মঙ্গলবার ● ২৫ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » জনদুর্ভোগ » বিশ্বনাথে একটি সেতুর অভাবে ২০ গ্রামবাসী দুর্ভোগে
বিশ্বনাথে একটি সেতুর অভাবে ২০ গ্রামবাসী দুর্ভোগে
মো. আবুল কাশেম,বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (১০ শ্রাবণ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় দুপুর ১.৪৬মি.) সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অন্যতম একটি প্রধান নদী হলো খাজাঞ্চী নদী। এককালে নদীটি ছিল তীব্র খড়স্রোতা। এখন এটি প্রায় বিলীন হতে চলছে। নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের উত্তর বিশ্বনাথবাসীর। দিনের পর দিন ফেরিয়ে গেলেও নদীতে সেতু নির্মাণ হচ্ছেনা। উপজেলার রামপাশা ও খাজাঞ্চী ইউনিয়নের সংযোগস্থল আশুগঞ্জ বাজার এলাকায় প্রায় ১৫০ ফুট প্রস্থের নদীর ওপর একটি সেতু নির্মানের দাবি এলাকাবাসী।
সেতু নির্মান না হওয়ার ফলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকার ২০টি গ্রামের প্রায় ছয় হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত নিজেদের প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েই পারাপার করতে হয়। এতে প্রতিনিয়তই ঘটে অনেক দুর্ঘটনা। ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। আর সব চেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরাই।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুই ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনকারী সাঁকোর স্থলে একটি সেতু নির্মিত হলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি বাড়ত শিক্ষিতের হার। কিন্তু সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ ও এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এব্যাপারে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করছেন না। রোগীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসিকে। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পারাপারের ক্ষেত্রে অনেক সময় অনেক শিক্ষার্থীর হাত থেকে বই-খাতা নদীর পানিতে ছিটকে পড়ে হচ্ছে নষ্ঠ।
এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, প্রতি বছর সাঁকোটি নির্মান করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর তা এলাকাবাসি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রদান করা চাঁদা থেকে নির্মান করা হয়। সরকারি কোনো সহযোগীতা না থাকায় এলাকার গরীব জনসাধারণের জন্য তা কষ্ঠকর বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর্থিক সংকটের কারণে তাই সাঁকো নির্মান করা হয় শুধু মাত্র সরু বাঁশ দিয়ে। তাতে বাঁশের ছাটাই দেয়া সম্ভব হয় না। ছাটাই না থাকলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম বিলপার, পূর্ব বিলপার, দরপার, কান্দিগ্রাম, বাবুনগর, মাওনপুর, নোয়াপাড়া, ভাটপাড়া, ভোলাগঞ্জ, খাজাঞ্চীগাঁও, কাবিলপুর, দোহাল, রামচন্দ্রপুর, পালেরচক, পাঁচঘরি, পাঠাকইন, শ্রীপুর, মনোহরপুর, আশুগঞ্জ বাজার, রাজাগঞ্জ বাজারসহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের চলাচল করেন খাজাঞ্চী নদীর বাঁশের সাঁকো দিয়ে। সেতু নির্মাণ না হওয়ায় এসব গ্রামের মানুষজনকে পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। এছাড়া প্রতি শনি ও মঙ্গলবার আশুগঞ্জ বাজারে হাট থাকে। তখন একদিনে প্রায় দুই হাজার মানুষকে সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হয়। এছাড়া ওই এলাকার প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে সাঁকো ব্যবহার করে আসতে হয় ‘আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, দোহাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হলিচাইল্ড কিন্টার গার্ডেনে’ শিক্ষা অর্জন করতে।
এলাকার রংমালা বিবি বলেন, নাতী-নাতনিরা একা একা সাঁকো পারাপারে ভয় পায় বলেই প্রতিদিন তাঁদের সঙ্গে পরিবারের বড় কাউকে আসতে হয়। আবার স্কুল ছুটির পর আবারও কাউকে এসে নিতে হয়। তা না হলে ওরা স্কুলেই যায় না।
দোহাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাবিয়া বেগম, ছালমা বেগম, রুবেল মিয়া সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, প্রতিদিন আমাদেরকে অন্যের সাহায্য নিয়ে সাঁকো পারাপারের হতে হয়। অনেক সময় আবার একা একাই। এক্ষেত্রে অনেকের (সহপাঠী) হাত থেকে বই-খাতা ছিটকে পানিতে পড়ে নষ্ঠ হয়ে যায়। অনেকে (শিক্ষার্থী) আবার সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকারও হয়।
আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিপন আহমদ, রুহুল আমীন, শামিমা বেগম ও হলিচাইল্ড কিন্টার গার্ডেনের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া, ইয়াসমিন বেগম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, আমাদের কথা (শিক্ষার্থী) চিন্তা করে হলেও এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরী। সেতু নির্মান করা হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আরোও বৃদ্ধি পাবে। এলাকাবাসীর দুর্ভোগও কমে যাবে।
সবজি ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, বিলপারসহ ওই গ্রামগুলো ব্যাপক পরিমাণ সবজি উৎপাদন করা হয়। তা বিক্রি করতে হলে তাই ঝুঁকি নিয়ে ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ের পার করতে হয়। এতে আমাদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এখানে সেতু হলে আমাদের কষ্ঠও কমে যাবে।
কৃষক তজম্মুল আলী সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, গবাদি পশুরা অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসা করাতে আমাদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। চাষাবাদের সময় বীজ-সার ও হালি (ধানের চারা) বহনের ক্ষেত্রেও আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আতিকুর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, আশা করি কিছু দিনের মধ্যে আমাদের বিদ্যালয়টি কলেজে উন্নিত হবে। এতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। ফলে সাঁকো দিয়ে মানুষের চলাচলও বৃদ্ধি পাবে। তাই জনগুরুত্বে দিক বিবেচনা করে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা জরুরী।
পল্লী চিকিৎসক সারোয়ার হোসাইন বলেন, একটি সেতুর অভাবে আমাদের এলাকার ওই গ্রামগুলোর মানুষদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়।
খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে বাধ্যতামূলক ভাবে ওই গ্রামগুলোর বাসিন্দাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হতে হয়। শিক্ষার্থী ও রোগী পারাপারের ক্ষেত্রেও এলাকাবাসীকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। এখানে একটি সেতু নির্মান অত্যন্ত জরুরী। আর তা যত দ্রুত সম্ভব হবে ততই লাভবান হবেন এলাকাবাসী।
উপজেলা স্থানীয় প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম শওকত সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, সেতু নির্মাণের প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় থেকে পাশ হলে আমাদেরকে জানানো হবে। এরপর সেতু নির্মাণের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে শুরু হবে।
স্থানীয় সাংসদ ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া বলেন, পর্যায়ক্রমের উপজেলার উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হবে। এর জন্য প্রয়োজন সর্বমহলের সহযোগীতা।