বৃহস্পতিবার ● ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » উখিয়ার ক্ষুদে রিফা ফুটবলে জ্যোতি ছড়াচ্ছে ভারতেও
উখিয়ার ক্ষুদে রিফা ফুটবলে জ্যোতি ছড়াচ্ছে ভারতেও
পলাশ বড়ুয়া,উখিয়া প্রতিনিধি :: (৩০ভাদ্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.১২মি.) বিকেএসপিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে শাহেদা আক্তার রিফা। বিস্ময় ফুটবলার কন্যা রিফা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে এবার জ্যোতি ছড়াচ্ছে ভারতের মাটিতে।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠা ছোট্ট রিফা।
রিফার বাবা জালাল আহমদ (৫০) পেশায় দিনমজুর। মা শামশু নাহার (৪০) অভাবের সংসার সামলাতে ব্যস্ত। বাড়ি-ভিটা ছাড়া সহায় সম্বল বলতে কিছু নেই। দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে ওঠা ক্ষুদে রিপা অদম্য ইচ্ছা পূরণে লড়াই শুরু করে ছোট্ট রিফা। মেয়ের খেলাধুলা সরঞ্জাম যোগাতে পারেনি ঠিক মতো। সেই মেয়ে প্রতিটি পর্যায়ের খেলায় অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে। তার বাবা এখন আর দারিদ্রতার কষ্টকে কষ্ট মনে করেন না। রিফার সাফল্যে তারা অনেক সুখী মানুষ মনে করে এখন ।
সেই খেটে খাওয়া সেই মানুষগুলো আজ রিফার আলোয় আলোকিত।
২০১৩ সালে সোনাইছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল তার খেলোয়াড়ি জীবন।
উখিয়ার ক্ষুদে এই ফুটবল খেলোয়াড়ের পরিবারের দুঃখ-কষ্টের গল্প শুনলে যে কারো চোখের জল এসে যাবে। দারিদ্রতাকে জয় করে রিফা সাফল্যের জ্যোতি ছড়াচ্ছে। বর্তমানে ভারতের মাটিতে সুব্রত মুখার্জী ফুটবল টূর্ণামেন্টে বাংলাদেশের বিকেএসপির পক্ষে খেলছে।
বিকেএসপি মহিলা ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় রিফা। এলাকার মানুষ তাকে ক্ষুদে মেসি বলে ডাকে। ভারতের মাটিতে সুব্রত মুখার্জী ফুটবল টূর্ণামেন্টে কৃতিত্বের সঙ্গে খেলা খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
২০১৩ সালে সে যখন ২য় শ্রেণির ছাত্রী তখন খেলা শুরু করে। সে প্রতিটি খেলায় সে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আসছে। সে গত বছর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলে চট্রগ্রাম বিভাগে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছে। তার অসাধারণ নৈপুণ্যে তার স্কুল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তার অদম্য ইচ্ছায় টানা তৃতীয় বারের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলার পরে বিকেএসপি’তে ট্রায়েল দেয়। ট্রায়েলে সে বাংলাদেশের শ্রেষ্ট খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়। এছাড়া সে অসংখ্য বার সর্বোচ্চ গোলদাতা, ম্যান অব ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছে।
বর্তমানে সে বিকেএসপির হয়ে ভারতে মাটিতে প্রথম ম্যাচে ত্রিপুরা রাজ্যের বিরুদ্ধে মাত্র ৪০সেকেন্ডে গোল করে সুনাম অর্জন করেছে।
এছাড়া সে ধারাবাহিক ভাবে দিল্লি ও হরিয়ানা প্রদেশের বিরুদ্ধে ১টি করে গোল করে দলের জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখে।
রিফার ব্যাপারে তার আপন বড়ভাই ফারুক হোসাইন ও স্থানীয় প্রতিবেশী নুরুল আবছার নান্নু জানান, রিফার ছোটবেলা থেকে ফুটবল খেলার খুব শখ থাকায় পরিবার থেকে তাকে বাঁধা দেয়নি কখনো। অভাব অনটনের মাঝেও পরিবার থেকে তাকে খেলার উৎসাহ যোগিয়েছি। আজ আমার বোন এতদুর আসার পেছনে এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়।
বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জানায় সানা উল্লাহ ও শামশুল আলম সোহাগের প্রতি, তাঁরা আমার বোনের দায়িত্ব নিয়ে ছোট্ট রিফার মনে সাহস যোগিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বিকেএসপিতে ভর্তি করিয়ে দেয়। ফলে আমার বোন আজ এতদুর এগিয়ে গেছে। তিনি দেশবাসীর কাছে তার ছোট বোনের জন্য দোয়া কামনা করেছেন।
ক্ষুঁদে ফুটবলার রিফা (মেসি) খেলার প্রশংসা করে জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরীর পুত্র আইনজীবি শাহ আমিন চৌধুরী বলেন, ক্ষুদে মেসি ভারতের মাঠেও অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে।
মেসি খ্যাত রিফা জালিয়াপালং ইউনিয়ন তথা পুরো দেশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখবে।