বুধবার ● ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » কলাপাড়ায় বাড়ছে অপসাংবাদিকতা
কলাপাড়ায় বাড়ছে অপসাংবাদিকতা
পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: (২৯ভাদ্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.২৯মি.) পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ক্রমশ: বাড়ছে অপসাংবাদিকতা। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগী সংগঠনের ক্যাডারাও আসছে সাংবাদিকতা পেশায়। এসব ক্যাডাররা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার আঞ্চলিক অখ্যাত পত্রিকার পরিচয় পত্র এনে সাধারণ মানুষকে হয়রানি কিংবা চাঁদাবাজি করার উদ্দেশ্যে এ পেশা বেছে নিচ্ছে। এসব সাংবাদিকরা ঠিকমত সাংবাদিক শব্দটিও উচ্চারণ করতে পারেন না, বলেন সামবাদিক। হাতে গোনা কয়েকটি শ্রেষ্ঠ পেশার মধ্যে সাংবাদিকতাও একটি। অথচ এ পেশাটিকে এক শ্রেনীর পত্রিকার মালিক কিংবা সম্পাদকরা কোন প্রকার একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন কিংবা সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ কিংবা অভিজ্ঞতা না দেখে টাকায় বিক্রি করেন ওই পরিচয় পত্র। ভন্ড এ সাংবাদিকরা এসব পরিচয় পত্র সর্বদা পকেটে রেখে এবং তাদের ব্যবহৃত মোটর যানের সামনে ’প্রেস’ লিখে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন শহর থেকে গ্রামীণ জনপদ পর্যন্ত। এদের অনেকেই এখন হরেক রকমের ধান্দা নিয়ে ঘুরে বেড়ান শহর থেকে প্রত্যন্ত জনপদে। দালালি করেন বিভিন্ন অফিসের। এরা কথায় বললে মনে হয় উনি একজন জ্ঞানি-গুনী ব্যক্তি, সমাজ সেবক। এসব ভুয়া সাংবাদিকদের মধ্যে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর কর্মরত কতিপয় লোকও রয়েছে। সাংবাদিকতায় বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাবে এদের কেউ কেউ তাদের ভাষায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য আনতে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে জোরপূর্বক ধরে এনে তার কাছ থেকে ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর রাখার ঘটনা পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলার পর স্থানীয় প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে সেই ষ্ট্যাম্প ভুক্তভোগীকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
এছাড়া ’নিউজ’ লেখার আদৌ যাদের দক্ষতা নেই সেরকম সাংবাদিক এরা। যারা অপরের দক্ষতায় সাংবাদিকতা করছেন বছরের পর বছর। এমনকি তাদের ভাষায় প্রয়োজনে তারা ষ্টাফ নিয়োগ দিয়ে এ পেশায় থাকবেন। কেননা থানা, কোর্ট, ইউপি কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ সহ বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী দপ্তরে গিয়ে এরা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সুবিধা বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় থাকছেন সর্বদা ব্যস্ত।
এদের কেউ কেউ আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ন পদে রয়েছেন। এদের ভাষায় সাংবাদিক হলে পুলিশও সমীহ করে চলে।
এরা পত্রিকা অফিস থেকে কোনরকম সন্মানী তো প্রত্যাশাই করেন না বরং পত্রিকার বার্তা সম্পাদক, সম্পাদক সহ মালিক পক্ষকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসার আমন্ত্রন সহ বিভিন্ন উপঢৌকন কিংবা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে রাজী-খুশী রাখছেন। কেউ কেউ আবার তাদের আঞ্চলিক পত্রিকার ব্যুরো অফিস নিয়ে ষ্টাফ নিয়োগ দিয়ে প্রতি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় প্রতিনিধি নিয়োগের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
এসব রাজনৈতিক দলের ক্যাডার সাংবাদিক দ্বারা সমাজ উপকৃত হওয়া তো দূরের কথা, ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষের।
স্থানীয় প্রশাসন এসব হলুদ সাংবাদিকদের সনাক্ত করতে না পারলে, সাংবাদিকতার মত মহান পেশা কলুষিত হবে পুরোপুরি। বেড়ে যাবে নিরব চাঁদাবাজি। কারণ কলাপাড়া উপজেলা বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় অন্যতম। এখানে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর, পর্যটন নগরী কুয়াকাটা, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং ষ্টেশন সহ একাধিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের দরুন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে কলাপাড়ার ব্যাপক পরিচিতি এখন বিদেশেও। সে হিসেবে এ উপজেলাটি ভবিষ্যতে জেলায় রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। বাড়বে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে মানুষের।
এসব কর্ম কান্ডকে ঘিরে ওই চাঁদাবাজ, ক্যাডার সাংবাদিকরা হয়ে উঠবে আরও বেপরোয়া।