রবিবার ● ২৭ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » নবীগঞ্জে প্রতি ঈদে ৫০লক্ষ টাকা রাজস্ব যাচ্ছে কোথায়
নবীগঞ্জে প্রতি ঈদে ৫০লক্ষ টাকা রাজস্ব যাচ্ছে কোথায়
ছনি চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: (১২ ভাদ্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় দুপুর ২.০৬মি.) ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে উপজেলার সর্ববৃহত্তম পশুর হাট দিনারপুর জনতার বাজার পুরো ধমে জমে উঠেছে। প্রতি বছর ওই পশুর হাট থেকে কোটি কোটি টাকার গরু-ছাগল বিক্রি হয়। বিশেষ করে ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রতি বছর ওই বাজারে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার গরু-ছাগল নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। প্রতি সপ্তাহে তিন দিন (শনিবার, সোমবার ও বৃহস্পতিবার) পশুর হাট বসে। গতকাল শনিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কের উভয় পাশে মাঠ দখল করে জনতার বাজারে পশুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতার ভীড় ছিল লক্ষনীয়। এসময় মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘœ ঘঠে। একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, প্রতি বছর ওই বাজার থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও রহস্যজনক ইজারা দেওয়া হয়না। আদায়কৃত রাজস্বের টাকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল। গতকাল জনতার বাজারে কয়েক হাজার গরু ও ছাগল বেচা কেনা হয়। এসময় রাজস্ব আদায়কারী ইউএনও অফিসের সহকারী সুব্রত চক্রবর্ত্তী জানান, ‘প্রতি হাজারে চল্লিশ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের নীতি মোতাবেক অনেকেই রাজস্ব দেয়না তাই আমরা চুক্তি মোতাবেক রাজস্ব আদায় করি।’
জনতার বাজারের প্রতিষ্ঠাতা ও বাজার ব্যবস্থপনা কমিটির সাধারন সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমেদ জানান, ‘প্রতি ঈদের বাজারে কম পক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। প্রতি বছর আদায়কৃত রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা হওয়ার কথা রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন ‘আদায়কৃত রাজস্ব থেকে এলাকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে একটি অংশ দেওয়ার কথা থাকলে সেটা প্রদান করা হচ্ছেনা। বাজার থেকে এতো টাকা রাজস্ব আদায় করা হলেও বাজারের উন্নয়নে এক টাকাও ব্যয় করা হয় না ফলে কাদা ও পানির মধ্যে অনেক ক্রেতা বিক্রেতা পশু কেনা বেচা করছে। ’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার বলেন, ওই পশুর হাট থেকে প্রতি বছরে ১১ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা আদায় হয়। টাকাগুলো পশুর হাটের আলাদা খাতে জমা হয় এবং উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন খাতে টাকাগুলো ব্যয় করে।
এ ছাড়াও নবীগঞ্জ পৌর এলাকার সালামতপুর, ইনাতগঞ্জ, গোপলার বাজার, সৈয়দপুর বাজার, নতুন বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসতে শুরু করেছে পশুর হাট গুলো। হাটগুলোতে ক্রেতাদের পদভারে সরগরম থাকলেও দাম সাধ্যের বাইরে থাকায় অনেক ক্রেতাই দাম কমার অপেক্ষা করছেন। তবে, ক্রেতারা কোরবানির পশু কিনতে শুরু করেছেন।
ঈদের আর মাত্র হাতে গুনা কয়েক দিন বাকী তাই পশুর হাটের ভীড় ও আস্তে আস্তে বেড়েই চলছে। শেষ মুহূর্তে আরো বেশী ভীড় বাড়বে এবং রাত ১২/১ পর্যন্ত বেচা কেনা চলবে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা ও গরুর বাজার কর্তৃপক্ষ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সম্পূর্ণ হাট ছিল গরু, ছাগল পশুতে পরিপূর্ণ। তবে দাম বেশী থাকায় মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় দাম একটু বেশী। অনেকেই কোরবানির পশু না কিনে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে। বাজারে দাম বেশী থাকায় অনেক বিক্রেতাকে ও তাদের আমদানিকৃত গরু বিক্রি না করে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। এদিকে, ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি ছোঁয়ায় আরো একধাপ এগিয়ে জমে উঠেছে পশুর হাট। অনেকেই স্মার্ট ফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে বিদেশে অথবা বাড়িতে থাকা লোকজনকে গরু দেখাচ্ছেন।
উপজেলার সাতাইহাল গ্রামের ক্রেতা নুরুজ্জামান জানান- বাজারে দাম খুব বেশী তাই কোরবানির গরু কিনতে হিমশিম খাচ্ছি। আগামী বাজারে দাম আরো কমতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলার দেবপাড়া এলাকার বাসিন্দা হাসেম উল্লাহ পশু বিক্রি করতে এসেছেন এ হাটে। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা আশানুরূপ বিক্রি না করতে পারায় সেগুলো নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। একটি গরু ৮০ হাজার টাকা দাম চাইলে ক্রেতারা ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দাম করেছেন। তাই বিক্রি করতে পারিনি। তবে ঈদের আগের ৪/৫ দিন বাজার আরো অনেক ভাল হবে বলে আশা করছি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল বলেন-, নবীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী দিনারপুর জনতার বাজার পশুর হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রেতারা পশু নিয়ে আসেন। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও নির্বিঘেœ ক্রেতা বিক্রেতারা পশু ক্রয় বিক্রয় করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।