রবিবার ● ২৭ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই সিলেটে বসেছে অবৈধ পশুরহাট
নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই সিলেটে বসেছে অবৈধ পশুরহাট
সিলেট প্রতিনিধি :: (১২ ভাদ্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় দুপুর ২.৩৩মি.) আসন্ন ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে সিলেট নগরীতে অন্তত ১০টি অবৈধ কোরবানীর পশুর হাট বসেছে।
ইতিমধ্যে এসব স্থানে হাট বসিয়ে গরু বেচা-বিক্রি শুরু হয়েছে। শেষ মুহূর্তে এসে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চারটি পশুরহাটের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু টেন্ডার আহ্বানের আগেই ওই সব স্থানে হাট বসানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় পশুর হাট নিয়ে সিলেটে রক্তারক্তিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
যারা ইতিমধ্যে হাট দখলে নিয়েছেন তারা ইজারাপ্রাপ্তদের কাছ হাট তুলে দিতে নাও দিতে পারে। এতে করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবার শুরু থেকেই বলেছিলেন- সিলেটে কোনো হাট ইজারা দেয়া হবে না।
সিসিক মেয়রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও একই কথা বলেন।
কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে পিছু হটে সিটি করপোরেশন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হজে যাওয়ার পরদিন শুক্রবার করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছুল হক পাটোয়ারী চারটি স্থানে অস্থায়ী পশুরহাট বসানোর টেন্ডার আহ্বান করেছেন।
সিলেট নগরীর সুবহানীঘাট, চালিবন্দর, ঝালোপাড়া ও কদমতলী এলাকায় অস্থায়ী পশুরহাট বসানোর টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ফলে এ চারটি স্থানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী পশুরহাট বসানো হচ্ছে।
এসব এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- যে চারটি এলাকায় সিটি করপোরেশন অস্থায়ী হাট বসানোর আহ্বান করেছে সেই চারটি স্থানে ইতিমধ্যে পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়। হাটে গরু রাখার জন্য গলি করে বাশের খুঁটি বসানো হয়েছে। আর টাকা সংগ্রহের জন্য ‘আসিল’ বসানো হয়েছে। ওই চারটি হাটেই গরু রয়েছে। বেচাবিক্রির জন্য সবকিছু প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন- ওইসব হাট কয়েকদিন আগে থেকেই স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা দখলে নিয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি’র নেতাদের সংখ্যা বেশি। পাশাপাশি স্থানীয় কাউন্সিলরদের পরোক্ষ মদদ রয়েছে এসব হাটে।
সিলেট নগরীর সুবহানীঘাট ও চালিবন্দর এলাকায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার শেল্টার রয়েছে। গতবারও তারা প্রভাব খাটিয়ে হাট বসিয়েছিলেন।
পরে অবশ্য সিটি করপোরেশন থেকে টেন্ডার আহ্বান করে হাটের বৈধতা দেয়া হয়। এবারের প্রক্রিয়াও একই।
সিসিক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব বলেন হাটের টেন্ডার আহ্বানের বিষয়টি তার নজরে নেই। তবে- অনেকেই হাটের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে পত্র সিটি করপোরেশনের এসেছিল। তিনি আরো বলেন- মেয়র মহোদয় তো শুরু থেকে জানিয়েছিলেন এবার হাট দেয়া হবে না। শেষ মূহূর্তে হয়তো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের সিনিয়র কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান জানান- তিনি হাটের বিষয় নিয়ে মেয়রের সঙ্গে কথ বলেছিলেন। কিন্তু মেয়রের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মিলেনি। বরং মেয়র নিজেই হাটের বিরুদ্ধে কথা বলেন। কিন্তু তিনি হজে যাওয়ার পরদিন পত্রিকান্তরে চারটি হাটের টেন্ডার আহ্বান করা রহস্যজনক বলে দাবি করে তিনি। মেয়র এবার হজ্ব থেকে আসার পর এ নিয়ে তারা কথাও বলবেন বলে জানান তিনি।
সিলেটে প্রধান পশুরহাট হচ্ছে কাজীরবাজার হাট। এই হাটের পক্ষ থেকে কয়েকদিন আগে পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়ে দেয়া হয়- ‘সিলেটে কিছু হাট ইজারা দেয়া হয়। আর ওইসব হাটে জোরপূর্বক ট্রাক থেকে পশু নামিয়ে দেয়া হয়।’ এ কারণে তাদের পক্ষ থেকে নতুন করে অস্থায়ী হাটের অনুমতি না দেয়ার আহ্বান জানানো হয় সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার ও জেলা প্রশাসক নিজ নিজ দপ্তরে সভা করে অস্থায়ী পশুরহাটের অনুমতি না দেয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে অবৈধ পশুরহাট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোরালো উদ্যোগ গ্রহণের কথ জানান। কিন্তু তাদের সে ঘোষণার বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে না।
গতকাল পর্যন্ত সিলেট নগরীতে অন্তত ১০টি পশুর হাট বসানো হয়েছে। এসব পশুর হাটে ট্রাক থেকে জোরপূর্বক নামিয়ে দেয়া হচ্ছ গরু। আর বেচাবিক্রিও শুরু হয়েছে। এর মধ্য রয়েছে জালালাবাদ গ্যাস ভবনের সামন, চালিবন্দর, শাহী ঈদগাহের লালটিলা, আম্বরখানা পয়েন্ট, বালুচর, টিলাগড়, আখালিয়াসহ কয়েকটি এলাকায়।
এসব এলাকায় হাট বসলেও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। পুলিশের এক কর্মকর্তা গতকাল জানান- কোনটি বৈধ আর কোনটি অবৈধ হাট গতকাল পর্যন্ত তারা নিশ্চিত হতে পারেননি। সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা চাওয়া হলে তারা সব ধরনের আইনি সহায়ত দেবেন।
সিলেটের প্রধান পশুরহাট কাজীর বাজারের ম্যানেজার সাহাদাত হোসেন লুলন জানিয়েছেন- প্রশাসনের নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই সিলেটে প্রতিবছর হাট বসানো হয়। আর এসব হাটে জোরপূর্বক ট্রাক থেকে গরু নামিয়ে নেয় ক্যাডাররা। এবার শুরু থেকে আমরা বিষয়টি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তাদের সেই আশ্বাসের প্রতিফলন এখনো দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বলেন- সিলেটের বাইরে থেকে ট্রাকযোগে আসা সব পশুর চালানের গন্তব্য থাকে কাজীরবাজার পশুরহাট। এই ট্রাকগুলো যাতে কেউ পথিমধ্যে না আটকে দেয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।