বুধবার ● ৩১ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » সংখালঘু যুবককে পিটিয়ে পানির পরিবর্তে খেতে দেওয়া হয় মদ
সংখালঘু যুবককে পিটিয়ে পানির পরিবর্তে খেতে দেওয়া হয় মদ
হাসান আলী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: (১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.২৩মি) তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে টানা তিন দিন কয়েক দফা হামলা চালিয়ে কয়েকটি হিন্দু পরিবারের বেশ কয়েক জনকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে গুরুতর একজনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া অপর একজনকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের মধ্যসেহাকাঠি গ্রামে প্রভাববিস্তার করে নৈরাজ্য চালাচ্ছে আজমীর হিরা বাবু নামের এক প্রভাবশালী।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে জেলা আওয়ামীলীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতার মোবাইল ফোনে সংখ্যালঘু পরিবারের পক্ষে মামলা নিয়েছে পুলিশ। হামলার শিকার পরিবারগুলো জানান, ২৭ মে দুপুরে ভ্যান যোগে একটি কাঠের তৈরী নতুন খাট সেহাকাঠি বাজারে হয়ে মধ্যসেহাকাঠি শ্যামল মন্ডলের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই সময় সেহাকাঠি স্কুলের শিক্ষিকা স্বর্ণা আক্তার রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে গেলে ওই খাটের একটি অংশ তার শরীরে লাগে। এ ঘটনায় ভ্যান চালক তাৎক্ষনিক স্কুল শিক্ষিকার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও তিনি উত্তেজিত হয়ে তার স্বামী হিরা বাবুকে খবর দেন।
বাবু ঘটনাস্থলে এসে কাঠ মিস্ত্রী রিপন ও ভ্যান চালক পলাশকে ব্যাপক মারধর করেন। মারধর থেকে রেহাই পেতে তখন শংকর নামে অপর একজন পালিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালান। হিরা বাবুর এলোপাথারী হামলায় পলাশ আহত হলে স্থানীয়রা পটুয়াখালী হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পলাশের অবস্থা আশংকা জনক দেখলে তাকে বরিশাল স্থানান্তর করেন। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে হিরা বাবু ওইদিন বিকালে তার ৭/৮ জন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে শংকরের শ্বশুর বাড়ি গিয়ে শংকরকে খুঁজতে থাকেন। শংকরকে না পেয়ে শংকরের ছয় বছরের শিশুকন্যা সঙ্গীতাকে জোর পূর্বক নিয়ে আসতে চান বাবু।
এসময় শংকরের শ্বাশুড়ী বাবুর হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করে তার নাতিনকে ছাড়িয়ে রাখেন। কিন্তু বাবু প্রতিবেশি তপন, শ্যালক পলাশ ও সমোরকে ধরে নিয়ে যান। ওইদিন রাত ১০টায় সেহাকাঠি বাজারে বাবুর অফিস রুমে শংকরকে নিয়ে আসতে বলে এবং তা হলে ওই তিন জনকে ছেরে দেয়া হবে বলে বাবু মোবাইল করে শংকরের পরিবারের কাছে জানায় বলে অভিযোগে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। শংকরকে হাঝির করা হলে তপন, পলাশ ও সমোরকে ছিড়ে দিয়ে, বাবু তার অফিসের দরজা জানালা বন্ধ করে ব্যাপক মারধোর করে শংকরকে। একপর্যায়ে শংকর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবুর কাছে পানি পান করতে চাইলে বাবু তাকে পানির পরির্বতে মদ পান করিয়ে আবার মারধর করে।
শংকর পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ওই সময় শংকরের চিৎকারে গ্রামের লোকজন বাবুর অফিসের দরজা ভেঙে শংকরকে উদ্ধার করে এবং তাৎক্ষনিক ভাবে পটুয়াখালী সদর হাপাতালে তাকে নিয়ে যায়। দরজা ভেঙে শংকরকে উদ্ধারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় বাবু। সে তার বাহিনী নিয়ে স্থানীয় হিন্দু পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। ফলে মধ্য সেহাকাঠি গ্রামেরর অন্তত ৪০ হিন্দু পরিবারে মধ্য দেখা দিয়েছে হতাশা আর আতংক।
এদিকে ২৮ মে সদর থানা পুলিশকে অবহিত করলে ২৯ মে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এর পরে পুলিশে কেন খবর দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগে এনে শংকরের মালিক (সেহাকাঠি বাজারের ব্যবসায়ী) আব্দুস সাত্তার শরীফের স্ত্রী মোসা. হোসনেয়ারা বেগম ও তার দুই সন্তান মাহাবুব ও মামুনকে মারধর করে গ্রাম ছেড়ে চলে যাবার হুমকী দেয়া হয়। সোমবার রাতে ওই ঘটনায় একটি মামলা রজু হলেও আসামীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় বাদি ও স্বাক্ষীসহ স্থানীয়দের নানাভাবে ভয় ভীতি দেখাচ্ছে। গোটা এলাকার অন্তত ৪০টি হিন্দু পরিবারের মধ্য বিরাজ করছে আতংক। ২৯ মে রাত ১১ টার দিকে জ্যেষ্ঠ এক আওয়ামীলীগ নেতার ফোনের অনুরোধে এবং তার সহযোগীতায় শংকরের শ্বশুর পটুয়াখালী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করার সুযোগ পায়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হিরা বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ‘মামলা হয়েছে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।’