মঙ্গলবার ● ১৬ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » মোটর সাইকেল চালক ছাদিকুল এর মুলহত্যাকারিদের আটক করেছে পুলিশ
মোটর সাইকেল চালক ছাদিকুল এর মুলহত্যাকারিদের আটক করেছে পুলিশ
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সকাল ১০.৪১মি.)মহাহলছড়ি থেকে মোটর সাইকেল চালক ছাদিকুলকে ভাড়ায় নিয়ে এসে হত্যা করে রাঙামাটির ঘিলাছড়ি এলাকায় মাটি চাপা দেওয়ার ঘটনার মূলহত্যাকারি চিরঞ্জিত চাকমা ও কৃষ্ণ বিকাশ চাকমাকে আটক করেছে রাঙামাটি কোতয়ালী থানা পুলিশ।
ছাদিকুলকে হত্যার পরপরই পালিয়ে বান্দরবানের জাদি মন্দিরে অবস্থান নিয়ে ভান্তে হিসেবে বসবাস করে অবশেষে এই দুই হত্যাকারি সোমবারই রাঙামাটিতে আসে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
১৫ মে সোমবার রাতে শহরের উপকণ্ঠ সাপছড়ির খামার পাড়া এলাকার পাহাড়ী এলাকা থেকে
এই দুইজনকে আটক করার পাশাপাশি নিহত ছাদিকুলের ছিনতাই হওয়া মোটর সাইকেলটিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান।
তিনি সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়োগকৃত সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সোমবার সাপছড়ির খামার পাড়া এলাকায় সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রশিদ।
এসময় পাহাড়ের উঁচুতে একটি টং ঘরে অবস্থান করা ছাদিকুল হত্যাকারী আসামী চিরঞ্জিত চাকমা ও কৃষ্ণ বিকাশ চাকমাকে আটক করে পুলিশ।
পরে তাদের প্রদত্ত স্বীকারোক্তি অনুসারে শহরের পুরাতান বাস স্টেশন এলাকার জনৈক মামুনের গ্যারেজ থেকে ছাদিকুলের খোয়া যাওয়া মোটর সাইকেলটিও উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
কোতয়ালী থানায় জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এই নির্মম হত্যাকান্ডটি আটককৃতরা ঘটিয়েছে এটা তারা অকপটে স্বীকার করেছে। এই ঘটনায় আরো কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে গ্যারেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে একজন চাকমা যুবক উক্ত গাড়িটি মেরামতের জন্য তাদের কাছে দিয়ে গেছে। মোবাইল নাম্বারের সূত্র ধরে উক্ত চাকমা যুবককেও আটক করার চেষ্ঠা চলছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদ উল্লাহ।
এদিকে থানা হাজতে থাকা ছাদিকুল হত্যার মূল আসামীদ্বয় চিরঞ্জিত চাকমা ও কৃষ্ণ বিকাশ চাকমা উপস্থিত সংবাদকর্মী ও পুলিশের উদ্বর্তন কর্মকর্তাদের কাছে অকপটে জানায়, যে মূলতঃ মাত্র ৬০ টাকার ভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ির এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মোটর সাইকেলে বসা অবস্থায় ছাদিকুলকে লাথি মেড়ে এবং ধাক্কা দিলে সে সিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে রাতে অন্ধকারে ছাদিকুলকে টেনে হিচড়ে লোক চক্ষুর আড়ালের উদ্দেশ্যে পাহাড়ের খাদে মাটি চাপা দিয়ে নিজেরা নিজ এলাকা ছেড়ে বান্দরবানে চলে যায়।
পরে সেখানে জাদি মন্দিরে অবস্থান নিয়ে ভান্তের নিকট দেশনা গ্রহণ করে বলে জানায়। উক্ত মন্দিরের ধর্মীয় গুরুর ছবি দিয়ে ছাপানো দুইটি গেঞ্জি নিজেদের গায়ে পড়া রয়েছে উল্লেখ করে সেগুলো সেখান থেকেই দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় ছাদিকুল হত্যাকারি চিরঞ্জিত চাকমা ও কৃষ্ণ বিকাশ চাকমা। নিহতের পিতা মো. নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন চলতি বছরের ১০ই এপ্রিল সোমবার দুইজন চাকমা যুবক তার সন্তানের মোটর সাইকেলটি তাকেসহ ভাড়ায় নিয়ে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি থেকে রাঙামাটি ঘিলাছড়িতে আসে। এরপর তার সন্তান গাড়ি নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে না যাওয়ায় পরদিন সকাল থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল
পর্যন্ত বিভিন্ন জাগায় খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় মহালছড়ি থানায় একটি জিডি করা হয়, জিডি নাম্বার (৪২৯) তারিখ ১০/০৪/২০১৭ ইংরেজি। পরে ঘটনার খোঁজাখোজির এক পর্যায়ে ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাতে ঘিলাছড়িস্থ রাঙ্গেল পাড়া এলাকার একটি গর্তে ছাদিকুলের গলিত লাশ মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নানিয়ারচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলো নিহতের ভাই হাদিকুল ইসলাম। ১৪ এপ্রিল নানিয়ারচর থানায় দায়েরকৃত মামলার সূত্র ধরেই এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার মূল আসামীদ্বয়কে আটক করার পাশাপাশি নিহতের খোয়া যাওয়া মোটর সাইকেলটিও উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে রাঙামাটি কোতয়ালী থানা পুলিশ।