বৃহস্পতিবার ● ১১ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » লামাকে জেলা ঘোষণা করার দাবী
লামাকে জেলা ঘোষণা করার দাবী
লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: (২৮ পৌষ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.০৪মি.) লামা জেলা পূণ:বহাল ও বাস্তবায়নের দাবী এখন গণদাবীতে রুপ নিয়েছে। ‘লামা উন্নয়ন ও জেলা বাস্তবায়ন কমিটি’ নাগরিক ফোরাম, অখন্ডতা লামা রক্ষা পরিষদ ও সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে প্রতিদিন কোন না কোন কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে স্থানীয়দেরকে। এর আগে ১৮ ডিসেম্বর-২০১৭ তারিখে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রীর বরাবর লামা উন্নয়ন ও জেলা বাস্তবায়নে ১৯ দফা দাবী সম্বলিত এক স্মারকলিপি দিয়েছেন লামাবাসী। একই দাবীতে প্রধানমন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতি মন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে প্রতিদিন শত শত গণ আবেদন পাটাচ্ছেন বৃহত্তর সাবেক লামা মহকুমার বাসিন্দারা। দাবীর স্ব-পক্ষে শত ভাগ জনগোষ্ঠি দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ কাতারে যুক্ত হয়ে আওয়াজ তুলছেন ‘সাবেক মহকুমা লামা পূর্ব ঘোষিত স্থগিত জেলা পূন:বহাল চাই।
লামা উন্নয়ন ও জেলা বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব লামা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিকে জানান, এ লক্ষ্যে গঠিত সংগঠনের কার্যক্রম মূলনীতি, আদর্শ ও একটি মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। সংগঠনের মূলনীতির মধ্যে রয়েছে :
১) বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের সাবেক লামা মহকুমাকে প্রশাসনিক জেলায় রুপান্তরের জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, দল, মত নির্বিশেষে সকল মহলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জেলায় উন্নীত করণের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
২) সংগঠনের এই আন্দোলন তথা প্রচেষ্টা হবে (সাবেক মহকুমা) লামার মাটি ও মানুষের সার্বিক উন্নয়ন এবং কল্যাণে নিবেদিত।
৩) এই প্রচেষ্টা কোন দল বা গোষ্ঠির স্বার্থে নহে; শুধুমাত্র লামার মাটিও মানুষের স্বার্থে।
৪) কমিটির প্রত্যেক সদস্যের এই প্রচেষ্টা ও ত্যাগ হবে বৃহত্তর এই অবহেলিত জনপদের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে।
৫) সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হবে “লামা পার্বত্য জেলা”সহ সাবেক লামা মহকুমার অনগ্রসর ও অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের সার্বিক জীবন মানোন্নয়নে; শিক্ষা, যোগাযোগ, নিরাপত্তা, আর্থসামাজিক উন্নতি, প্রাকৃতিক দূর্যোগ-দূর্বিপাকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের নিরাপত্তা ইত্যাদি।
সাবেক লামা মহকুমার বিরাজমান সার্বিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সমুহ চিহ্নিত করে; ১৯ দফা দাবীর মধ্যে রয়েছে : ১) বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সাবেক লামা মহকুমাকে প্রশাসনিক জেলা ঘোষণা ও বাস্তবায়নসহ। ২) মাতামুহুরী নদীর গতি পরিবর্তন ও লামা শহর রক্ষা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ। ৩) লামা মাতামুহুরী কলেজে অনার্স মার্ষ্টাস কোর্স চালুসহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উন্নীত করণ। ৪) লামায় একটি আবাসিক মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা ও চালু করণ। ৫) সাবেক লামা মহকুমা সদরে সিনিয়র সহকারী জজ কোর্ট প্রতিষ্ঠা ও চালু করণ। ৬) লামায় একটি কারাগার নির্মাণ করণ। ৭) লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট নিরষণ করণ। ৮) লামা সরকারি হাসাপাতাল ৫০ শর্য্যা চালু করণ ও ১০০ শয্যায় উন্নীত করণসহ ডাক্তার, জনবল সংকট নিরষণ করা। ৯) লামাকে জেলায় উন্নীত করে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ও লামার গজালিয়কে উপজেলায় উন্নীত করণ। ১০) লামাকে জেলায় উন্নীত করে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা ও জান-মালের নিরপত্তার স্বার্থে লামা উপজেলার আজিজনগর, বনপুর, সরই, আলীকদমের করুকপাতাঝিরি এলাকায় একটি করে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র/থানা প্রতিষ্ঠাসহ লুলাইন, কালোবড়পাড়া, পোপা, সাপেরগাড়ায় নিরাপত্তা বাহিনী; বিজিবি, আরম্প পুলিশসাহেব ও আনসার ক্যাম্প স্থাপন করণ। ১১) লামা উপজেলা পরিষদ ভবন, আবাসিক সরকারি কোয়াটার নির্মাণ করণ। ১২) লামা আদালত ভবন নির্মাণ করণ। ১৩) লামার মিরিঞ্জা পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নসহ ট্যুরিজম পুলিশের ক্যাম্প স্থাপন করণ। ১৪) লামা উপজেলার কুমারী ও সরই এলাকায় প্রাকৃতিক রাবার শিল্প এলাকা প্রতিদষ্ঠা করে এতদসংক্রান্ত অর্থনৈতিক জোন সৃষ্টি করণ। ১৫) লামা উপজেলায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য একটি হীমাগার স্থাপন করা। ১৬) লামায় প্রাপ্ত প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ আহরণ ও উত্তোলন করে দেশের চাহিদা পূরণ ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করণ। ১৭) সাবেক লামা মহকুমার, বন, নদী-খাল, ঝিরি-প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সরকারের প্রদক্ষেপ গ্রহন। ১৮) লামায় একটি কারিগরী, উপজাতীয় আবাসিক হোষ্টেল চালু ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনিষ্টিটিউট স্থাপন ও ১৯) সাবেক লামা মহকুমাকে দূর্নীতিমুক্ত করণের মাধ্যমে সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রমের সু-ফল জনগোষ্ঠির মাঝে পৌঁছে দেয়া।
দাবী আদায়ে শান্তিপূর্ন আন্দোলনকারীরা আরো জানান, লামার মাটি ও মানুষের আপনজন আওয়ামীলীগ সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইল, লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যা শৈ হ্লা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতি মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র আনুকুল্যতায় সাবেক মহকুমা লামাবাসীর প্রাণের দাবী পূরণ করে পূর্বঘোষিত ‘লামা জেলা’ পূন:বহাল ও বাস্তবায়ন হবে।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে লামা উপজেলার সরই ইউনয়িনকে উপজেলায় উন্নীত করণের; সরকারি এক ঘোষণা পাওয়ার পর লামাকে জেলা না করে অন্য একটি উপজেলা করে দ্বি-খন্ডিত করার বিরোধীতা করে স্থানীয়রা ঐক্যবদ্ধ হন। এরই পথ ধরে লামা জেলা পূন:বহালের দাবী জোরদার হয়ে। ১৯৮৪ সালে গঠিত ‘লামা উন্নয়ন ও জেলা বাস্তবায়ন কমিটি’ পূনজ্জীবিত হয় এবং ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। ১৯ দফা দাবী নিয়ে এ কমিটি সরকারে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন করছেন; একই সাথে সভা-সমাবেশ, লিপলেট, পোষ্টার করে বৃহত্তর সবেক লামা মহকুমাকে জেলা ঘোষনা করার স্ব-পক্ষে জনমত গড়ে তুলছেন। দিন যত ঘড়াচ্ছে লামা জেলা পূন:বহাল বাস্তবায়নের আন্দোলনে দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনতার কাতার ততই বড় হচ্ছে।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতি মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি’র একান্ত নজরদারীর মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামণা করেছেন লামা উন্নয়ন ও জেলা বাস্তবায়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ।