বৃহস্পতিবার ● ২৫ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » শিরোনাম » ভেজাল খাদ্যে সয়লাভ বাজার তদারকির নেই
ভেজাল খাদ্যে সয়লাভ বাজার তদারকির নেই
হাফিজুল ইসলাম লস্কর,সিলেট প্রতিনিধি :: (১১ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.০৫মি.) ভেজাল খাদ্যে সয়লাভ বাজার, নেই বাজার তদারকির ব্যাবস্থা। আগে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও বর্তমানে মাছ, সবজি ও ফল বাজারে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সে কার্যক্রম।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, পণ্য ভেজাল মুক্ত না যুক্ত তা জানেনা বিক্রেতা বা ক্রেতারা। তাই ফরমালিন নিয়ে ক্রেতারা রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।
দোকান ছাড়াও শহরের অলিগলি, ফুটপাত, সর্বত্র বিক্রি হচ্ছে মৌসুমি ফল। ক্রেতারাও দল বেঁধে কিনছেন। কিন্তু এসব ফল কতটা খাদ্য উপযোগী সেটা জানেন না ক্রেতা বিক্রেতা কেউই।
মাছ-সবজি বাজারের চিত্রও একই রকম।
ভেজারমুক্ত করন ও বাজার তদারকি করতে যেখানে এক বছর আগেও শহরের প্রতিটি বাজারে মোবাইল কোর্ট নিয়মিত ফরমালিন পরীক্ষা চালাতো। অভিযানে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায়ই ধরা পড়তো কেমিক্যালের উপস্থিতি। সাজা হতো, ভয়ে মান সম্পন্ন পণ্য বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে শহরের কোথাও মাছ, সবজি কিংবা ফল বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। এতে উদ্বিগ্ন ক্রেতারা।
নগরীর বন্দরবাজারের ফল ব্যবসায়ী নূর হোসেন জানান, কেমিক্যাল আছে কি না জিজ্ঞাস করে কিনে আনি। বাকিটা তারাই জানে। আগে তো প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জানতে পারতাম কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ। এখন ভ্রাম্যমাণ আদালত হচ্ছে না, আমরাও জানি না কী বিক্রি করছি।
সিলেট নগরীর বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, ২০১২ সালে নগরীর লালবাজার, সোবাহানীঘাটসহ বেশকিছু কাঁচাবাজারকে ফরমালিনমুক্ত ঘোষণা করা হলেও বর্তমানে এসব বাজারে খাদ্যে ফরমালিন ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল শনাক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। নজরদারি কমে যাওয়ায় ফরমালিন পরীক্ষার মেশিনগুলোর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ প্রায় প্রতিটি মার্কেটে ফরমালিন পরীক্ষার মেশিন সরবরাহ করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে নগরীর লালবাজার মস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলজার আহমদ সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ফরমালিন পরীক্ষার মেশিনগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিকল অবস্থায় রয়েছে। মেশিনগুলো দ্রুত মেরামত করে আবারও সচল করে তোলা হবে বলে তিনি দাবি করেন।
নগরীর উপশহর এলাকায় ভ্যানগাড়ি থেকে সবজি কিনছিলেন আরাফাত হোসেন। তাহার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, কী খাচ্ছি, আল্লাহ ভালো জানেন। খাদ্যে ফরমালিন ঠেকাতে প্রশাসনেরও কোনো উদ্যোগ নেই। আগে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট এসে পরীক্ষা করত, তখন নির্ভয়ে বাজার করতাম। এখন খুব ভয় হয়, কখন যে কী হয়।
বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বছরখানেক আগেও নগরীর প্রতিটি বাজারে মোবাইল কোর্ট নিয়মিত ফরমালিন পরীক্ষা চালাত। পরীক্ষায় প্রায়ই ধরা পড়ত কেমিক্যালের উপস্থিতি। ফলে সাজাও হতো। ওই সময় ভয়ে মানসম্পন্ন পণ্য বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নগরীর কোথাও মাছ, সবজি কিংবা ফল বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে দেখা যায়নি।
এতে উদ্বিগ্ন ক্রেতারা। তারা বলছেন, দায়িত্বে অবহেলা করে সরকারি কর্মকর্তারা যেমন সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন, তেমনি জনগণ থেকেও সরকারকে বিচ্ছিন্ন করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, সামনে রোজার মাস আসছে। এখন যদি প্রশাসন ঠিকমতো সবজি, মাছ ও ফলের বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা না করে আর ভেজাল খেয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়; তবে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
সিলেট ক্যাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য কাউসার চৌধুরী সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, অতি লোভের কারণে যারা ভোক্তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমরা জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করব মোবাইল কোর্টটা যেন কঠোরভাবে এবং নিয়মিত করা হয়।
এদিকে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার দাবি করেছেন, ভেজাল রোধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে এবং তাদের কর্মকর্তারা এটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন।