রবিবার ● ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঘুমধুম ফাঁড়ি পুলিশের বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য
ঘুমধুম ফাঁড়ি পুলিশের বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য
উখিয়া প্রতিনিধি :: ঠেকানো যাচ্ছে না সেই বিতর্কিত উপ-পরিদর্শক এরশাদ উল্লাহর ঘুষ ও আটক বাণিজ্য। পুলিশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিরহ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রতিনিয়ত ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়িতে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজী ও ঘুষ বাণিজ্য। নিরহ মানুষকে আটক করে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়ার হুমকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। কেউ প্রতিবাদ করলেই রাতের আধাঁরে ধরে নিয়ে এসে অমানুষিক নির্যাতন চালায় পুলিশের সেই এসআই এরশাদ উল্লাহ এমন অভিযোগ সচেতন এলাকাবাসীর।
অভিযোগে প্রকাশ, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়িতে প্রায় ২ বছর ধরে ইনচার্জের দায়িত্বপালন করে আসছে এসআই এরশাদ উল্লাহ। দীর্ঘদিন চাকুরী করার সুবাদে এলাকায় মাদক, ইয়াবা ব্যবসায়ী, চোরাই পণ্য পাচারকারী, সন্ত্রাসী ও পাহাড় খেকোদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক গড়ে উঠে। এমনকি কালোবাজারীদের সাথে সখ্যতা থাকার কারণে অপরাধ জগতে তার বিশাল নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হয়েছে। তার এ বিশাল অপরাধের নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থকড়ির মালিক বনে গেছেন এই বিতর্কিত পুলিশ অফিসার এরশাদ। বিষয়টির সত্যতা ও অঢেল সহায় সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া সেই পুলিশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুকের) মাধ্যমে তদন্ত করার দাবী স্থানীয়দের।
অভিযোগ উঠেছে, ৬ সেপ্টেম্বর উখিয়ার ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান মামুনকে আটক করে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়া হুমকি দিয়ে বিতর্কিত এসআই এরশাদ উল্লাহ ৩ লক্ষ টাকা দাবী করে।
এ ঘটনা তাৎক্ষনিক ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভ এবং পুলিশের বিরুদ্ধে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
জানা যায়, উখিয়া উপজেলা যুবলীগের নেতা আজিজুর রহমান মামুন ও তার ভগ্নিপতি কক্সবাজার শহর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে মটরসাইকেল যোগে তুমব্রু সীমান্তে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদেরকে দেখতে যান। ভূল বুঝাবুঝির কারণে তার মটর সাইকেলটি ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়।
মামুন অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, মটর সাইকেলটি আনার জন্য সন্ধ্যায় পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে এসআই এরশাদ উল্লাহ তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে মিথ্যা আখ্যায়িত করে মামলার হুমকি দেয় আটকিয়ে রাখে। এক পর্যায়ে ৪ ঘন্টা জোরপূর্বক আটকিয়ে রাখার পর মাদকের মামলার কথা বলে ৩ লক্ষ টাকা দাবী করে। পরবর্তীতে ছোট ভাই ব্যবসায়ী ওমর ফারুক পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকা নেওয়ার পর মামুনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইতিপূর্বেও উখিয়া, ঘুমধুম ও তুমব্রু এলাকার নিরহ ব্যক্তিদেরকে বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বলতে গেলে এক আতংকের নাম হচ্ছে এসআই এরশাদ উল্লাহ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ইন্সেপেক্টর ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, এক ব্যক্তির সাথে তর্কের ঘটনায় বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরফাতের নির্দেশে মামুনের মটর সাইকেলটি ফাঁড়িতে আনা হয়। পরবর্তীতে দু’জনের ভূলবুঝাবুঝির অবসান হলে মটর সাইকেলটি ছেড়ে দেওয়ায় হয়। মোটা অংকের উৎকোচ নেওয়ার বিষয়টি তিনি জানে না।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির এসআই এরশাদ উল্লাহ ঘুষ বাণিজ্য, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা সহ অপরাধীদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও নিরহ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং মোটা অংকের উৎকোচ বাণিজ্যে জড়িত এমন অভিযোগ রয়েছে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে। গুরুতর অপরাধের বিষয়টি বর্তমানে চট্টগ্রাম পুলিশ বিভাগের ডিআইজির নিকট তদন্তাধীন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও (০১৮১৮৯১০৯৩১) সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।