বৃহস্পতিবার ● ২২ মার্চ ২০১৮
প্রথম পাতা » ময়মনসিংহ » জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ নিশ্চিত করতেই শাওনকে হত্যা করে সঞ্জয় ও তার অনুসারীরা
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ নিশ্চিত করতেই শাওনকে হত্যা করে সঞ্জয় ও তার অনুসারীরা
ময়মনসিংহ অফিস :: (৮ চৈত্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.১৭মি.) ‘ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ নিশ্চিত করতেই শাওনকে হত্যা করে সঞ্জয় দত্ত ও তার অনুসারীরা’ এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটি দাবি করেছেন নিহত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশফাক আল রাফি শাওনের বাবা এম এ কদ্দুছ।
আজ ২২ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে ছাত্রলীগ সাবেক সহ-সভাপতি আশফাক আল রাফি শাওন হত্যার বিচার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- নিহত শাওনের মা নিলুফা সুলতানা পপি, একমাত্র বোন ফৌজিয়া আক্তার ফ্লোরা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, এফবিসিসিআই’র সাবেক তিন বারের পরিচালক ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক শামীম, অ্যাডভোকেট পিযুষ কান্তি সরকার, শওকত জাহান মুকুল, হুমায়ূন কবির হিমেল ও শামসুল আলম প্রমুখ।
ময়মনসিংহ জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নিহত শাওনের বাবা এমএ কুদ্দুস এসময় বলেন, হত্যার শিকার আশফাক আল রাফি শাওন ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। আর ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন সঞ্জয় দত্ত। এবার দু’জনই নতুন কমিটির সভাপতি প্রার্থী। তাই সভাপতির পদ নিশ্চিত করতেই সঞ্জয় দত্ত ও তার অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে শাওনকে গুলি করে হত্যা করেছে। মূলত পথের কাঁটা হিসেবে শাওনকে সরিয়ে দিতে তার অনুসারীদের নিয়ে সঞ্জয় গুলি করে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি। আমার একটাই দাবি ‘যারা আমার একমাত্র ছেলে শাওনকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হোক।’
ময়নাতদন্ত ছাড়াই ছেলের মরদেহ দাফন প্রসংঙ্গে শাওনের বাবা বলেন, ‘ একমাত্র ছেলের শোকে আমি, আমার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম। নিহত সন্তানের মরদেহ কাটাছেড়া হোক এটা আমি ও আমার পরিবারের কেউ চাইনি। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে ছেলের মরদেহ দাফন করি। তাই হত্যাকারীদের তথ্য এবং মূল রহস্য উদঘাটন করে মামলাটি দায়ের করতে দেরি হয়েছে।’
প্রসংঙ্গত, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনগত মধ্যরাতে জেলা পরিষদের সামনে বন্ধুদের সাথে কথাবলার সময় রহস্যজনকভাবে গুলিবিদ্ধ হন জেলা ছাত্রলীগ নেতা আশফাক আল রাফি শাওন। পরে প্রথমে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে শাওনকে রাজধানীর ইবনে সিনা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৮ মার্চ সেখানে চিৎসাধীন অবস্থান তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত ছাড়াই ৯ মার্চ শাওনের গ্রামের বাড়ি ফুলবাড়িয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
এই ঘটনায় শাওনের পরিবার মামলা না করায় গত ১৪ মার্চ রাতে কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোাস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় দত্ত, এসএম আরিফুল হক ওরফে পিচ্চি আরিফ ও আমিনুল ইসলাম হিমেল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
এ সময় কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশ চন্দ্র রায় আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। রবিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুল হক তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একইসাথে পুলিশ শাওনের লাশ উত্তোলনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আদালতের নির্দেশে ১৯ মার্চ শাওনের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে বুধবার (২১ মার্চ) পরিবারের পক্ষ থেকে নিহত শাওনের বাবা এমএ কদ্দুছ বাদী হয়ে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। এম এ কুদ্দুসের মামলায় আসামি করা হয়েছে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় দত্ত (২৬), তার অনুসারী এস এম আরিফুল হক (২৭), আমিনুল ইসলাম হিমেল (২৭) ও দ্বীপ্ত দত্ত (২৩)। পুলিশের করা মামলায় সঞ্জয়, আরিফ ও হিমেলের নাম থাকলেও এই মামলায় নতুন করে যোগ হলো দ্বীপ্ত দত্তের নাম।
গতকাল বৃহস্পতিবার(২১ মার্চ) ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে নিহত শাওনের বাবা ময়মনসিংহ জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ কদ্দুছ তার একমাত্র ছেলের নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।