সোমবার ● ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » বাঁশের সাকো দিয়ে ২ ইউনিয়ন বাসির চলাচল
বাঁশের সাকো দিয়ে ২ ইউনিয়ন বাসির চলাচল
মোঃ আবুল কাশেম,বিশ্বনাথ ( সিলেট ) প্রতিনিধি :: ২১ সেপ্টেম্বর : খাজাঞ্চী নদী ৷ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অন্যতম একটি প্রধান নদী ৷ এককালে নদীটি ছিল তীব্র খড়স্রোতা ৷ এখন এটি প্রায় মৃত ৷ উপজেলার রামপাশা ও খাজাঞ্চী ইউনিয়নের সংযোগস্থল আশুগঞ্জ বাজার এলাকায় প্রায় ১৫০ ফুট প্রস্থের নদীর উপর একটি সেতু নির্মানের দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের ৷
সেতু নির্মান না হওয়ার ফলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকার নয়টি গ্রামের প্রায় ছয় হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত নিজেদের প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েই পারাপার করতে হয় ৷ এতে প্রতিনিয়তই ঘটে অনেক দুর্ঘটনা ৷ ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ ৷ আর সব চেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরাই ৷
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুই ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনকারী সাঁকোর স্থলে একটি সেতু নির্মিত হলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি বাড়ত শিক্ষিতের হার ৷ কিন্তু সংশিস্নস্ট কর্তৃপক্ষ ও এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এব্যাপারে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছেন না ৷ রোগীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসিকে ৷ তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পারাপারের ক্ষেত্রে অনেক সময় অনেক শিক্ষার্থীর হাত থেকে বই-খাতা নদীর পানিতে ছিটকে পড়ে হচ্ছে নষ্ঠ ৷
এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, প্রতি বছর সাঁকোটি নির্মান করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয় ৷ আর তা এলাকাবাসি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রদান করা চাঁদা থেকে নির্মান করা হয় ৷ সরকারি কোন সহযোগীতা না থাকায় এলাকার গরীব জনসাধারণের জন্য তা কষ্ঠকর বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ৷ আর্থিক সংকঠের কারণে তাই সাঁকো নির্মান করা হয় শুধু মাত্র সুরু বাঁশ দিয়ে ৷ তাতে বাঁশের ছাটাই দেওয়া সম্ভব হয় না ৷ ছাটাই না থাকলে ঝুঁকি আরোও বেড়ে যায় ৷
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিলপার, বাবুনগর, মাওনপুর, তেঘরী, কান্দিগাঁও, জয়নগর, নোয়াপাড়া, ভাটপাড়া, তেলিকোনা (একাংশ) গ্রামের জনসাধারণকে খাজাঞ্চী নদীতে থাকা সাঁকো পার হয়ে আসতে হয় আশুগঞ্জ বাজারে, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ নিজেদেও গত্যব্যস্থানে ৷ প্রতি শনি ও মঙ্গলবার আশুগঞ্জ বাজারে হাট থাকে ৷ তখন একদিনে প্রায় দুই হাজার মানুষকে সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হয় ৷ এছাড়া ওই এলাকার প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে সাঁকো ব্যবহার করে আসতে হয় ‘আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, দোহাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হলিচাইল্ড কিন্টার গার্ডেনে’ শিক্ষার্জন করতে ৷
এলাকার রংমালা বিবি বলেন, নাতী-নাতনিরা একা একা সাঁকো পারাপারে ভয় পায় বলেই প্রতিদিন তাঁদের সঙ্গে পরিবারের বড় কাউকে আসতে হয় ৷ আবার স্কুল ছুটির পর আবারও কাউকে এসে নিতে হয় ৷ তা না হলে ওরা স্কুলেই যায় না ৷
দোহাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী গোবিন্দ মালাকার (৪র্থ), ছাবিয়া বেগম (৩য়), সীমানত্মা সীমা (৪র্থ), রাজন দাশ (৫ম) বলেন, প্রতিদিন আমাদেরকে অন্যের সাহায্য নিয়ে সাঁকো পারাপারের হতে হয়৷ অনেক সময় আবার একা একাই ৷ এক্ষেত্রে অনেকের (সহপাঠী) হাত থেকে বই-খাতা ছিটকে পানিতে পড়ে নষ্ঠ হয়ে যায়৷ অনেকে (শিক্ষার্থী) আবার সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকারও হয় ৷
আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিৰার্থী জুয়েল আহমদ (৯ম), রুহুল আমীন (৭ম), মমতা দাশ (৬ষ্ঠ) ও হলিচাইল্ড কিন্টার গার্ডেনের শিক্ষার্থী আবুল হোসেন (৭ম), ইয়াসমিন বেগম (৬ষ্ঠ) বলেন, আমাদের কথা (শিক্ষার্থী) চিন্তা করে হলেও এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরী ৷ সেতু নির্মান করা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আরোও বৃদ্ধি পাবে ৷ এলাকাবাসীর দুর্ভোগও কমে যাবে ৷
সবজি ব্যবসায়ী সমুজ আলী বলেন, বিলপারসহ ওই গ্রামগুলো ব্যাপক পরিমাণ সবজি উত্পাদন করা হয় ৷ তা বিক্রি করতে হলে তাই ঝুঁকি নিয়ে ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ের পার করতে হয় ৷ এতে আমাদের দুর্ভোগ বেড়ে যায় ৷ এখানে সেতু হলে আমাদের কষ্ঠও কমে যাবে ৷
কৃষক আবদুল হক বলেন, গবাদি পশুরা অসুস্থ হলে তাদের চিকিত্সা করাতে আমাদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় ৷ চাষাবাদের সময় বীজ-সার ও হালি (ধানের চারা) বহনের ক্ষেত্রেও আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই ৷
আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আতিকুর রহমান বলেন, আশা করি কিছু দিনের মধ্যে আমাদের বিদ্যালয়টি কলেজে উনি্নত হবে ৷ এতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে ৷ ফলে সাঁকো দিয়ে মানুষের চলাচলও বৃদ্ধি পাবে ৷ তাই জনগুরুত্বে দিক বিবেচনা করে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা জরুরী ৷
বিলপার গ্রামের মখলিছ আলী ও পল্লী চিকিত্সক সারোয়ার হোসাইন বলেন, একটি সেতুর অভাবে আমাদের এলাকার ওই গ্রামগুলোর মানুষদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ৷ বিশেষ করে কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে চিকিত্সার জন্য নিয়ে যেতে আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয় ৷
রামচন্দ্রপুর গ্রামের সেবুল মিয়া বলেন, সাঁকোর পরিবর্তে এখানে সেতু নির্মাণ করা হলে দুইটি ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকাও উন্নত হবে ৷ আর এলাকাবাসীকেও নিজেদের মৌলিক ও নাগরিক সুবিধা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না৷
রামাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার খান বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিটি পূরণের জন্য খাজাঞ্চী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য সংশিস্নস্ট কর্তৃপক্ষের সাথে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ করে যাওয়া হচ্ছে ৷ সকলের সার্বিক সহযোগীতায় আশা করি শীঘ্রই এলাকাবাসীর দাবি পূরনে প্রদৰেপ গ্রহন করা হবে ৷
খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম সিদ্দিকী বলেন, উপজেলা ও জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করতে হলে বাধ্যতামূলক ভাবে ওই গ্রামগুলোর বাসিন্দাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হতে হয় ৷ শিক্ষার্থী ও রোগী পারাপারের ক্ষেত্রেও এলাকাবাসীকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ ৷ এখানে একটি সেতু নির্মান অত্যনত্ম জরুরী ৷ আর তা যত দ্রুত সম্ভব হবে ততই লাভবান হবেন এলাকাবাসী ৷
উপজেলা স্থানীয় প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম শওকত বলেন, সেতু নির্মাণের প্রসত্মাবটি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে ৷ প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় থেকে পাশ হলে আমাদেরকে জানানো হবে ৷ এরপর সেতু নির্মাণের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে শুরু হবে ৷
স্থানীয় সাংসদ ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া বলেন, পর্যায়ক্রমের উপজেলার উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হবে ৷ এর জন্য প্রয়োজন সর্বমহলের সহযোগীতা ৷