শনিবার ● ২ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » লামায় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে মসজিদের জমি দখলের অভিযোগ
লামায় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে মসজিদের জমি দখলের অভিযোগ
লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: (১৮ অগ্রহায়ন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৩৮মি.) বান্দরবানের লামায় পুলিশের বিরুদ্ধে মসজিদের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগিরা প্রতিকার চেয়ে জজকোর্টে মামলা দায়ের করেছে। কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ক্যাম্প ইনচার্জ ‘ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সাইন বোর্ড নামিয়ে ‘ক্যায়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি জামে মসজিদের সাইন বোর্ড লাগিয়ে মসজিদরে নাম পরিবর্তন করে জমি দখলের চেষ্টা করছে। মসজিদের নাম পরিবর্তন করে নিজের ইচ্ছে মত মসজিদের অর্থ ব্যবহার ও দোকান ভাড়া হাতিয়ে নেয়ার হীন চেষ্টায় মসজিদের নাম পরিবর্তন করায় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্স পরিচালনা ও উন্নয়ন কমিটির পক্ষে সহসভাপতি এবং ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির নেতা। মামলা নং ৯৮/২০১৭। মসজিদের জায়গা দখল করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেছে এলাকার মুসল্লীগণ।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, ১৯৭২-৭৩ সালে ডলুছড়ি মৌজার কেয়াজুপাড়া বাজারে এলাকাবাসি জামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। জামে মসজিদ কমিটির অনুকুলে ৫ একর জমি বন্দোবস্তি পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়। মসজিদ পরিচালনা কমিটির পক্ষে সম্পাদক কর্তৃক আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩০৩ নং ডলুছড়ি মৌজায়-উত্তরে ক্যাম্পের সিমানা, দক্ষিনে, পোলুখাল, পূর্বে বন্দবস্তি জমি, পশ্চিমে সরকারি রাস্তা এই চৌহর্দ্দি মুলে ৫ (২ একর ১ম ও ৩ একর ২য় শ্রেণি) একর জমি মসজিদের নামে বন্দোবস্তিও তৌজিভুক্ত হয়। বন্দোবস্তি মোকাদ্দমা নং-৩২০/৮৬-৮৭।
স্থানীয় জনসাধারণ, সরকারি বেসরকারি অনুদানে পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সহায়তায় ২০০৮ সালে মসজিদের জায়গায় একটি মার্কেট তৈরি করে মসজিদের অনুকুলে ২৫টি দোকান প্লট মাসিক ভাড়াতে সালামী বাবদ অগ্রিম টাকা নিয়ে মসজিদটির পাকা ভবন নির্মান করেন।
এলাকায় শিক্ষিত মানুষের অভাবে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে সম্মান দেখিয়ে ডলুছড়ি কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মনোনিত করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে মসজিদটি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করে আসছিলেন এলাকাবাসী। আইসির পদটি বদলীযোগ্য হওয়ায় ২১ মে ২০০২ সালে আবেদনের প্রেক্ষিতে ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমল্পেক্স উন্নয়ন নামে কমিটির স্থানীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক লি: লোহাগাড়া শাখায় হিসাব নম্বর ২০৫০১৫৬০২০১২২৩৭১ খোলা হয়। এ হিসাব নম্বরে দোকান ভাড়া জমা করা হয়।
কিন্তু হঠাৎ করে পুলিশী প্রভাব খাটিয়ে ১৫ আগস্ট’১৬ তারিখে স্থানীয় জন সাধারণ, মুসল্লি, ইমাম, পরিচালনা কমিটিকে না জানিয়ে রাতের আধারে তপসিলভুক্ত জায়গায় বর্তমান মসজিদটিতে ’ডলুছড়ি কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ’ নামের সাইন বোর্ডটি নামিয়ে ‘কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি জামে মসজিদ’ নামকরন করে মসজিদের জমি দখলের অশুভ পায়তাঁরার লক্ষ্যে এমন কাজ করছেন কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্প ইনচার্জ।
অভিযোগে আরো উল্লেখ রয়েছে, আইসি মসজিদের দোকান ভাড়ার টাকা ও অন্যান্য আয় ব্যাংক-এ জমা না করে নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাত ও মসজিদের জায়গা জবর দখলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে মসজিদের নাম পরিবর্তন করেন। মসজিদের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ‘ডলুছড়ি কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ’ বাদ দিয়ে সেখানে ‘কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি জামে মসজিদ’ নাম করণের হীন প্রয়াসকে বে-আইনি ও পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার বলেও উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় যেকোন সময় পুলিশের সাথে মুসল্লী ও স্থানীয়দের দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ প্রাণ নাশের সম্ভাবনা থাকায় সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে শান্তি প্রিয় এলাকাবাসী।
এদিকে লামা থানার পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিকে বলেন, মসজিদটি কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উদ্যোগেই স্থাপিত হয়। মসজিদের ঈমাম ও মোয়াজ্জিনের বেতনভাতাও ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশের বেতন থেকে দেয়া হয়। মাঝখানে বাজারের কিছু ব্যবসায়ী নিয়মিত নামাজ আদায়ের সুত্রে মসজিদ পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। তারা মসজিদের আয় বাড়ানোর জন্য সড়কের পাশে কিছু দোকানঘর তৈরি করে ভাড়া দেয়ার ব্যবস্থা করে। এসব দোকানের ভাড়া আদায় ও জমা করার ক্ষেত্রে নয়-ছয় করা শুরু হয়। একারনে আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ চাওয়া হলে তারাই ‘কেয়াজুপাড়া পুলিশফাঁড়ি জামে মসজিদ’ নাম পরিবর্তন করে ‘ ডলূছড়ি কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেন। মসজিদের নামে জমি বন্দোবস্তির যে সকল কাগজপত্র দেখানো হচ্ছে তাও সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।
সরেজমিনে মসজিদের নাম পরির্বতনের সত্যতা পাওয়া যায়। শুরু থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মসজিদটি ’ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ’ নামে পরিচালিত হয়ে আসছে। ২৫টি প্লটের দোকান মালিকরা ডলুছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্যবসা করে আসছে।
চুক্তিপত্রে পূর্বের আইসি (পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্প ইনচার্জ) এর স্বাক্ষরও রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় ইহার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে বলে এলাকার সচেতন মহল জানিয়েছেন।