বুধবার ● ৩ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » বিএনপি নেতা ওয়াদুদ ভুঁইয়া ও ম্যামাচিংকে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি
বিএনপি নেতা ওয়াদুদ ভুঁইয়া ও ম্যামাচিংকে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি
অনলাইন ডেস্ক :: ‘এক নেতা এক পদ’- নীতির বাস্তবায়ন করছে বিএনপি। চলমান সাংগঠনিক পুনর্গঠনের মধ্যদিয়েই সে নীতির বাস্তবায়ন ঘটাচ্ছে দলটি। ইতিমধ্যে জেলা কমিটির পদের কারণে কেন্দ্রীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে একডজন নেতাকে। এ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন আরও কয়েক ডজন নেতা। এরই অংশ হিসাবে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে বান্দরবান জেলা সভাপতি ম্যামাচিং ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সহ-সম্পাদক পদ থেকে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়াকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। জাতীয় দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত এক সংবাদে এ কথা বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভুঁইয়া বলেন. বিষয়টি তিনিও শুনেছেন, তবে এখনো কোনো লিখিত চিঠি পাননি।
এদিকে মানবজমিন পত্রিকাটির রাজনৈতিক বিটের সিনিয়র সাংবাদিক কফি কামাল লিখিত ঐ সংবাদে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন থেকেই দলের শতাধিক নেতার দখল ছিল কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ। একই নেতা কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার কারণে দলীয় রাজনীতিতে তৈরি হয় নানামুখী জটিলতা। কেন্দ্রীয় পদে থাকায় জেলা পর্যায়ে তাদের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা ছিল শূন্যের কোঠায়।
উল্টো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ব্যাপারে শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকে সিদ্ধান্তও তাদের হস্তক্ষেপে পদে পদে বাধার মুখে পড়তো। নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দলের কারণে দলীয় রাজনীতিতে দেখা দিয়েছিল স্থবিরতা। নেতৃত্বের বিকাশে তৈরি হয়েছিল প্রতিবন্ধকতা। এসব বিবেচনা করেই দলের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে আনা হয়েছিল ‘এক নেতা এক পদ’ নীতির প্রস্তাব।
কাউন্সিলরদের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটে পাসের পর সেটা দলের গঠনতন্ত্রে সংযুক্তও করা হয়। দলের সিদ্ধান্ত মেনে কাউন্সিলের পরপরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনসহ অনেকেই জেলা ও অঙ্গদলের পদ ছেড়ে দেন।
কিন্তু বেশির ভাগ নেতার লবিং-তদবিরের কারণে সেটার বাস্তবায়ন নিয়ে দোটানায় পড়েন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। কিছু জেলায় সাংগঠনিকভাবে দলের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এটাই ছিল তাদের প্রধান যুক্তি। এমনকি তারা নিজ নিজ জেলার সার্বিক অবস্থা জানিয়ে তার অনুপস্থিতি কি কি ধরনের সমস্যা তৈরি ও ক্ষতির কারণ হতে পারে তা উল্লেখ করে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে চিঠিও দিয়েছেন।
তাদের একজন দলের যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতি মজিবুর রহমান সরোয়ার। বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৃত্যু এবং রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হওয়ার কারণে সেখানকার নেতৃত্ব এখন কিছুটা নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। তাই সংগঠন গুছিয়ে ও কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব পরিবর্তনে চেয়ারপারসনের কাছে সুযোগ চেয়েছেন মজিবুর রহমান সরোয়ার।
অন্যজন যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন বিএনপি মহাসচিবের কাছে চিঠি দিয়ে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দুই পদে থাকার সুযোগ চেয়েছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দলের সংস্কারপন্থি অংশের নেতৃত্ব দেয়া আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার জেলা হিসেবে নরসিংদীর নেতৃত্বে কিছুটা নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। খায়রুল কবীর খোকনের নেতৃত্বে নেতারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় এখন হুট করে নেতৃত্ব পরিবর্তন হলে তাদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিতে পারে। স্থানীয় নেতাদের এমন মতামতসহ নানা যুক্তি তুলে ধরে তিনি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাস্তবতা বিবেচনা করে চেয়ারপারসনের তার বিশেষ ক্ষমতাবলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেতাদের সে সুযোগ দিতে পারেন। আবার কিছু নেতা কাউন্সিলের পর তাদের একটি পদ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণাসহ চিঠি দিলেও তাদের ব্যাপারে সহসা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না দল। ফলে কাউন্সিলের বছর পেরিয়ে গেলেও প্রায় অকার্যকর রয়ে যায় সে বিধি।
সর্বশেষ তিন মাসে পুনর্গঠিত ১০টি জেলা কমিটির ১২ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাদের কেন্দ্রীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র সভাপতি পদের পাশাপাশি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন মশিউর রহমান। পুনর্গঠিত জেলা কমিটিতে তাকে সভাপতি পদে রাখা হলেও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
একইভাবে বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ সম্পাদক পদ থেকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে বান্দরবান জেলা সভাপতি ম্যামাচিং, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক পদ থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি শরীফুল আলম, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে জামালপুরের সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক পদ থেকে নীলফামারীর সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান, সমবায় বিষয়ক সহ-সম্পাদক পদ থেকে নওগাঁ বিএনপি’র সভাপতি নাজমুল হক সনি, পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে জয়পুরহাট জেলা বিএনপি সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান, কর্মসংস্থান বিষয়ক সহ-সম্পাদক পদ থেকে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, গ্রাম সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক পদ থেকে সৈয়দপুর বিএনপি’র সভাপতি আমজাদ হোসেনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, গত ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে গৃহীত গঠনতন্ত্রে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এক ব্যক্তি দলে একাধিক পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। আপনি জাতীয় নির্বাহী কমিটির পদ ছাড়াও জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন, বিধায় আপনাকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির উপরোক্ত পদ থেকে নির্দেশক্রমে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।’ বিএনপি’র দপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ দুই ইউনিট করে ঘোষিত কমিটির শীর্ষ চার নেতার তিনজনই কেন্দ্রীয় পদে রয়েছেন। বিশেষ কারণে তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে যুগ্ম মহাসচিব পদে রাখার ব্যাপারে শীর্ষ নেতৃত্বের ইতিবাচক। তবে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার সহ সমাজকল্যাণ সম্পাদক, উত্তরের সভাপতি এমএ কাইয়ুম ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক, মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনকে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় শিগগিরই কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতির চিঠি পাঠানো হবে।
কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, একেএম মোশাররফ হোসেন, আফরোজা খান রীতা, মইনুল ইসলাম শান্ত, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, খায়রুল কবীর খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আসাদুল হাবিব দুলু, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াসিন, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানসহ অনেকেই জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন।
তবে বিএনপি নেতারা জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু কিছু জেলায় এ নীতির বাস্তবায়নে কিছু জটিলতা রয়েছে। সেখানে এমন কিছু কেন্দ্রীয় নেতা দায়িত্বে রয়েছেন যারা জেলার রাজনীতিতে যেমন সাংগঠনিক কারণে অপরিহার্য তেমনি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও তাদের প্রয়োজন। তাই বিশেষ বিবেচনায় তাদের অনেকেই দুইপদে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, কাউন্সিলে পাস হওয়ার পর এক নেতা এক পদ কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে অনেকেই এক পদ থেকে সরে গেছেন। কিছু নেতাকে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে চিঠি দেয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্রে যুক্ত এই এক নেতা এক পদের বিধিটি ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। সূত্র:পার্বত্যনিউজ।