বুধবার ● ৫ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » সরকারী টাকায় রাঙামাটি জেলার লংগদুতে নিন্মমানের সোলার : জনপ্রতিনিধিদের ক্ষোভ
সরকারী টাকায় রাঙামাটি জেলার লংগদুতে নিন্মমানের সোলার : জনপ্রতিনিধিদের ক্ষোভ
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (২১ আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৪১মি.) রাঙামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলায় সরকারী টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের সোলার প্যানেল বিতরণে অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে। নিন্মমানের সোলার প্যানেল অধিকমূল্য ধার্য্য করা হয়েছে বলে সিএইচটি মিডিয়াকে জানিয়েছেন লংগদু উপজেলার ৪নং বগাচতর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ।
লংগদু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৈয়ব স্বাক্ষরিত টিআর ও কাবিটা প্রকল্প বিভাজনী সংশোধনী দাপ্তরিক চিঠিতে জানা যায়, ৪ নং বগাচতর ইউনিয়ন পরিষদ অনুকুলে কাবিটা ৪ লক্ষ টাকা এবং টিআর ৩ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। মোট বরাদ্ধের ৫০ ভাগ টাকা সোলার প্যানেল/বায়োগ্যাস প্রকল্পে ব্যয় করতে হবে মর্মে সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী শর্ত দেওয়া হয়।
সরকারী শর্ত অনুযায়ী কাবিটা প্রকল্পের ২ লক্ষ টাকা এবং টিআর প্রকল্পের ১ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকার সোলার প্যানেলে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত ৪ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে সোলার হোম সিষ্টেমের পূন নির্ধারিত মূল্য তালিকায় দেখা যায় ২০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার প্যানেলের মূল্য ১১০৬০ টাকা, ৩০ ওয়াট সোলার প্যানেলের মূল্য ১২ হাজার ৮শত ৮০ টাকা, ৪০ ওয়াটের ১৭ হাজার ৫শত টাকা, ৫০ ওয়াটের ২০ হাজার ৯০ টাকা এবং ৬০ ওয়াট সোলার প্যানেলের মূল্য ২৩ হাজার ৬শত ৬০ টাকা ইত্যাদি।
বর্তমান বাজারে প্রচলিত এবং গ্রামীন জনপদে ব্যবহৃত সোলার প্যানেল এর তুলনায় প্রকল্পের অনুমোদিত সংস্থায় বিতরণকৃত সোলার প্যানেল অত্যন্ত নিন্মমানের কিন্তু দ্বিগুন মূল্য ধার্য্য করা হয়েছে।
দেখা গেছে ২০ ওয়াট এর একটা সোলার প্যানেলের মূল্য মাত্র ৩-৪ হাজার ৫শত টাকা, ৩০ ওয়াটের ৫-সাড়ে ৫ হাজার টাকা, এমনকি আরো কমদামেও পাওয়া যায় এবং কোম্পানি ভেদে গ্যারান্টি ওয়ারেন্টির ব্যবস্থাও রয়েছে। অথচ সরকারী বরাদ্ধের টাকায় ক্রয় করা প্রকল্পের এসব সোলার অধিক দাম নিয়ে নিন্মমানের সোলার দিয়ে গ্রামীন জনপদ আলোকিত করার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান। ক্ষেতে খাওয়া জনসাধারনের এই সরকারী বরাদ্ধে নিন্মমানের সোলার পাওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এমনকি ঐ এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বলছেন সোলার প্যানেল প্রকল্পের বরাদ্ধের টাকা দিয়ে ঐ এলাকায় আরো উন্নয়নমূলক কাজ করা যেত, গ্রামীন জনপদের সাধারন মানুষদের কথা বলে প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান।
এন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা লংগদুতে এ সোলার প্যানেল বিতরণের কাজ বাস্তবায়ন করছে।
লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নে অধিক মূল্যে নিন্মমানের সোলার বিতরণের বিষয়টি নিয়ে লংগদু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ তৈয়ব সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, সোলারের দাম, মান ও এম্পিয়ার মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা আছে, এখান থেকে অন্যকিছু করার কোন সুযোগ তেমন নেই।
বিষয়টি নিয়ে ৪নং বগাচতর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, জুন মাসের ৮ -১৭ তারিখে ৪ নং বগাচতর ইউনিয়নে ৩৮টি ৩০ ওয়াটের সোলার দেওয়া হয়েছে। ৩০ ওয়াটের সোলার রাঙামাটির বাজারে বর্তমানে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে অথচ প্রকল্পের সোলার প্যানেল এর দাম নির্ধারন করা হয়েছে ১২,৮৮০টাকা অর্থাৎ একই মানের সোলার বাজারমূল্যের দ্বিগুন। ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায় এই লংগদুতে বসে ৩০ ওয়াটের বাজারের উৎকৃষ্ট সোলার পাওয়া যেত। তিনি আরো বলেন, বগাচতর ইউনিয়ন বন্যহাতি প্রবন এবং জনসংখ্যাও অন্য ইউনিনের তুলনায় বেশী, এই এলাকায় বন্যহাতির তান্ডব প্রায়ই ঘটে, আলোকিত থাকলে বণ্যহাতিরা এলাকায় ঢুকে তান্ডব চালাতে পারেনা তাই বগাচতর এলাকায় সোলারের প্রয়োজন বেশী। তাদের দেওয়া দেওয়া সোলার প্যানেলে ২টি ভাল্ব জ্বলে, বৃষ্টির কারণে ভাল্ব জলছে একটি তাও অর্ধেকরাত পর্যন্ত, বেশী ওয়াটের সোলার হলে এলাকা বেশী আলোকিত থাকতো এবং বণ্যহাতির তান্ডব থেকে এলাকাবাসী রক্ষা পেত। বগাচতর ইউনিয়নে গত ত্রিশ বছরে কোন উন্নয়ন হয় নাই বলেও দাবি করেন লংগদু উপজেলার ৪নং বগাচতর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ।
লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নে অধিক মূল্যে নিন্মমানের সোলার বিতরণের বিষয়টি নিয়ে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান এন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন মাইনী মূখ শাখার এরিয়া ম্যানেজার ললিত চাকমা বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের সাথে খোলা বাজারের দাম মিল থাকবেনা। তিনি আরো বলেন, মূল বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাক্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট থেকে যে পণ্য দিয়েছে সে পণ্য আমরা বিতরণ করছি। লংগদুতে প্রথম কিস্তিতে ৩২৯ টা তন্মধ্যে উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নে ৫৮টি সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্যারান্টি ও ওয়ারেন্টিসহ দাম বেশী ধার্য্য করা হলেও ভাল মানের সোলার দেওয়া হচ্ছে।
গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য নেওয়া কাবিটা ও টিআর প্রকল্পের টাকায় সোলার প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল ত্রান ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। এ সিদ্ধান্তে অনেকে সাধুবাদ জানিয়ে আশ্বস্থ হয়েছিলেন যে, টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের অনিয়ম ও লুটপাট বন্ধ হয়ে যাবে। আশা করা হয়েছিল গ্রামীণ জনপদের জন্য নেওয়া প্রকল্প সরকার গ্রামীন ক্ষেতে খাওয়া মানুষের ঘর আলোকিত করার জন্য সরাসরী প্রয়োগ করবে।
উল্লেখ্য টিআর (টেষ্ট রিলিফ) ও কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ঠেকানো ও পিডিবি’র বিদ্যুতের উপর চাপ কমাতে সরকার এ খাতে ৫০ ভাগ অর্থ সোলার প্যানেলে ব্যয় বাধ্যতামূলক করে। চলতি অর্থবছরে সারাদেশে এ খাতে বরাদ্ধ প্রায় দুই হাজার ৬শত কোটি টাকা।
এ প্রকল্পের টাকা এমপি, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌরসভা মেয়রের অনুকুলে বরাদ্ধ দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে এ কাজ বাস্তবায়ন করছে ইনফ্রাক্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট নামে একটি কোম্পানী।