রবিবার ● ২৮ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » গারো পাহাড়ের পাদদেশে সৌদি খেজুর ও এলাচি চাষ করে তাক লাগানো চাষি মাজহারুলের গল্প
গারো পাহাড়ের পাদদেশে সৌদি খেজুর ও এলাচি চাষ করে তাক লাগানো চাষি মাজহারুলের গল্প
ময়মনসিংহ অফিস :: (১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.২০মি.) ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হালুয়াঘাট উপজেলায় সৌদি খেজুর ও এলাচি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সফল চাষি মাজহারুল ইসলাম।
হালুয়াঘাট উপজেলায় রয়েছে লাল ক্ষারীয় মাটির গারো পাহাড়। যেখানে কোন ফসল বা ফলজ বৃক্ষ উৎপাদনের কথা চিন্তাই করা যায়না,সেই পাহাড়ের ক্ষারীয় লাল মাটিতে সফল কৃষক মাজহারুল ইসলাম চাষ করেছেন সৌদিয়ান এলাচি। গারো পাহাড়ের ভেতর সৌদি খেজুর ও এলাচি চাষ করে সকলের নজর কেড়েছেন এ সফল চাষি।
মাজহারুল ইসলামের বাড়ি উপজেলার কড়ইতলি গ্রামের কোচপাড়ায়।তিনি শুধু সৌদি খেজুর আর এলাচি নয়, কমলা ও মাল্টার পাশাপাশি মোট আড়াই একর জমির উপর নিজ উদ্যোগে চাষ করেছেন ড্রাগন,সফেদা,বিভিন্ন প্রজাতির আম, তেতুঁল, আপেল, আঙ্গুর, আমলকি ও পেয়ারা।
২০১২ সালে এই চাষি প্রথম উদ্যোগ নেন ব্যতিক্রমধর্মী এ খামার তৈরীর। আর হাঁটি হাঁটি পা পা করে তিনি আজ এগিয়ে চলছেন। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তার পদচারণা ঘটেছে এই ব্যাতিক্রমধর্মী খামারীর বাগানে। গত ১৪ ডিসেম্বর এ খামারির বাগান পরিদর্শন করেছেন কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ দাসসহ হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ।
সফল কৃষক মাজহারুল ইসলামের ব্যাতিক্রমধর্মী এ উদ্যোগের সফলতায় এলাকায় পড়ে যায় ব্যাপক সাড়া।শুরুতে মোট ২ একর ৫০ শতাংশ জমির উপর ঝুঁকি নিয়ে সাহসের সাথে এগোতে থাকেন স্বপ্নবোনা এই কৃষক মাজহারুল ইসলাম। তিনি সংবাদমাধ্যমকে অকপটে জানিয়েছেন সম্পূর্র্ণ ব্যাতিক্রমধর্মী এ উদ্যোগের কিছু কথামালা।
একদিকে দুর্লভ সৌদি জাতের খেজুরের চাষ অন্যদিকে একই গাছে হিমসাগর, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, লকনাসহ মোট ৬ জাতের আম উৎপাদন, লিচু গাছে বিভিন্ন জাতের মাল্টা, দেশি মাল্টা গাছে ১৬ জাতের কমলা এবং উন্নত জাতের মাল্টা উৎপাদন, দেশি জাম্বুরা গাছে বিভিন্ন জাতের উন্নত জাম্বুরার জাত, একই গাছে কয়েক প্রজাতির কূল উৎপাদন এখন আর মাজহারুলের স্বপ্নের ভাবনা নয়,তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এখন শুধু তিনি সুফল পাওয়ার প্রতীক্ষায়।
কৃষক মাজহারুলের কাছে সৌদি খেজুর চাষের সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার সাবেক বাড়ি ফরিদপুর জেলায় বসবাসের সময় ইতোপূর্বে তিনি এই ব্যতিক্রমধর্মী সৌদি জাতের খেজুরের চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু নিম্নাঞ্চল বিধায় সেখানে সফল হতে পারেননি। পরবর্তীতে ২০১২ সালে পুনরায় বেছে নেন হালুয়াঘাটের গারো পাহাড়ের এই উঁচু মাটি। যেখানে সফলতার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছেন বলে জানান এই সফল চাষি।
তিনি খেজুরের বীজ সৌদি আরব, দুবাই, কাতার থেকে নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। তারপর সেই বীজ থেকে তার নিজস্ব দক্ষতায় চারা উৎপাদন করেন। এখন তার শতাধিক গাছ সহনশীল অবস্থায় এসেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি গাছে খেজুর ধরতেও শুরু করেছে। খেজুরের গুণগতমান নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই গাছ থেকে উৎপাদিত খেজুর সৌদি আরবের খেজুরের মতোই সুস্বাদু। আর এলাচি সম্পর্কে বলেন, এখানকার মাটি এলাচি চাষের জন্য উপযোগী, এখানেও এলাচি চাষে সফল হবার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, স্থানীয় কৃষি বিভাগও একই মতামত ব্যক্ত করেছেন।
শুধু খেজুর ও এলাচি নয়, মাল্টা ও কমলা চাষেও সফল হবেন বলে তিনি আশাবাদী । জাম্বুরা গাছের উপর কমলার কলম করে উন্নত জাতের কমলার উৎপাদন তার আরেক কৌশল। তিনি জানান, ইতোমধ্যে কয়েকশ’ জাম্বুরার চারা পাহাড়ের উপরে রোপণ করেছেন। পরে সেই গাছের উপর কমলা ও মাল্টার কলম উৎপাদন করবেন। এর কারণ হিসেবে চাষী মাজহারুল জানান, জাম্বুরা গাছ সহজেই ঐ এলাকার মাটির গুণাবলীর সঙ্গে সহনশীল অবস্থায় রয়েছে । সেই কারণে তিনি এই পন্থা অবলম্বন করেছেন। কিভাবে এই উদ্যোগ নিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ছোটকাল থেকেই গাছের প্রতি তার আলাদা নেশা ছিল। এছাড়া সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশেও তিনি গিয়েছেন। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছেন। তার বিশ্বাস তিনি সফল হবেন। গাছের বিষয়ে একাডেমিক কোনো দক্ষতা অর্জন করেননি তিনি। সম্পূর্ণ নিজের মেধাতেই খামার গড়ে তুলেছেন এই চাষী।
তার খামারের বিষয়ে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজল সরকার জানান, চাষী মাজহারুল একজন বৃক্ষপ্রেমিক মানুষ। তিনি তার নিজস্ব উদ্যোগেই খেজুর চাষের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। তবে মাল্টা ও কমলার চারা তারা সরকারিভাবে সরবরাহ করেছেন। চাষী নিজেও সংগ্রহ করেছেন বলে জানান।
হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে চাষী মাজহারুলের খামার পরিদর্শন করেছি এবং তাকে সহযোগিতা করে চলছি। খেজুর চাষের সফলতা আসবে কিনা এমন প্রশ্নে ভালুকা উপজেলার চাষী মোতালেবের উদ্ধৃতি দিয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এখানেও খেজুর ও এলাচি চাষে সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার মাটিও উপযোগী। তিনি আরো বলেন, আমরা মাল্টা ও কমলার চারা দিয়েছি আর অন্যান্য বাকি জাতগুলো চাষী তার নিজস্ব উদ্যোগেই গ্রহন করেছেন। এছাড়াও এ কৃষকের খামারকে আরো এগিয়ে নিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা ব্যক্ত করেন তিনি।