মঙ্গলবার ● ২১ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » কৃষি » সিলেটে শীতকালীন সবজি চাষ শুরু
সিলেটে শীতকালীন সবজি চাষ শুরু
সিলেট প্রতিনিধি :: (৭অগ্রহায়ণ ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১২.৪২মি.) ২০১৭-১৮ মৌসুমে সিলেট জেলায় বিভিন্ন জাতের রবি ফসলের বীজের চাহিদা সোয়া ৯ হাজার মেট্রিন টন। ২১ জাতীয় রবি ফসলের জন্য সিলেট অঞ্চলে বীজের প্রয়োজন ৯ হাজার ২৯ দশমিক ২৪৪ মেট্রিক টন। যার বেশির ভাগ যোগান দেবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন।
এরপর বেসরকারী, কৃষক ও প্রণোদনার মাধ্যেমে এসব বীজ সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
চাষিরা জানান, শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগেই। যারা পিছিয়ে পড়েছেন তারা এখন চাষে তোড়জোড় শুরু করেছেন। তবে চাষিরা বলেন, সবজি চাষে এখন খরচ বাড়ছে। কীটনাশক, সার, শ্রমিক, সেচ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন। বন্যায় বোরো ফসল ক্ষতি হওয়ার পর এবারও অনেক চাষী আগাম জাতের টমেটো, বেগুন, বাধাঁকপি, ফুলকপির বীজ বপন করেছিলেন।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা যায়, রবি মৌসুমে উৎপন্ন ফসলের মৌসুম হিসেবে পরিচিত। এ মৌসুমের শুরু আর্দ্র জলবায়ু মৌসুমের শেষে অর্থাৎ নভেম্বর মাসে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহের বিরতি শুরু হলে এবং অব্যাহত থাকে মার্চ মাসের শেষাবধি। শুষ্ক ও রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া এই মৌসুমের বৈশিষ্ট্য, কিন্তু শুরু ও শেষে উষ্ণতা থাকলেও মধ্যবর্তী ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই সময়কাল যথেষ্ট ঠান্ডা। রবি শস্য চাষের গয়পয়তা ব্যাপ্তিকাল উত্তর-পূর্ব অংশে ১৪০-১৫০ দিন হয়।
সিলেটে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেটের মোট বীজের চাহিদার ৬ হাজার ২ ত ১৯ দশমিক ৩ মেট্রিক টন সরবরাহ করা হবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন থেকে। তারমধ্যে আলু ১ হাজার ৩ শত ৫০ মেট্রিক টন, বোরো হাইব্রিড ৩০, বোরো উফশী ২ হাজার ৩ শত ৫৮, ভূট্টা ৩, গম ৬৬.৫০, সবজী ৫, সরিষা ১০.৫০, ছোলা .৫০, মসুর .২০, মাসকলাই ৫.৫৩, মুগ .৫০, পিঁয়াজ .৩০, ধনিয়া ১ মেট্রিক টন।
এরপর বেসরকারী ভাবে সরবরাহ করা হবে ১ হাজার ৪ শত ৬৪ দশমিক ২ মেট্রিক টন। তারমধ্যে আলু ১ হাজার ২ শত, বোরো হাইব্রিড ৪২, বোরো উফশী ১৫, ভূট্টা ১, সবজী ১ শত ২, সরিষা ১, ছোলা .৬০, মসুর .৬০, মাসকলাই .৩০, পিঁয়াজ .৬০, রসুন ২৮.৬০, ধনিয়া ৭, মরিচ ২.৮০, গর্জন তিল .২০, বাদাম ৫ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। এররপ কৃষক পর্যায় থেকে মোট ১ হাজার ২শত ৯৫ দশমিক ৩২ মেট্রিক টন। এরমধ্যে বোরো স্থানীয় ৪শত ৪০ মেট্রিক টনের পুরোটাই স্থানীয় কৃষক পর্যায় থেকে সরবরাহ করা হবে।
এছাড়া মিষ্টি আলু (কাটিং) ১ শত ৩৭ টন এবং ফরাস ১ শত ৫৩ মেট্রিক টনের পুরোটাই স্থানীয় কৃষক পর্যায় থেকে সরবরাহ করা হবে। এছাড়া বোরো উফশী ৩০, আলু ৬০, সবজি ২.৫০, সরিষা ১, মাসকলাই .৫০, অড়হর .০৩৪, ধনিয়া .৬৫, মরিচ .২০, গর্জন তিল .১৩ মেট্রিক টন স্থানীয় কৃষক পর্যায় থেকে সরবরাহ করা হবে। প্রণোদনা মাধ্যেমে ৬১ মেট্রিন টন বীজ সরবরাহ করা হবে। তারমধ্যে বোরো উফশী ২৫, ভুট্টা ১, গম ২.৫০, সবজি .৫০, সরিষা ৫.৫০, মাসকলাই ০.৫০, মুগ ১ মেট্রিক টন সরবরাহ করা হবে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার রুইগড় গ্রামের সবজি চাষী কুনু মিয়া বলেন, শীতের আমেজ শুরু হয়েছে সে কারণে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ করছি। তিনি আরো বলেন, দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে আমাদের সবজি চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আগাম জাতের চিচিঁঙ্গা, ঝিঁঙ্গার আবাদ শুরু করেছি। বৃষ্টি আর না হলে লাভবান হতে পারি।
সিলেট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. কোহিনূর বেগম বলেন, আমাদের সদরে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ৬০০ মেট্রিক টন বীজ পেয়েছি। এরমধ্যে বেশীর ভাগ বিতরণ করা হয়েছে। আর বাকিগুলো কয়েকদিনের মধ্যে সরবরাহ করে বিতরণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বন্যায় সিলেটে বোরো ফসলের ক্ষতি হওয়ায় সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করে। এসব প্রকল্পের আওতায় আমরা ২ হাজার ৪ শত ১০ জন কৃষককে ৫ কেজি বীজ ও দুই ধরণের সার ৩০ কেজি এবং ১ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়।
এছাড়া বীজ বিনিময় প্রকল্পের মাধ্যেমে কৃষকদের সহায়তা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শষ্য নিবিড়তা প্রকল্পের আমরা কৃষকদের সহায়তা করেছি।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবুল হাসেম বলেন, স্থানীয় কৃষকের কাছ থেকে আমাদের যে বীজ গুলো সংগ্রহ করার কথা সেগুলো বেশীর ভাগ ছাড়া রোপন হয়ে গেছে। এছাড়া বেসরকারী ভাবে বেশীরভাগ বীজ সরবরাহ হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের কাছ থেকে আমাদের চাহিদা পত্রের বেশীর ভাগ বীজ পেয়ে গেছি। এই বীজগুলো আমরা সরাসরি সরবরাহ করি না। এগুলো ডিলারদের মাধ্যেমে বিতরণ করা হয়। আর প্রণোদনার মাধ্যমে যে বীজগুলো আমরা সরবরাহ করি। তার বেশির ভাগ বিতরণ কার হয়ে গেছে।