রবিবার ● ২৯ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » পার্বত্য অঞ্চল লামা’র কয়লা খনি হতে পারে জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম ক্ষেত্র
পার্বত্য অঞ্চল লামা’র কয়লা খনি হতে পারে জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম ক্ষেত্র
লামা প্রতিনিধি :: বান্দরবানের লামা উপজেলার কয়লা খনি হতে পারে জাতীয় অর্থনীতিতে বিশাল সম্ভাবনার অন্যতম ক্ষেত্র। উপজেলার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ছৌলুম ঝিরিতে প্রায় ১১ হাজার একর পাহাড়ি জায়গার ওপর রয়েছে এ কয়লা খনিটি। ইউনিয়ন সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান। শুধুমাত্র অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এখনো আলোর মূখ দেখেনি কয়লার এ খনিটি। খনি থেকে কয়লা আহরনের উদ্যোগ নিলে জাতীয় অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখবে; তেমনি উপজেলার শত শত বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাই খনি থেকে কয়লা আহরনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলাবাসী।
জানা গেছে, বান্দরবান জেলার সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপূর লামা উপজেলা তথা সাবেক মহকুমায় কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। তাই এতদ্বঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ শ্রমজীবি ও বেকার রয়েছে। তাদের জীবনজীবিকা পাহাড়ের বাঁশ, কাঠ, জ্বালানী কাঠ ও জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। ১৯৮১-৮২ সালের দিকে স্থানীয় কাঠুরিয়া কাঠ, বাশঁ ও লাকড়ি আহরণে গেলে ছৌলুম ঝিরিতে কয়লার খনিটি দেখতে পায়। পাহাড়ি এলাকায় নদী, ছড়া, ঝিড়ি ও খাল হচ্ছে মানব চলাচলের অন্যতম মাধ্যম। আর নদী পথ দিয়ে গেলেই ছৌলুম ঝিরিতে দেখা যায় ঝিরির দু’পাড়ে ভাঁজে ভাঁজে ভাসমান কয়লা। প্রায় দুই মাইল এলাকা জুড়ে এ কয়লার অস্থিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। স্থানীয় অনেকেই ওই কয়লা সংগ্রহ করে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করছে অহরহ। এইভাবে শতাধিক বৎসর ব্যবহার করলেও এ কয়লার কোন ঘাটতি হবেনা বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন (৬০) বলেন, কয়লার খনির পাশে আমার জায়গা রয়েছে। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের শাসন আমলে জ্বালানী ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ওই কয়লা খনিটি পরিদর্শন করতে যায়। খনি পরিদর্শনকালে কর্মকর্তারা খনিতে ভাসমান কয়লার মান অত্যান্ত ভাল ও জাতীয় মানের বলে জানান। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে উপজেলা সদর থেকে রুপসীপাড়া সদর পর্যন্ত পিচঢালা রাস্তা হয়েছে এবং ইউনিয়ন সদর থেকে মংপ্রু পাড়া পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। আর মংপ্রু পাড়া থেকে খনির দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। খনি থেকে সরকারী উদ্যোগে কয়লা আহরণ করলে একদিকে বিশাল অংকের অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা হবে এবং পিঁছিয়ে পড়া পাহাড়ি এলাকার শতশত বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে ছৌলুম ঝিরির কয়লা খনি এলাকার মো. শফিকুল আলম (৬৫) জানান, ২০১৩ সালের জুলাই মাসের দিকে তেল গ্যাস অনুসন্ধান সংস্থা বাপেক্স কর্মকর্তারা খনিটি পরিদর্শন করেন। বাপেক্স কর্মকর্তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে জানাবেন বলে এলাকাবাসীকে আশ্বস্থ করে যান। শুধু বিভিন্ন সংস্থা কয়লা খনিটি পরিদর্শন করে যান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। সংরক্ষিত কয়লার খনিটি সরকারী উদ্যোগে অধিগ্রহণ করে কয়লা আহরণের কাজ শুরু করতে অনুরোধ জানান তিনি। তাছাড়া ভাসমান কয়লা হওয়ায় অন্যান্য খনি থেকে এ খনিতে কয়লা আহরণের খরচ কম হবে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নাংক্রাত মুরুং বলেন, কয়লা খনিটি এখনো সুরক্ষিত আছে। তাছাড়া জায়গাটি খাস। মৌজা হেডম্যান ও কারবারীদের নিয়ে আমরা খনিটিকে রক্ষনাবেক্ষণ করে যাচ্ছি। তাই দ্রুত এ খনি থেকে কয়লা উত্তোলনে সরকারের উদ্যোগ অতিব জরুরি।
লামা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহিদ আখতার বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। আমি খনির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরে আনার চেষ্টা করব। আমি মনে করি, পাশ্ববর্তী মহেশখালী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অন্যতম উৎস হতে পারে এই কয়লার খনিটি। বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব প্রশাসনকে নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
আপলোড : ২৯ নভেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : রাত ১১.১০মিঃ