শুক্রবার ● ২৪ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » নওগাঁর দুবলহাটী রাজবাড়ীটি প্রায় ধ্বঃসের দ্বারপ্রান্তে
নওগাঁর দুবলহাটী রাজবাড়ীটি প্রায় ধ্বঃসের দ্বারপ্রান্তে
সুদাম, নওগাঁ প্রতিনিধি :: (১০ অগ্রহায়ন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.০৩মি.) রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নওগাঁ জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দুবলহাটী রাজবাড়িটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন রাজবাড়িটি ছিল পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র। নওগাঁ শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে নওগাঁর ঐতিহ্যবাহি দুবলহাটি রাজবাড়ি। প্রায় দুইশ বছরের প্রাচীন এই রাজবাড়িটি। সূত্রে জানা গেছে, রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী ও তার ছেলে রাজা কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরীর সময় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় রাজ ষ্টেটের। তখন তাদের বার্ষিক আয় ছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকা। ৫ একর এলাকা জুড়ে বিশাল প্রাসাদ। আর প্রসাদের বাইরে ছিল দিঘী, মন্দির, স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয়, ১৬ চাকার রথসহ বিভিন্ন স্থাপনা। রাজ প্রাসাদের সামনে রোমান স্টাইলের বড় বড় পিলারগুলো রাজাদের পরিচয় বহন করে। ১৮৬৪ সালে রাজ পরিবারের উদ্যোগে একটি স্কুল স্থাপন করা হয়। পরবর্তিতে স্কুলটি নামকরণ হয় রাজা হরনাথ উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলটিতে ইংরেজী পড়ানো হতো। প্রধান শিক্ষক ছিলেন একজন ইংরেজ। রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর প্রজা নির্যাতনের অনেক কাহিনীর পাশাপাশি আছে জনহিতকর ও সামাজিক কাজের অবদান। প্রতি বছর ষ্টেটের খরচে ৫ জন করে গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের লেখা-পড়ার ব্যবস্থা ছিল। ইতোমধ্যে দুর্বৃত্তরা প্রাসাদের লোহর বিম, ইট, দরজা-জানালা, কড়ি-বর্গা খুলে নিয়ে গেছে। সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে জানা যায়, রঘুনাথ নামের এক ব্যক্তি লবণ ও গুড়ের ব্যবসা করতেন। তিনি দীঘলি বিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত খয়রা নদী দিয়ে নৌকা যোগে দুবলহাটিতে ব্যবসার জন্য আসেন (বর্তমানে নদীর অস্তিত্ব আর নেই)। তিনি প্রায় প্রতিরাতে স্বপ্ন দেখতেন তাকে কে যেনো বলছে ‘তুই যেখানে নৌকা বেঁধেছিস সেখানে জলের নিচে রাজ রাজেশ্বরী দেবীর প্রতিমা আছে। সেখান থেকে তুলে স্থাপন কর।’ রঘুনাথ একদিন ভোর বেলা জলে নেমে দেখলেন সত্যিই সেখানে রাজ রাজেশ্বরীর প্রতিমা আছে। তিনি প্রতিমাটি পানি থেকে তুলে একটি মাটির বেদী তৈরি করে প্রতিষ্ঠা করলেন। এরপর তার ব্যবসায় ব্যাপক উন্নতি হতে থাকে। রঘুনাথের বিত্ত-বৈভবের খবর পৌঁছে যায় মোগল দরবারে। মোগল দরবারের নির্দেশে তাকে ডেকে পাঠানো হয় মুর্শিদাবাদ নবাবের দরবারে। নবাব তাকে রাজস্ব প্রদানের নির্দেশ জারি করেন। তিনি নবাবকে জানান তিনি যে এলাকায় থাকেন সেখানে শুধু জল আর জল। কোন ফসল হয়না। তবে বড় বড় কৈ মাছ পাওয়া যায়। বিষয় বুঝতে পেরে নবাব তাকে প্রতি বছর রাজস্ব হিসাবে ২২ কাহন কৈ মাছ প্রদানের নির্দেশ দেন। দুবলহাটি রাজ প্রাসাদে সাড়ে ৩০০ ঘর ছিল। ছিল ৭ টি আঙ্গিনা। প্রাসাদের ভিতর কোনটি ৩ তলা আবার কোনটি ছিল ৪ তলা ভবন। রাজা কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরীর নাতি ও কুমার অমরেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরীর ছেলে দুবলহাটি রাজ পরিবারের ৫৪তম পুরুষ রবীন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী (৭২) জানান, দুবলহাটীর জমিদারী ছিল সিলেট, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও ভারতের কিছু অংশে। একটি গোল্ডেন সিলভার ও একটি আইভরির তৈরি সিংহাসন ছিল। বৃটিশরা সিংহাসন দুটি নিয়ে যায়। হরনাথ রায় চৌধুরী প্রথম রাজা খেতাব পেয়েছিলেন। রাজা কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরী বাবা রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী অবসাদ যাপনের জন্য ‘রনবাগ’ নামে একটি বাগানবাড়ি তৈরি করেছিলেন। প্রাসাদের ভিতরে ও বাইরে ছিল নাটক এবং যাত্রা মঞ্চ। নিয়মিত নাটক ও যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হতো। দুবলহাটি রাজবাড়িটি একটি ঐতিহ্যবাহি রাজবাড়ি। ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি এখন নানা কারনে ধংসের দ্বারপ্রান্তে । কিন্তু এখনো এই স্থাপনাটি রক্ষা করলে দেশের একটি অন্যতম পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।