সোমবার ● ১৬ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » মিনহাজ মল্লিকের সৃজনশীল ও কর্মমুখী পরিকল্পনা প্রামবাংলা দৃশ্যপট
মিনহাজ মল্লিকের সৃজনশীল ও কর্মমুখী পরিকল্পনা প্রামবাংলা দৃশ্যপট
নজরুল ইসলাম তোফা :: আবহমান বাংলার গ্রামীণ মেহনতি মানুষ ও অবহেলিত জনপথকে হৃদয়ের গভীরে নিয়ে কিছু ব্যতিক্রম চিন্তা ধারার শৈল্পিক গুনি মানুষকে খোঁজে পাওয়া যায়। তাঁরা শুধুই গাঁ গেরামের সরল মানুষের ভালোবাসায় তৃৃপ্ত। ব্যস্ততম শহরের মিডিয়া কর্মের পরিবেশ ছেড়ে গ্রাম বাংলার অতি সাধারণ মানুষকে ভালোবেসে তাঁদের সঙ্গেই হৃদয়ের মনোব্যঞ্জনা আনন্দ দ্যোতনায় সদা সর্বদাই উল্লসিত জীবন যাপনে ব্যস্ত। বলা চলে তাঁর হিয়ায় ভিতর দোলা দিয়ে যায় মধুর অনাবিলতা। আবার কখনো সখনো শত বেদনা-ব্যর্থতার মাঝেও চোখে মুখে স্বস্তির ভাব বিরাজ করে। কারণ, রাজধানী ঢাকায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এক ঝাঁক মিডিয়া পরিচালক তাতে করে গ্রামীণ সমাজ পরিমণ্ডলে বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের ধারাপ্রবাহকে সচল রাখতেই প্রাম শ্রেয়। তাই প্রতিনিয়ত গ্রামীণ জনজীবনে তাঁর এই প্রচেষ্টা শুধুই সাধারণ মানুষকে চরম বিনোদন দেওয়া। সাধারণ মানুষের ধ্যান-ধারণা, আনন্দ উল্লাসে ভাব বিনিময়ের মাঝে পান মধুরতা, নিষ্কলুষ প্রণোদনার প্রকাশ এবং প্রবহমানতার প্রতিভূই জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে বা কাজ কর্মে। সুতরাং বলা চলে বাঙালির জীবন প্রবাহের বিভিন্ন কর্মের সঞ্চার হয় তাঁরই নির্মিত নানান কাজ কর্মে ও তাতে অধিক মাত্রায় পরিলক্ষিত হয় লোকজ সমাজ জীবন। তাই এমনিই এক সুদক্ষ নাট্যকার ও পরিচালক গ্রামীণ জনপদের সরলমনা মানুষের কাছে প্রিয়ভাজন ও ব্যক্তিত্ত্বের অধিকারী হয়ে উঠেন ‘মিনহাজ মল্লিক’।
গ্রামবাংলার লোকজ সমাজ জীবনে প্রথমত নির্মিত
শিল্পে তাঁকে প্রকটভাবে ধাক্কা সহ্য করতে হয়েছিল। কিন্তু এখন আর তেমন কষ্ট অনুভব হয় না। আর তাঁরই ফলশ্রুতিতে বাংলার লোকজ সমাজ সংস্কৃতি বা শিল্প অবক্ষয়ের দোরগোড়া থেকে সাধারণ জনতার হাতের নাগালে দিতে পারছেন তাঁর নির্মিত শিল্প। তিনি মুলত ভালবাসা বা প্রেমকে সমন্বয় করে জীবন চৈতন্য বোধে পরলৌকিক ও আধ্যাত্বিকতার সন্ধানে গ্রাম বাংলার মানুষের জীবন কাহীনি চিত্রায়নে অনেকাংশে নির্মিত নাটক, ফিল্ম এবং টেলিফিল্ম জনতার মনের দর্পণেই হাজির করেছেন। এমন চিন্তা ধারার ক্রিয়েটিভ সুদক্ষ, গুনি নির্মাতা কর্মমূখর গ্রামীণ তৃণমূল মানুষের জীবনের জন্য বিনোদনের ক্ষুরাক জুগিয়েছেন। বলা চলে গ্রামীণ জনপদে নিত্য দিনের এই মানুষের পদধ্বনি সত্যিই বজরাহার গ্রামবাসীর কাছে বিরল। গুনি ও প্রতিভাবান মিনহাজ মল্লিক ০৩/ ১১/ ১৯৮৫ সালে সিংড়া থানার নাটোর জেলায় অতি সাধারণ কৃষক পরিবারে তফির মল্লিকের ঘরে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর আদরের গৃহিণী মা লুৎফুন নেছার সর্ব কনিষ্ঠ পুত্র সন্তান। আরও যে চার ভাই বোন সবাই স্ব স্ব জায়গায় চাকুরীতে অনেক ব্যস্ত আছেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি কাজের পান্ডুলিপি নিজস্ব হস্তে তৈরি হয়ে থাকেন আবার পরিচালনা কাজেও তিনিই গ্রামীণ অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের অভিনয় করিয়ে থাকেন। ২০০৩ এ গ্রামের মঞ্চে, তাঁর মঞ্চ নাটক ‘স্বপ্নের যৌতুক’ নাটক দিয়ে লেখা ও নির্দেশনার কাজ শুরু হয়। তারপর তিনি ২০০৫ এ ৭ জানুয়ারি মাসে ওস্তাদ বা গুরু চিত্র পরিচালক আলী আজাদ এর হাত ধরে চিত্র জগতে পদার্পন করেন। আর এই চিত্র জগতে গমনের কারণ হলো, তিনি তা আক্ষেপ বা কষ্ট সঙ্গে বলেন, গ্রামের এক উন্মুক্ত মঞ্চে প্রথম সখের বসে নাচতে উঠেছিলেন। সেই মঞ্চ থেকেই তাঁকে নাকি নামিয়ে দেয়া হয়েছিলো আর সেই আঘাত বা কষ্ট থেকেই গ্রামীণ পরিবেশে মিডিয়া অঙ্গনের কাজের প্রতি আগ্রহ দেখান আর এ পথেই গুরু হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বা অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। তিনি মিডিয়া কাজে শিক্ষা নেওয়ার জন্য খুব অভিমানে গ্রাম থেকে ঢাকায় পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানে অর্থাৎ বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে অজস্র সংঘাত ও প্রতিকুতায় তিনি হোচট খেয়ে একপর্যায়ে অবশ্য সিদ্ধান্তে আসেন গ্রামীণ বা আঞ্চলিক পর্যায়ে কিছু সংস্কৃতির বিকাশের কাজ করলে হয়তো মন্দ হবে না। গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে এসেই অনেক নাট্য পান্ডুলিপি তৈরী ও নাট্য পরিচালনায় নেমে পড়েন। মঞ্চ নাট্যেও তাঁর অনেক জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। তিনি অতীতের জ্ঞান ও বর্তমানের প্রচুর নির্মিত কাজ কর্মের আলোকে নজরুল ইসলাম তোফাকে বলেন, সারা জীবন গ্রাম বাংলার কথা কাহিনী ও মনোরম প্রকৃতির দৃশ্যাবলী নিয়ে বাঁকি জীবনটাই অতি সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দ উল্লাসে অবিরাম ভাবে বেঁচে থাকতে চাই।
সামনে নতুন এক টেলিফিল্ম ‘প্রেম নগর’ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি জীবনের শুরু থেকে আজ অব্ধি মিডিয়া অঙ্গনে অনেক নাটক, টেলিফিল্ম এবং ফিল্মের কাজ করেছেন। তিনি আবারও বলেন, ফ্লিম, টেলিফিল্ম এবং নাটকের সংখ্যা ২৩টি হবে। যেমন: ‘দরদী’, ‘সোনাবন্ধুরে’, ‘মাইকওয়ালা’, ‘গানের গুরু’, ‘ভরা নদীর বাঁকে’, ‘আতা গাছের তোতা পাখি’ এবং ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’ ইত্যাদি।
মিনহাজ মল্লিক আগে মঞ্চ নাটক পরিচালনা করে সে গুলো নাটকে আবার নিয়ে যান ক্যামেরায়। তাঁর এমন দুঃসাহসিক পরিকল্পিত চিন্তার আলোকে ক্যামেরায় বন্ধি হওয়া টেলিফিল্ম সমুহ ‘আশার মুখে ছাই’, ‘পাগলী মা’, ‘১ ঝাঁড়ের বাঁশ’, এবং ‘স্বপ্নের যৌতুক’ ইত্যাদি। তিনি মঞ্চ নাটকের জন্য স্ক্রিপ্ট না করে সরাসরি যে সমস্ত নাটক বা টেলিফিল্ম শুটিং স্পটে হাজির করেছেন। তা হলো- ‘বিষাক্ত ফুল’, ‘সুঁতো কাটা ঘুড়ি’, ‘প্রানো সই’, ‘মালা কার লাগিয়া গাথী’, ‘দরদী’, ‘আতা গাছের তোতা পাখি’, ‘মাইকওয়ালা’, ‘বনমালী’, ‘হায়রে প্রেম হায়রে ভালবাসা’, ‘ভরা নদীর বাঁকে’, ‘সোনা বন্ধুরে’, ‘গানের গুরু’, ‘শাপলা ফুলের মালা’, ‘মেঘের ভেলা’, ‘পরদেশী মেঘ’ ইত্যাদি।
সিংড়া উপজেলায় রানা প্রকাশনী’র গণগ্রন্থাগারের এক আয়োজনে গত ২৫সেপ্টম্বর-২০১৬ তে ১৭টি নাটকের উপর তাঁকে ১ম সম্মাননা বা এ্যাওয়ার্ড দিয়েছিল। তিনি গুণী ব্যক্তিগনদের হাত থেকে এ্যাওয়ার্ড পেয়ে নিজেকে অত্যন্ত গর্বীত মনে করেন। সুদক্ষ নির্মাতার এমন এই সম্মানের পাশাপাশি সিংড়া প্রেস ক্লাবের সদস্য পদ ও চলন বিল ফেসবুক সোসাইটি নামক এক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সম্পাদকের পদমর্যাদায় তিনি অবস্হান করছেন। আবারও বললেন, কবিতা দিয়েই লেখালেখি শুরু, মাধ্যমিক স্কুল থেকে বাংলায় অনার্স পর্যন্ত কবিতা গল্পের চর্চা থেকেই আজ চিত্র পরিচালক ওস্তাদ সোহেল খানের নির্দেশনায় অনেক কার্যক্রমে ব্যস্ত রয়েছেন। কবিতা আবৃত্তির এক পরিষদ অনির্বাণ সাহিত্য সংস্কৃতি থেকে সম্মাননাও পেয়েছেন। সিংড়া উপজেলার এই ব্যক্তিকে নাট্য গুরু হিসাবে আক্খায়িত করতে সবাই যেন পছন্দ করে। খুব দুঃক্ষ প্রকাশেই তিনি বলেন, প্রেয়সীর আচলের বিষাক্ত ছোবলে ক্ষত বিক্ষত দেহ নিয়ে সৰ্ব্বত্যাগী জ্ঞান তাপস উদাসীনতায় বৈরাগী জীবন বেশে রয়েছেন। অর্থাৎ বিয়ের পিড়িতে বসা যে তাঁর হলো না। তবে কচি কাঁচাদের সঙ্গেই বেশ আনন্দ, উল্লাসে নিত্য দিন অবসরে পার করছেন।
তিনি নজরুল ইসলাম তোফাকে বলেন, সম্প্রতি ভয়াবহ বণ্যাকে কেন্দ্রবিন্দুতে এনে তাঁর নিজস্ব পরিকল্পনায় নির্মিত ‘বেঁদনার ঢেউ সিংড়া’ একটি প্রামান্যচিত্র করেন। যা নাটোর জেলা সহ বিশ্বের দরবারে খুব আলোচিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি ‘ভোর হোল দোর খোল’ নাট্য সংঘের প্রতিষ্ঠিত সভাপতি। মিডিয়াতে আসার ভবিষ্যত উদ্দ্যেশ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুপ্তপ্রতিভায় অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাকে অবশ্যই মিডিয়াতে প্রকাশ করা এবং তা সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য যেন কল্যান হয় সেটিই মুল উদ্যেশ্য। লাক্ষো কোটি ভক্তগনের মাঝে তাঁরই সুশীল নির্মাণ শৈলী, অভিনয়, ফ্যাশন, স্ট্যাইল, রুচিবোঁধ আর জ্ঞানে পরিধি নিকাশের জায়গা যেন সমাজে হয়। নতুন নতুন কাজের পরিবেশ প্রতিনিয়ত যেন আসে সে আশাই শুধু করেন।