মঙ্গলবার ● ২০ মার্চ ২০১৮
প্রথম পাতা » গাজিপুর » এখন কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গণ্য করা হয় : গাজীপুরে রাষ্ট্রপতি
এখন কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গণ্য করা হয় : গাজীপুরে রাষ্ট্রপতি
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (৬ চৈত্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৩০মি.) রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে কারাগারকে শাস্তি কার্যকরের স্থান নয়, সংশোধনাগার হিসেবে গণ্য করা হয়। বন্দিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আজ ২০ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার প্রাঙ্গণে কারা সপ্তাহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কারা বিভাগের জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেদের তুলে ধরার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কারাগারের উন্নয়ণের পূর্বশর্ত হচ্ছে পেশাগত দক্ষতা অর্জন। আর তা অর্জনে প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। বর্তমান বিশ্বে কারাগারকে শাস্তি কার্যকরের স্থান নয়, সংশোধনাগার হিসেবে গণ্য করা হয়। বন্দিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কারাগারে আটক বন্দিদের অগ্রহণযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো সংশোধন করে সমাজে স্বাভাবিকভাবে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা যেন কারাগারের ভেতরে জঙ্গি পরিকল্পনা বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে না পরে সে বিষয়ে আপনাদের দৃঢ় মনোবলের পরিচয় দিতে হবে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশই তাদের অপরাধী করে তুলে। আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী মানুষগুলোর নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সমাজে পুনর্বাসন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
কারাগারে কেবল অপরাধী নয়, রাজবন্দি হিসেবে অনেক নেতাকর্মীকেও জেলে কাটাতে হয়। আমাদের জাতির পিতাকেও রাজনৈতিক কারণে ১৪ বছরের অধিক সময় কারাগারে কাটাতে হয়। নেলসন ম্যান্ডেলা তার জীবনের ২৯ বছর নির্জন কারাগারে কাটাতে বাধ্য হন। জাতির দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় আমাদের জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে আমাকেও গ্রেফতার করা হয়। আমি ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ঢাকা কারাগারে বন্দি ছিলাম। তাই কারাগারের জীবন সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতাও কম নয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কারাগারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও বন্দিদের অপরাধ প্রবণতা কমানোর উদ্যোগ সবার অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছে। বিশেষ করে বন্দির হাতকে দক্ষ কর্মীর হাতে রূপান্তরের জন্য কারাগারে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ অন্যতম। কারা শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ বন্দিদের প্রদান করার সিদ্ধান্ত একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। সাজা শেষে কারা শিল্পে নিয়োগের ফলে লব্ধজ্ঞান এবং প্রাপ্ত লভ্যাংশের অর্থ কাজে লাগিয়ে তারা সমাজে পুনর্বাসনের সুযোগ পাচ্ছে। এতে সমাজে অপরাধ করার প্রবণতাও হ্রাস পাবে।
এছাড়া কারাবন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য ‘মোবাইল ফোন বুথ’ চালু একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এসব পদক্ষেপের ফলে কারাবন্দিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পাবে বলে আমি আশা করি।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তির পূর্বে পুনঃসামাজিকরণ এবং মুক্তির পর নতুন জীবন শুরুর প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশের অনুকরণে ‘উন্মুক্ত কারাগার’ নির্মাণের পরিকল্পনা একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি বাস্তবায়িত হলে বন্দিদের প্রাক-মুক্তি পারিবারিক বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে এবং তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে যার পুনঃঅপরাধ রোধে সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস।
রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী তাকে স্বাগত জানান। এছাড়া অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা ও কারাগারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকেলে রাষ্ট্রপতি গাজীপুরস্থ ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।