জসিম উদ্দির হিরু সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করেছি। আমরা চেষ্টা করছি আসল রহস্য বের করতে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্তার হোসেন ভুলু জানান, ঘটনা যেই করুক আমি এর তদন্ত পূর্বক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি । পাশ্ববর্তী ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দীলিপ দে জানান, পারভেজ সন্ত্রাসী জড়িত কিনা আমার জানা নেই। তবে সেই আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠনের সমর্থন করতো।
পুলিশ সকাল সাড়ে দশটার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। হত্যাকান্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেপায়েত উল্ল্যাহ সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, ঘটনাস্থল পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতারা পরিদর্শন করেছেন। কারা এই ঘটনা করতে পারে সেই ব্যাপরে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।