বুধবার ● ১০ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাঙ্গুনিয়াতে ধানের ফলনে হাসি নেই কৃষকের মুখে
রাঙ্গুনিয়াতে ধানের ফলনে হাসি নেই কৃষকের মুখে
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি :: (২৭ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৩১মি.) চট্টগ্রামের শস্য ভান্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ায় গুমাই বিলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। ধানের গুছা পরিপুষ্ট হলেও তার অধিকাংশই চিটা। আবহাওয়া অনূকুলে না থাকায় বৃষ্টির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান কৃষক। বোরো ধান সংগ্রহ করতে গিয়েও বেগ পেতে হচ্ছে কৃষককে। কারণ বাজারে এক একজন শ্রমিকের দৈনিক বেতন ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের উঠানে যাচ্ছে ধানের পরিবর্তে চিটা। গোলায় ধান শূন্য হওয়ায় সহস্রাধিক কৃষকের দু:খের শেষ হচ্ছেনা। আগামী মৌসুমে ধান চাষাবাদে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। প্রতিকূল আবহাওয়া, চড়া মূল্যে শ্রমিক ও সারের উচ্চ মূল্যের কারনে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান একাধিক কৃষক।রাঙ্গুনিয়া কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় এবার বোরো চাষাবাদ হযেছে ৭ হাজার ৫শ ২০ হেক্টর জমিতে। চাষাবাদে শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকুলে ছিল। এতে বোরো চাষাবাদ ফলনেও ভাল ছিল। কিন্তু ধানের গুছাতে যখন ধান পরিপুষ্ট হতে শুরু হয় তখনই এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টির কবলে পড়ে। এতে ধানের গুছা বড় হলেও অধিকাংশ ধান চিটা হয়ে যায়। ফলে কানি প্রতি ধানের উৎপাদন ভাল হলেও চিটার কারণে বিপাকে পড়ে কৃষক। এবছর বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪.৭৫ মেট্টিক টন।মরিয়ম নগরের মাইজ পাড়া গ্রামের কৃষক বদিউল আলম (৭০) জানান,রাঙ্গুনিয়া কৃষি অফিসের মাঠ কর্মকর্তাদের পরামর্শে এবারে আমি আড়াই কানি জমিতে বোরো ধান চাষ করি। শুরু থেকে চাষাবাদে ভালভাবে যত্ন নেওয়ায় পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। পরবর্তীতে একটানা বৃষ্টির কারনে ধানে চিটা ধরে গিয়েছে। আমি শুরুতে কানি প্রতি ১০ মণ ধান উৎপাদনের আশা করলেও ধান কাটার পার ধার অর্ধেক ধান গোলায় তুলতে পারিনি। অধিকাংশ ধানে চিটা থাকায় তা পাওয়া সম্ভব হয়নি। পাইকারী ধান ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে চিটাযুক্ত ধান কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। এতে ধান ঘরে তুলেও উপযুক্ত দামে বিক্রি করতে পারছি না। কাটাখালী গ্রামের কৃষক মো. কবির আহমদ (৫৬) সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, আমি এই মৌসুমে দুই কানি বোরো চাষ করি। ধানের চিটা বাদে ১ কানি চাষের ধান ঘরে তুলেছি। ধান পেয়েছি মাত্র সতের আড়ি।সেচ, সার ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে কানি প্রতি আমার ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। ধান ঘরে তোলা পর যে পরিমান ধান পেয়েছি শ্রমিকের মজুরীও উঠে আসেনি। ধান চাষে অনিহা চলে এসেছে। গুমাই বিলের কৃষক নাজিম, আবদুস সাত্তার ও নুরুল আবছার ধানের চিটা দেখিয়ে আক্ষেপ করে পরবর্তী মৌসুমে ধান চাষাবাদ না করার কথা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান। কৃষিবীদ রুবাইয়েদ রাশেদ জানান, কৃষকরা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে তারা পরবর্তী মৌসুমে ধান চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। সরকারি ভাবে তাদের যদি উপযুক্ত সহায়তা প্রদান করে উৎসাহ প্রদান করা না হয় পরবর্তীতে খাদ্য উৎপাদনে ঝুঁকিতে পরতে হবে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, আবাহাওয়া ও বিভিন্ন কারণে এবার ধানের চিটার সমস্যা সারা দেশে হয়েছে তবে তুলনামুলক রাঙ্গুনিয়ায় তা কম হয়েছে। গুমাই বিলের ২৮ ও ৬১ জাতের ধানে এর কিছুটা প্রভাব পড়লেও অন্যান্য জাতে এই সমস্যা হয়নি। তবে সর্বোপরী এবার বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ধানে চিটা আসায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি ভাবে সহায়তা প্রদান করা হবে।