শুক্রবার ● ৫ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ৫৭ ধারা মামলার বেড়া জালে বন্দি,২বছরেও বিশ্বনাথ আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি
৫৭ ধারা মামলার বেড়া জালে বন্দি,২বছরেও বিশ্বনাথ আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (২২ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংরাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.০৫মি.) সম্মেলনের প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের। দলীয় কোন্দল জেলা আ’লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সভাপতি আবদুজ জহুর চৌধুরী সুফিয়ানের মৃত্যুবরণসহ নানা কারণে বিগত দিনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি বলে স্থানীয় আ’লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ রয়েছেন। যার ফলে দলের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে জেলা আওয়ামী লীগ হিমশিম খাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার ও সাবেক সদস্য ফখরুল ইসলাম মতছিন নেতৃত্বে দুটি গ্রুপ উপজেলা পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। ৪র্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের বিপক্ষে দলের অপর গ্রুপ বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়েছে। এতে উপজেলার একটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হন।
এদিকে বর্তমানে পাল্টা-পাল্টি মামলা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা। তথ্য প্রযুক্তি মামলা-পাল্টা মামলা অব্যাহত রয়েছে। ইতি মধ্যে উভয় গ্রুপ পাল্টা-পাল্টি তিন মামলা দায়ের করেছেন। বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতারসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফখরুল আহমদ মতছিন। ফেসবুকে’ কটুক্তিপূর্ণ স্ট্যাটাস দেয়ায় ২০০৬ সালের ৫৭ ধারায় ‘তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইনে’ ৬ এপ্রিল সিলেট আদালতে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে ১০ এপ্রিল বিশ্বনাথ থানায় রুজ্জু হয় মামলা।
অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ফখরুল ইসলাম মতছিনকে প্রধান আসামি রেখে আরও ৬ জনের নাম উল্লেখ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এর ৫৭ ধারায় সিলেট আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার। সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কাঁকন দে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে এফআইআর রুজ্জুক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে গত বুধবার রাতেই বিশ্বনাথ থানায় রুজ্জু হয় মামলা।
এরপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এর ৫৭ ধারায় বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার বাদি হয়ে দায়েরকৃত মামলাটির যাবতীয় ডকুমেন্ট ভুয়া ও মিথ্যা চ্যালেঞ্জ করে গত বৃহস্পতিবার সিলেট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩নং আমলী আদালতে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছেন উিপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল আহমদ মতছিন। দায়েরকৃত মামলায় বাবুল আখতার’সহ ৭জনকে আসামি করা হয়েছে। পাল্টা-পাল্টি মামলা দায়েরের প্রতিবাদে গত ২০এপ্রিল উভয় গ্রুপ উপজেলা সদরের মিছিলের আহবান করলে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।
স্থানীয় আ’লীগের বিভিন্ন সূত্র জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের দিয়ে উপজেলা আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলে দলীয় কোন্দল থাকলে দলীয় কার্যক্রম অব্যাহত ও বেগবান হবে। একদিকে সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীন লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে উপজেলা আ’লীগ ও অঙ্গসংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা অন্যদিকে যুক্তরাজ্য আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নেতৃত্বে উপজেলা আ’লীগ ও অঙ্গসংগঠনের আরেকটি অংশের নেতাকর্মীরা মাঠে সরব রয়েছে। উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা তাদের গ্রুপ বড় করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। বিশ্বনাথে আ’লীগ ও অঙ্গসংগঠন মানে শফিক চৌধুরী কিংবা আনোয়ারুজ্জামন চৌধুরী। এখানে গ্রুপের মধ্যে রয়েছে আবার উপগ্রুপ। উভয় গ্রুপের নেতাদের রয়েছে এসব উপগ্রুপ। গ্রাম থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীদের দেখভাল ও নিয়ন্ত্রন করেন উপজেলা পর্যায়ের এসব নেতারা।
২০১৫ সালের ৮জুন উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কণ্ঠভোটে পংকি খান সভাপতি ও পূণরায় বাবুল আখতার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু ওই কমিটি মেনে নিতে নারাজ আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের পদবঞ্চিত নেতারা। তারা ওই কমিটি প্রত্যাখান করেন। কিন্তু কমিটি গঠনের পর পদবঞ্চিত নেতারা বিভিন্ন সময়ে ঘরোয়াভাবে বৈঠক করে আসছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজপথে তাদের কোনো অবস্থান দেখা যায়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগের কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী নেতারা জেলা ও কেন্দ্রে বিভিন্ন অভিযোগও প্রেরন করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়। জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগের ফলে উপজেলা আ’লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন হচ্ছেনা বলে দাবি করে আসছেন পদবঞ্চিত নেতারা। ফলে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি আজ পর্যন্ত।
উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার পূর্বে জেলার আরও চারটি উপজেলায় আ’লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো উপজেলা আ’লীগের কমিটি অনুমোধন হয়নি বিধায় আমাদের উপজেলা আ’লীগে পূর্নাঙ্গ কমিটি হচ্ছেনা। তবে পূর্নাঙ্গ কমিটির তালিকা জেলা নেতৃবৃন্দ কাছে রয়েছে বলে তিনি জানান।