সোমবার ● ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » কালীগঞ্জে মধ্যযুগীয় কায়দায় মাকে নির্যাতন, বাবার বিচার চান ছেলে
কালীগঞ্জে মধ্যযুগীয় কায়দায় মাকে নির্যাতন, বাবার বিচার চান ছেলে
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (২৭ ভাদ্র ১৪২৪ বাঙালা : বাংলাদেশ সময় সকাল ১০.৩৮মি.) গাজীপুরের কালীগঞ্জে মা মরিয়ম বেগমকে (৩৬) অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় বাবা তমিজ উদ্দিনের (৫০) বিচার চান ছেলে মো. তামিম ভূইয়া (১৮)।
১০ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মহিলা ওয়ার্ডে ২৪ নং বেডে মায়ের পাশে বসে অশ্রুসিক্ত নয়নে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত অন্য রোগী ও দর্শণার্থীদের মাঝে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
নির্যাতিতা ও নির্যাতনকারী দম্পতির বড় ছেলে তামিম জানান, তার বয়স যখন ৭ বছর তখন থেকে বাবা তমিজ উদ্দিন মা মরিয়ম বেগমকে নির্যাতন করতেন। কিন্তু আহত অবস্থায় পড়ে থাকলেও মায়ের কোনো চিকিৎসা করতেন না। মা কষ্ট সহ্য করতে না পেরে নানা বাড়িতে চলে যেতেন। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতেন।
তামিম জানান, নির্যাতনের পর মা নানা বাড়ি চলে গেলে বাবা তাকে সন্দেহ করতেন। নানা বাড়ির এক লোকের সঙ্গে পরকীয়া সন্দেহে এবং বিভিন্ন সময় মারধরের ভয় দেখিয়ে বাবা পরকীয়ার সম্পর্কের কথা স্বীকার করাতেন।
সম্প্রতি মাকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গেলে তামিমকে মেরে তার হাত ভেঙে দেন বাবা। এ কারণে বাড়ির আশেপাশের লোকজনও ভয়ে প্রতিবাদ করতে যেত না। প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদের দা-বটি দিয়ে কোপাতে আসেন বাবা।
তামিম আরও জানান, ২০০৯ সালের একটি হত্যা মামলার আসামি তার বাবা। মায়ের অনুমতি ছাড়া বাবা আরও ৫টি বিয়ে করেন। কিন্তু একটিও টিকেনি। চার ভাইসহ ছয় সদস্যের পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন বাবা। এ জন্য মা বাবার কথায় বিদেশ পাড়ি দেন। সংসারের সুখের জন্য নিজের লেখাপড়া বাদ দিয়ে ছোট থেকে দিন-রাত বাবার সঙ্গে কাজ করেছি। তবুও সংসারে অশান্তি লেগেই থাকত। আসলে বাবা বড় নিষ্ঠুর। তাই তার সঠিক বিচার হওয়া দরকার, তার বিচার চাই।
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই মো. মনিরুজ্জামান বলেন, চার সন্তানের জননী মরিয়ম বেগমকে রডের গরম ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় তার স্বামীকে গ্রেফতার করে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। ওই ঘটনার আরেক আসামি নরসিংদীর মাধবদী এলাকার সুমন নামের একজনকে খুঁজছে পুলিশ।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার মো. ছাদেকুর রহমান আকন্দ জানান, তারা তাদের সাধ্যমত নির্যাাতিতা ওই নারীর চিকিৎসা করছেন। সরকারি হাসপাতাল অনেক কিছুই থাকে না। তারপরও বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতায় চিকিৎসা চলছে।
গত ৪ সোমবার সেপ্টেম্বর থেকে ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার চার দিন ঘরে আটকে রেখে স্ত্রী মরিয়ম বেগমের ওপর নির্যাতন চালায় স্বামী তমিজ উদ্দিন।
এ সময় লোহার রড গরম করে যৌনাঙ্গ (গোপনাঙ্গ) সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেয়া হয়। কেটে ফেলা হয় স্ত্রীর দুই স্তনের বোটা। এছাড়াও তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়।