শনিবার ● ১৪ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি : প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি : প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ
অনলাইন ডেস্ক :: (২৯ আশ্বিন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯. ২২ মি.) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্ট যে বিবৃতি দিয়েছে সে সম্পর্কে কৌতুহল হতে পারে, প্রশ্নোত্তরে দেখে নেই এমন সব বিষয় :
সুপ্রিম কোর্ট কেন আগে এরকম বিবৃতি দেয়নি ?
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে আগে কোন প্রকার বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয়নি।
বিবৃতিটি কোথায় চূড়ান্ত করা হয় ? সুপ্রিম কোর্টের বৈঠকে।
সুপ্রিম কোর্টের বৈঠকে কারা যোগ দিয়েছিলেন ?
ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি ছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাসহ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি এবং হাইকোর্ট বিভাগের প্রতিনিধি হিসেকে ২ বিচারপতি।
বৈঠকটি কতোক্ষণ স্থায়ী হয় ?
প্রায় ৪ ঘণ্টা।
বিবৃতিতে কে সই করেছেন ?
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নির্দেশক্রমে বিবৃতিটি প্রদান করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে কোন প্রেক্ষাপটে এরকম বিবৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে?
ছৃুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিদেশে যাওয়ার আগে গণমাধ্যমের কাছে যে বিবৃতি দিয়েছেন তার প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট এ বিবৃতি দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এক কথায় প্রধান বিচারপতির বিবৃতিকে সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছে ?
বিভ্রান্তিমূলক।
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে রাষ্ট্রপতি প্রসঙ্গ কীভাবে এসেছে ?
গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছাড়া আপিল বিভাগের অন্য ৫ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান।
রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে কারা বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন ?
বিদেশে থাকায় মো. ইমান আলী ছাড়া আপিল বিভাগের ৪ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং মির্জা হোসেইন হায়দার।
বৈঠকে রাষ্ট্রপতি কোন প্রসঙ্গে কথা বলেন ?
দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্য উপস্থাপন করেন।
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগের দালিলিক প্রমাণ আছে ?
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি অনুযায়ী, বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পর আপিল বিভাগের বিচারপতিরা কী করলেন ?
বিচারপতি মোঃ ইমান আলী দেশে ফিরে আসার পর ১ অক্টোবর আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি বৈঠকে মিলিত হন এবং প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যে ১১টি অভিযোগ সেগুলো বিশদভাবে পর্যালোচনা করেন।
আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয় ?
সিদ্ধান্ত হয় যে, গুরুতর অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করা হবে। তিনি যদি ওই অভিযোগগুলোর বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহলে তার সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকার্য পরিচালনা সম্ভব হবে না।
ওই সিদ্ধান্তের পর আপিল বিভাগের বিচারপতিরা কী করলেন ?
ওইদিনই বেলা ১১:৩০টার দিকে প্রধান বিচারপতির অনুমতি নিয়ে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তার হেয়ার রোডের বাসায় দেখা করে অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে প্রধান বিচারপতি কী বলেন ?
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি অনুযায়ী, দীর্ঘ আলোচনার পরও প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর পাননি।
আপিল বিভাগের বিচারপতিরা তখন কী সিদ্ধান্ত নিলেন ?
তারা জানিয়ে দেন যে, অভিযোগগুলোর বিষয়ে সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা সম্ভব হবে না।
এমন সিদ্ধান্তে প্রধান বিচারপতি কী বলেন ?
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি তখন সুস্পষ্টভাবে বলেন, সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে, এ ব্যাপারে পরদিন (২ অক্টোবর) তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।
প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি এরপর কী করলেন ?
বিৃবতিতে বলা হয়, আপিল বিভাগের বিচারপতিদেরকে পরদিন কিছু না জানিয়ে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির কাছে ১ মাসের ছুটির আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন।
প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা কতোটুকু ?
সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. অাব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
সৌজন্যে : চ্যানেল আই অনলাইন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একই বেঞ্চে বসতে চাননি ৫ বিচারপতি
ঢাকা প্রতিনিধি :: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসতে চাননি আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি। সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ–সংবলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করলে পাঁচ বিচারপতি তাঁদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ও গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেওয়া বিবৃতিকে বিভ্রান্তিমূলকও বলা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ছুটি ভোগরত প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১৩ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। লিখিত বিবৃতিটি সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই লিখিত বিবৃতি বিভ্রান্তিমূলক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছাড়া আপিল বিভাগের অন্য পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি মো. ইমান আলী দেশের বাইরে থাকায় ওই আমন্ত্রণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। অন্য চারজন অর্থাৎ, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচাপরতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ আলোচনার একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ–সংবলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তার মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিচারপতি মো. ইমান আলী ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর ১ অক্টোবর আপিল বিভাগের উল্লিখিত পাঁচ বিচারপতি এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ওই ১১টি অভিযোগ বিষদভাবে পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন, ওই সব গুরুতর অভিযোগ প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করা হবে। তিনি যদি ওই সব অভিযোগের ব্যাপের কোনো সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাঁর সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
এ সিদ্ধান্তের পর ওই দিন (১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অনুমতি নিয়ে পাঁচ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির হেয়ার রোডের বাস ভবনে সাক্ষাৎ করে অভিযোগগুলো নিয়ে বিষদভাবে আলোচনা করেন। দীর্ঘ আলোচনার পরে তাঁর কাছ থেকে কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের উল্লিখিত পাঁচ বিচারপতি তাঁকে সুষ্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন যে এ অবস্থায় ওই অভিযোগ গুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাঁদের (৫ বিচারপতি) পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সুষ্পষ্টভাবে বলেন যে সে ক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এ ব্যাপারে পরের দিন ২ অক্টোবর তিনি তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। ২ অক্টোবর তিনি উল্লিখিত বিচারপতিদের কোনো কিছু অবহিত না করে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জেষ্ঠ্যতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে দেশের প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন।
রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে কোনো ধরনের বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয়নি। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে উপরিউক্ত বিবৃতি প্রদান করা হলো।
সৌজন্যে : প্রথম আলো।