শুক্রবার ● ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে ১০ লাখ পেরিয়ে গেছে বলে ধারনা : কক্সবাজার জেলার পার্শ্ববর্তী জনপদে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে ১০ লাখ পেরিয়ে গেছে বলে ধারনা : কক্সবাজার জেলার পার্শ্ববর্তী জনপদে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
উখিয়া প্রতিনিধি :: (৭ আশ্বিন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.০৬মি.) রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও পার্শ্ববর্তী পাহাড়ী জনপদ নাইক্ষ্যংছড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের চাপে উখিয়া-টেকনাফের সার্বিক পরিস্থিতি ভারী হয়েছে উঠেছে।
বিরূপ প্রভাব পড়ছে সবখানে। ইতোমধ্যে সোয়া চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে রোহিঙ্গার সংখ্যা। এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার দেখভালের দায়িত্ব চলে আসছে বাংলাদেশ সরকারের ওপর। যদিও দেশি-বিদেশি অর্থ সহায়তা এখানে আসতে পারে। তদুপরি, আইন-শৃঙ্খলাসহ অন্যান্য সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়ও এটি বিরাট চাপ হিসাবে দেখা দিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিদিন নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখী হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং,বালুখালী, (বালুখালীর ঢালা), থাইংখালী তাজনিমারখোলা পাহাড়, পালংখালী বাঘঘোনা পাহাড়, টেকনাফের লেদা, নয়াপাড়া, মুছুনি, শামলাপুর ও ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্ত সহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা।
গাড়ী যোগে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা আসা অব্যাহত থাকায় কুতুপালং,বালুখালী ক্যাম্পগুলোয় স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তারা রাস্তা-ঘাট, দোকান-পাটসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। উখিয়া-টেকনাফ উপজেলায় বাড়তি ১০লাখেরও বেশি মানুষের আগমণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, ভাড়া বৃদ্ধি, যানজট, পাহাড় ও বনভুমি ধ্বংস হচ্ছে দিন দিন।
এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রমে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সংখ্যাও দিন দিন কমতে শুরু করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুল, কলেজে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রাস্তায় গাড়ী সংকট। গাড়ী পেলেও গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
উখিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রায়হানুল ইসলাম মিঞা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মাধ্যমিক পর্যায়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি এ পর্যন্ত। তবে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
উখিয়া কলেজ অধ্যক্ষ ফজলুল করিম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, রোহিঙ্গা আগমণের কারণে কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতির হার কমে গেছে।
তাছাড়া কলেজ ভবনে বিজিবি’র অস্থায়ী ক্যাম্প হওয়ায় একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে উচ্চ মাধ্যমিক ১ম ও ২য় বর্ষের পরীক্ষা চলছে।
উখিয়া উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকতার আহমদ সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, রাজাপালং ইউনিয়নের ১টি এবং পালংখালী ইউনিয়নের ৪টি সহ মোট ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রোহিঙ্গার সমস্যায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি বলে তিনি জানান।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহমেদ সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে ১ম ধাপে শিক্ষা কার্যক্রমে সীমান্ত এলাকার স্কুল গুলোতে কিছুটা ব্যাঘাত হলেও বর্তমানে ৭০-৯০% শিক্ষার্থী উপস্থিতি রয়েছে।
অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ চৌধুরী সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, রোহিঙ্গা আসলে আর ফিরে যেতে চায় না। যেহেতু ইতিপূর্বে ১৮৭৮, ১৯৯০ সালেও দেখেছি। এখন ২০১৭ দেখছি। রোহিঙ্গা আগমণের কারণে সার্বিক পরিস্থিতি মোটেও সুবিধাজনক নয়। তিনি বলেন, বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি শূণ্যের কোঠায় পৌছেছে। তাছাড়া যাতায়াত ও পড়ালেখার ভালো পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিও ভাবছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নসহ ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার জুড়ে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এখনও পযর্ন্ত প্রায় ৫০/৬০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষায় আছে। মিয়ানমারের পুরমা নদীর পাড়েও ২লাখ মত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার জন্য অপেক্ষা করছে।
এদিকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অনেকেই রাস্তার ধারে বসে থাকে ত্রাণের আশায়।
একাধিক অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়া বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও ঔষুধ সহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণে কাজ করছে। ফলে পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে।
মিয়ানমারে সহিংসতায় নতুন করে ঠিক কতজন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে এর কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই প্রশাসন সহ কারও কাছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও জাতিসংঘের হিসাবে সোয়া ৪ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে দাবি করেছে।
স্থানীয়রা এই সংখ্যা ১০ লাখ পেরিয়ে গেছে বলে ধারনা করছে। সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে একই অভিমত ব্যক্ত করেন হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম।