মঙ্গলবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » সাঁথিয়া হানাদার মুক্ত দিবস ৯ ডিসেম্বর
সাঁথিয়া হানাদার মুক্ত দিবস ৯ ডিসেম্বর
সাঁথিয়া প্রতিনিধি::আগামীকাল ৯ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সাঁথিয়া হানাদার মুক্ত দিবস৷ ১৯৭১ সালের এদিনে পাবনার সাঁথিয়া থানা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়েছিল৷ মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের পতাকা হাতে নিয়ে এদিন বিজয় উল্লাশ প্রকাশ করেছিলেন৷
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহবানে সারা দিয়ে তত্কালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য আ’লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর নির্দেশে সাঁথিয়া হাই স্কুলের তত্কালীন শিক্ষক রস্তম আলী, তোফাজ্জল হোসেন, কাশিনাথপুর হাইস্কুলের শিক্ষক আয়েজ উদ্দিন প্রমুখ বিশিষ্ট্য ব্যক্তি বর্গ এলাকার ছাত্র সমাজ ও যুব তরণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন৷ যুদ্ধ অনিবার্য এটা অাঁচ করতে পেরে স্বাধীনতাকামী বিশিষ্ট্য জনদের নির্দেশে বর্তমান সাঁথিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে এলাকার ছাত্র যুব তরুণরা সংগঠিত হতে থাকে৷ সাঁথিয়া হাইস্কুল মাঠে এরা প্রশিক্ষণ নিতেও শুরু করে৷ থানার তত্কালীন স্বাধীনতাকামী ওসি মোহাম্মদ আলী এ সময় সুকৌশলে অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করেন৷ সেনাসদস্য কাজী মোসলেম উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন দেন৷ ২৭ মার্চ সাঁথিয়া পশু হাসপাতাল প্রাঙ্গনে যুদ্ধকালীন কমান্ডার নিজাম উদ্দিন রাবি’র ছাত্র নেতা ফজলুল হক, মকবুল হোসেন মকুল, লোকমান হোসেন, রেজাউল করিম, আলতাব হোসেন, আবু মুসা, আবু হানিফ, মোসলেম উদ্দিন, তোফাজ্জল হোসেন, আব্দুল ওহাব, সোহরাব, রউফ, মতিনসহ যুব তরুণ’রা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন৷ দীর্ঘ ৯ মাস সাঁথিয়ার বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, নজরুল ইসলাম (চাদু), আব্দুস সামাদ, দারা হোসেন, শাহজাহান আলীসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষ শহীদ হন৷ এ সময় সাঁথিয়া থানার বিভিন্ন গ্রামের সহস্রাধিক মানুষকে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে৷ এলাকার শত শত যুবতী ও মহিলারা সম্ভ্রম হারান৷ সাঁথিয়ায় পাকসেনারা এলাকায় বহু লোকের ঘর-বাড়ি জালিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও ব্যাপক লুটপাট চালায়৷ ৮ ডিসেম্বর সাঁথিয়ার সকল মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে থানা সদর থেকে ২ কিঃ মিঃ পশ্চিমে নন্দনপুরে পাক হানাদারদের সাথে চূড়ান্ত মোকাবিলায় অবতীর্ণ হয়৷ মুক্তিযুদ্ধাদের তুমুল আক্রমনে টিকতে না পেরে পাকসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়৷ পরে ব্যপক প্রস্তুতি নিয়ে পাক হানাদাররা আবার সাঁথিয়া আক্রমনের উদ্দেশ্য আসতে থাকে৷ মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সাঁথিয়া-মাধপুর সড়কের নন্দনপুর-জোড়গাছার মধ্যবর্তী ব্রীজটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় এবং বাঙ্কার তৈরী করে সেখানেই তারা অবস্থান নেয়৷ সেদিন বীরমুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র বাধার মুখে পাক সেনারা আবার পিছু হটে চলে যায়৷ পরদিন ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া থানা চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে বিজয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সাঁথিয়া থানাকে শত্রু মুক্ত ঘোষণা দেন৷ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে সাঁথিয়া থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য মিলনমেলা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ৷ এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাঁথিয়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি৷ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাড শামসুল হক টুকু এমপি৷ বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দী্রয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল(অব:) হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম৷ বিশাল আয়োজনের অনুষ্ঠানকে ঘিরে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তানসহ এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক উত্সাহ ও উদ্দিপনা লক্ষ্য করা গেছে ৷ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সাঁথিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আ: লতিফ জানান, আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে সাঁথিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্যই এ আয়োজন৷ অনুষ্ঠানটি সফল ভাবে সম্পন্ন করার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে ৷