শনিবার ● ২ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » ধর্মান্তরের চেষ্টায় ব্যর্থ : রাখাইনে মুখোশধারীদের হাতে নির্যাতিত হিন্দুরা
ধর্মান্তরের চেষ্টায় ব্যর্থ : রাখাইনে মুখোশধারীদের হাতে নির্যাতিত হিন্দুরা
পলাশ বড়ুয়া,উখিয়া প্রতিনিধি :: (১৮ ভাদ্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৪৩মি.) রাখাইন রাজ্য চলমান সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৪৪৬জন সনাতনধর্মী হিন্দু। তাদের মধ্যে মহিলা এবং শিশুর সংখ্যা বেশি। তাদের অনেকে বলেছেন, হিন্দুদেরও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি অনেককে হত্যা করেছে মুখোশধারীরা।
সরেজমিনে জানা যায়, পালিয়ে আসা হিন্দু শরণার্থী তেজন্দ্র পালের পুত্র চিত্ত রঞ্জন (৫৫) সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, সীমান্ত থেকে তাদের বাড়ি ৫/৬ কিলোমিটার দূরে চিকনছড়ি গ্রামে। পেশায় কৃষি কাজ করে। প্রাণ রক্ষার্থে ৯ ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাইশারী দিয়ে ঢুকেছে বাংলাদেশে। তিনি বলেন, তাদের নির্যাতনকারী সবাই মুখোশধারী সন্ত্রাসী এবং সবাই বাংলায় কথা বলে। বিগত এক দেড় বৎসর সময় ধরে সংগঠিত হচ্ছে এসব মুখোশধারীরা। তাদের আল ইয়াকিন নামে আমরা চিনি। তারা গভীর রাতে চলাচল করে বলেও জানায় চিত্ত। একই ধরণের কথা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন মোহন লালের পুত্র অজিত (১৮)। তাদের ধারণা এরা কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অবাধে গোপনে আসা-যাওয়া করে।
রিপন শীল (১৮) পিতা- সুরুধন শীল সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, তাদের আশে-পাশের এলাকায় কোন থানা, পুলিশ কিছু নেই। মুসলিমদের সাথে স্বাভাবিক ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছি দীর্ঘদিন যাবত। তিনি আরো বলেন, হিন্দুদের ১টি হরি মন্দির ও ১টি দূর্গা মন্দির আছে সেখানে। নিয়মিত পূজা অর্চনা হয়। শুনেছি মন্দির দুটি পুড়ে দিয়েছে মুখোশধারীরা।
ফকিরা বাজার এলাকার নিরঞ্জন শীলের পুত্র সুমন্ত শীল (২২), পেশায় সেলুনকর্মী। কাজ করত চট্টগ্রাম রাত্তারপুল। নিয়মিত টাকা পাঠাত হ্নীলা স্টেশনে বিকাশের মাধ্যমে। টোকেনের মাধ্যমে আসা-যাওয়া করত। সম্প্রতি দেশে গিয়ে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসি স্ত্রী-পুত্র সহ। বাবা-মা কোথায় সে জানে না।
মংডু থেকে বুচিদং পর্যন্ত আল-ইয়াকিনের নিয়ন্ত্রণে। এই সব এলাকায় মিয়ানমারের বিজিপি আসতেও পারে না ঠিকমতো। আল-ইয়াকিনের সদস্য সংখ্যাও ৪/৫ হাজার বলে ধারণা করছে পালিয়ে আসা হিন্দু শরণার্থীরা। আল ইয়াকিনের সদস্যরা ফকিরা বাজার এলাকায় ৬জন হিন্দুকে কেটে ফেলেছে বলেও জানিয়েছে চিত্তরঞ্জন।
এদিকে পালিয়ে আসর পথে ১২ হিন্দু নারীকে চিকনছড়ি এলাকার আব্দুল হাকিমের পুত্র ছৈয়দ হোছন কৌশলে কুতুপালংস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এবং তাদের ধর্মান্তরিত করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ছৈয়দ হোছন। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করা হয় বলে জানায় স্বপন শর্মা।
এদের পরিচয় জানতে চাইলে শিবুরী চন্দ্র শীলের স্ত্রী কুমিলা (৩৫) সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ফকিরাবাজার এলাকার ধইল্যার মেয়ে পলি (২৫)। ২ সন্তানের জননী পলি। স্বামী মালেশিয়ায় থাকে। শৈলা কন্যা বিনা (৩০)। সেও ২ সন্তানের জননী। প্রদীপ বিনন্তের স্ত্রী জোন্সা (১৯) সহ অপরাপরদের তাৎক্ষণিক পরিচয় মেলেনি। উদ্ধারকৃত নারীগুলো বর্তমানে তাদের নিকটত্মীয়ের হেফাজতে আছে বলেও জানায় কুমিলা।
ধর্মান্তর করার চেষ্টায় অভিযুক্ত ছৈয়দ হোছন আল ইয়াকিনের সক্রিয় সদস্য এবং বর্তমানে সে কুতুপালং ক্যাম্পে অবস্থান করছে বলেও জানায় সুরুধন পালের পুত্র মধু রাম পাল।
মিয়ানমারে নাগরিক সুবিধা পাওয়ায় সনাতনধর্মীদের ভারতীয় হিন্দু বলে নির্যাতন করেছে আল ইয়াকিন বা আরএসও সদস্যরা এমনটি জানিয়েছে হিন্দু শরণার্থীরা।
আশ্রয় নেওয়া এসব হিন্দু শরণার্থী গুলো বর্তমানে কুতুপালংস্থ একটি অব্যবহৃত মুরগীর খামারে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে। পুষ্টিহীনতায় ভুগছে শিশুগুলো। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনও তাদের আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার রিকটা গ্রাম ছাড়াও চিকনছড়ি এবং ফকিরাবাজার গ্রামে ছিল হিন্দুদের বসবাস। এই তিনটি গ্রাম থেকে নির্যাতনের কারণে হিন্দুরা পালিয়ে সীমান্তে এসেছেন বলে জানাচ্ছেন স্বপন শর্মা।
মি. শর্মা আরও বলেছেন কয়েকশ সীমান্তে জিরোলাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাথে অবস্থান করছেন। পালিয়ে আসা এসব হিন্দু শরণার্থীদের তার সাধ্যমত আশ্রয়, খাদ্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।