বুধবার ● ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » পাবনা » ঈশ্বরদীতে ব্যাঙের ছাতার মত ইট ভাঁটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে : দুষিত হচ্ছে পরিবেশ
ঈশ্বরদীতে ব্যাঙের ছাতার মত ইট ভাঁটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে : দুষিত হচ্ছে পরিবেশ
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি :: (১৩ পৌষ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৩৫মি.) দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার এবং লিচুর রাজধানী ও সবজি প্রধান এলাকা বলে খ্যাত ঈশ্বরদীর বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাঙের ছাতারমত ইট ভাঁটা তৈরী হয়েছে। এ ভাঁটা গুলোর বেশীরভাগই তৈরী করা হয়েছে আখ,ধান,সবজিসহ বিভিন্ন ফসল,লিচু ও ফলবাগান এলাকার জমিতে। ইট তৈরী করতে গিয়ে ভুমির যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইট বহণের গাড়ি ব্যবহারে নষ্ট হচ্ছে শশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক ও রাস্তা। একদিকে ফসলহানি হচ্ছে,অন্যদিকে মারাত্নকভাবে দুষিত হয়ে ভারসাম্যহীন হচ্ছে পরিবেশ। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকার প্রায় চল্লিশটি ভাঁটার বেশীর ভাগ ভাঁটাতেই কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ২০১৩ সালের নীতিমালা অনুসরণের কোন বালাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। প্রত্যেকটি ভাঁটায় সরকার অনুমোদিত সাইজের পরিবর্তে ছোট করে ইট তৈরী ও বিক্রি করে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। সবগুলো ভাঁটাতেই সরকার অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে লাখ লাখ বেশী ইট তৈরী করে বহাল তবিয়তে বিক্রি করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব দেখার কেউ নেই।পরিবেশ বিজ্ঞানী,কৃষি বিজ্ঞানী,ফল বিশেষজ্ঞ,বিভিন্ন বিভাগের প্রকৌশলী,চিকিৎসক,ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীদের দেওয়া তথ্য সুত্রে এসব জানাগেছে।
সুত্রমতে, ঈশ্বরদীর সাহাপুর,লক্ষিকুন্ডা,মুলাডুলি ও সাঁড়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতারমত প্রায় চল্লিশটি ইট ভাটা তৈরী হয়েছে। এসব ভাটার বেশীরভাগই ২/৩ ফসলী জমিতে। কোন কোনটা আখের আবাদি জমিতে। কোনটা আমসহ বিভিন্ন ফল বাগান এলাকার ফসলী জমিতে তৈরী করা হয়েছে। এসব কারণে পাবনা চিনিমিলের আখের চাহিদা থাকার পরও প্রতি মৌসুমে আখ সংকটে পড়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই মিল বন্ধ করে দিতে হয়। চলতি আখ মাড়াই মৌসুমেও এর ব্যতিক্রম হবেনা শুধুমাত্র আখ সংকটের কারণে। ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনও প্রতিবছর কমে যাচ্ছে ইট ভাঁটা তৈরী,ভাঁটার নির্গত ধোঁয়া এবং ইট বহণকারী গাড়ির ধোঁয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ধোলার কারণে। একই কারণে এলাকার বসতীদের বসবাস করা দুস্কর হয়ে উঠেছে এবং তারা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এর থেকে রেহ্য়া পাচ্ছেনা। কাট পোড়ানো হচ্ছে বেশীরভাগ ভাঁটাতে। এতে বনাঞ্চল ধবংস হতে বসেছে। কাঠের ধোয়ার কার্বণে ফলনশীল বিভিন্ন গাছ ও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মারাত্নকভাবে। শ্বাসকষ্ট ও এ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। যদিও সরকারী বিধিতে বলা আছে কোনভাবেই ইটভাঁটিতে জ্বালানী কাঠ পোড়ানো যাবেনা। অথচ গাছপালা উজার করে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কাষ্টম বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা ও ভাঁটার মালিকদের সাথে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। আর্থিক লেনদেনের কারণে সরকার শুধু ইঁটভাটা মালিকদের কাছ থেকে প্রতি মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়ে থাকে। এদের কারণে সরকার অন্যান্য বিভাগ থেকেও বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারায়। কর্তা ব্যাক্তিদের নাকি নির্দিষ্ট এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া আছে, যারা নর্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আর্থিক সুবিধা আদায় করে থাকে। একই অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধেও রয়েছে।এ অধিদপ্তরের কর্তা ব্যাক্তিরা নাকি নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন যে,নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ হলেই ছাড়পত্র পেতে সহজ হয়। সরকারের রাজস্ব আদায় ও জনস্বার্থে উল্লেখিত বিষয়ে দূর্ণীতিমুক্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তিদের কর্মকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি প্রয়োজন বলে সুত্রটি মনে করে।