শুক্রবার ● ১৯ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » নিরক্ষরতার আঁধার থেকে বেরিয়ে আসছে বান্দরবানের মুরুংরা
নিরক্ষরতার আঁধার থেকে বেরিয়ে আসছে বান্দরবানের মুরুংরা
হাসান মাহমুদ, আলীকদম (বান্দবরান) প্রতিনিধি :: (৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৫৭মি.) দেশের একমাত্র মুরুং অধ্যুশিত জেলা পার্বত্য বান্দরবান। যেখানে রয়েছে মুরুং সম্প্রদায়ের বসবাস। এখানে রয়েছে ছোট বড় তেরটি সম্প্রদায়ের সহাবস্থান। এসব জাতিগোষ্ঠীর এই সহাবস্থান যেন বিস্তীর্ণ এই জনপদের জাতিগত বৈচিত্রের আধার। সেই সাথে এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক বৈচিত্রকে অফুরন্ত সম্ভার। আর এই সব কিছু মিলে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। জাতীগত এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্রের এই মিলন দেশের অন্য কোথাও যেন কল্পনারও অতিত। এক সময় এই জনপদের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ছিল মুরুং সম্প্রদায়। শিক্ষার আলো কখনো ছুঁয়ে দেখেনি এই পাহাড়ি জনপদের আনাচে কানাচে বসবাস করা মুরুং জনগোষ্ঠীকে। অথচ আজকের দিনে প্রায় শতভাগ মুরুং শিশু শিক্ষার আলো গায়ে মেখে নিজেদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দ্বারপ্রান্তে। “এমন কোন শিশু নেই, যে স্কুলে যায়না”। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানী এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর আলীকদম প্রতিনিধি হাসান মাহমুদ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বান্দরবান জেলার লামা, আলীকদম ও থানচি উপজেলায় রয়েছে মুরুংদের বসবাস। তার মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার রয়েছে মুরুং (২০১১ সালের পরিসংখ্যান মতে)। যা জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় তেইশ শতাংশ। বর্তমানে তিনটি উপজেলায় মুরুং জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় লাখের উপরে। বিগত শতাব্দীর আশির দশকেও এই সম্প্রদায়ের লোক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। প্রায় শতভাগ পরিবারই ছিল জুম চাষ নির্ভর। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলনা বললেই চলে। এছাড়াও দুর্গম পাহাড়ি এসব অঞ্চলে বিদ্যালয় বলতে তো ছিলইনা। তবে আশির দশক থেকে বান্দরবান জেলার মুুংদের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ‘শোয়ালগ মুরুং আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়’। এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের Integrated Community Development Project (ICDP)’র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে।
এদিকে থানচি উপজেলার আশার আলো নামে একটি আবাসিক হোস্টেল রয়েছে। এটিতে বর্তমানে ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী আবাসিক সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। আশার আলোর মাধ্যমিক স্তরের আরো একটি শাখা রয়েছে বান্দরবান সদরের বালাঘাটা এলাকায়। এখানেও আবাসিক সুবিধা নিচ্ছে মাধ্যমিক স্তরের ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী। এছাড়াও আলীকদম উপজেলায় রয়েছে ‘আলীকদম মুরুং কল্যান ছাত্রাবাস’। এখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ১১০ জন ছাত্র-ছাত্রী আবাসিক সুবিধাসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছে।
এবিষয়ে থানচি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, চলমান দশকে মুরুং ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনায় অনেকটা এগিয়ে আসলেও থানচি উপজেলার বড় মদক, ইয়াংবম, মালূমদিয়া, লিক্রি, পানঝিরি ও তিন্দু ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকার মুরুং ছেলে মেয়েরা যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এখনো পিছিয়ে আছে। এছাড়াও পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রস, চাঁদাবাজদের কারণেও কোন কোন ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের কিছু লোকজন মুরুং ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষিত করার প্রলোভনে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এবিষয়ে তিনি বিশেষ করে ত্রিপুরা ও বম সম্প্রদায়ের লোকজনের কথা উল্যেখ করেন। তিনি আশা করেন এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলে মুরুং ছেলে মেয়েরা অনেক দুর এগিয়ে যেতে পারবে।
এবিষয়ে আলীকদম সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান, পিএসসি সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং প্রধানমন্ত্রীর গণতান্ত্রীক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য শিক্ষার অগ্রগতি ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। এই প্রেক্ষিতে পিছিয়ে পড়া মুরুং জনগোষ্ঠীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মুরুংদের পাশে দাড়িয়ে তাদেরকে শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বচেষ্ঠ।