শুক্রবার ● ২১ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ড. ফৌজিয়া’র পোল্ট্রি খাদ্যে আলু ব্যবহারে সফলতা
ড. ফৌজিয়া’র পোল্ট্রি খাদ্যে আলু ব্যবহারে সফলতা
ময়মনসিংহ অফিস :: (৬ শ্রাবণ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৩৫মি.) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক প্রফেসর ড. ফৌজিয়া সুলতানা ৩ বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণা করার পর পোল্ট্রি খাদ্যে আলু ব্যবহারে সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন । তিনি দাবি করেন, দেশে আলুর অপচয় রোধ করার পাশাপাশি খাদ্যে আলু ব্যবহারের ফলে পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ কমে আসবে সেইসাথে পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরাও লাভবান হবেন।
ড. ফৌজিয়া সুলতানা ২০১৩ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পোল্ট্রি খাদ্যে আলু ব্যবহার এ প্রকল্প নিয়ে গবেষণা শুরু করেন । একই বিভাগের দুইজন নবীন বিজ্ঞানী প্রফেসর হাফিজা খাতুন ও সুমাইয়া আফরিনকে তাঁর সহকারী হিসেবে নিয়ে তিনি এ কাজে হাত দেন। তিনি ২০১৬ সালে আলুর ওপর গবেষণা শেষ করে গবেষণার রিপোর্ট আমেরিকার কেমিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল টেকনোলজি ইন এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টে পাঠান। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে আমেরিকার স্প্রিঞ্জার পাবলিশার জার্নালে পোল্টি শিল্পের খাদ্যে আলু ব্যবহার বিষয়ে ড. ফৌজিয়ার গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে গবেষণার ফলাফল নিয়ে দু’বার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার করা হয়।
প্রফেসর ড. ফৌজিয়া সুলতানা জানান, আলু ব্যবহারে তৈরিকৃত খাদ্য ও বাজারে প্রচলিত পোল্ট্রি খাদ্য নিয়ে আলাদাভাবে খামারের মাংসের জন্য বয়লার ও সোনালী মুরগি এবং ডিমের জন্য লেয়ার ফিমেল মুরগির ওপর গবেষণা করা হয়। পোল্ট্রি খাদ্যে শতকরা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শুকনো আলুর সঙ্গে পরিমাণ মতো সয়াবিন মিল, সয়াবিন অয়েল, ক্যালসিয়াম ফসফেট, মিনারেল প্রিমিক্স, খাদ্য লবণসহ অন্যান্য উপাদন দিয়ে ব্যালেন্স ডাইট তৈরি করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, আলুতে কার্বহাইড্রেড উপাদান বেশি থাকায় ভুট্টা সহযোগে তৈরি খাদ্যের তুলনায়, আলু ব্যবহারে তৈরি খাদ্য একই সময়ে শতকরা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মুরগির গ্রোথ বেশি হয়।
ড. ফৌজিয়া আরও বলেন, ‘সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ভরা মৌসুমে উত্তরবঙ্গসহ সারাদেশে ব্যাপক আলুর অপচয় হয়। কৃষকরাও তাদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন। মৌসুমে কম দামে আলু কিনে পোল্ট্রি শিল্প মালিকরা পোল্ট্রি খাদ্যে আলু ব্যবহার করতে পারেন। সময় মতো ভ্যাক্সিন ব্যবহার করা গেলে এবং প্রয়োজন মতো খাদ্য প্রয়োগে মুরগির রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনা তেমন একটা নেই।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোসাব্বির আহমেদ জানান, ‘আমাদের দেশে পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদনে ভুট্টার উপর নির্ভর করতে হয়। ভুট্টার দাম বেশি হওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে খরচ বেড়ে যায়। ড. ফৌজিয়া সুলতানার আলু ব্যবহারে গবেষণার ফলাফল সরকারিভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া গেলে পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদন খরচ অনেকটাই কমে আসবে।’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের রেম পোল্ট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী মোঃ মোশাররফ হোসেন জানান, ‘খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদন খরচ দিন দিন বাড়ছে। ফলে সীমিত লাভ নিয়ে ব্যবসা চালাতে হয়। তবে আলু ব্যবহারে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম কমে আসলে শিল্প মালিকরা লাভবান হবেন এবং আরও অনেকে পোল্ট্রি ব্যবসায় এগিয়ে আসবেন।