রবিবার ● ১ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » বাগেরহাটে ৪০দিনের কর্মসূচীতে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ
বাগেরহাটে ৪০দিনের কর্মসূচীতে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ
বাগেরহাট অফিস :: (১৮ চৈত্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.৫৯মি.) বাগেরহাটের মোল্লাহাটে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে সিমাহীন অনিয়ম-দূর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অর্থ লোপাট-আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৭-২০১৮ ইং অর্থ বছরের প্রথম পর্যায়ের ৩০’টি প্রকল্পের এক হাজার ছয়শত অতিদরিদ্র’র এক কোটি চব্বিশ লক্ষ টাকার অধিকাংশ ওই সকল প্রকল্পের সিপিসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আত্মসাত করেছে।
জানাগেছে, সরকারের মহতী উদ্যোগে অতিদরিদ্রদের সাহায্যে “অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি” প্রকল্প মোল্লাহাটে শুরু হয় জননেতা শেখ হেলাল উদ্দীন এমপি’র সহযোগিতায়। উক্ত প্রকল্পের উদ্দেশ্য/লক্ষ পুরণ না করে সিপিসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির যোগসাজসে নামমাত্র অতিদরিদ্র তালিকা প্রস্তুত করা হয়। আর নামমাত্র অতিদরিদ্র তালিকার লোকদের দিয়ে কাজ না করিয়ে তালিকা বর্হিভূত শ্রমিক দিয়ে নামমাত্র কাজ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বিভিন্ন সুত্র জানায়, সরকার যেখানে দেশের ও জাতির উন্নয়নে জনগুরুত্বপূর্ণ/জনবান্ধব প্রকল্প গ্রহণ করছে, সেখানে আত্মসাতের মাধ্যমে ওই সকল প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য নস্যাৎ করছে যারা, তারা জনবান্ধব সরকার ও জাতির শত্রু।
পিআইও অফিসের দেয়া তথ্যমতে কোদালিয়া ইউনিয়ন এলাকার “লিয়াকত শেখের বাড়ী হতে রফি বিশ্বাসের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন” প্রকল্প’র কাজ সব চাইতে ভালো হয়েছে। আর সেকারণে উক্ত রাস্তায় একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।
উক্ত প্রকল্পের দৈর্ঘ প্রায় আটশত মিটার, যার মধ্যে দুইশত মিটার ইটের সলিং থাকায় সেখানে কাজ করতে হয়নি এবং শেষের তিনশত মিটার কাজ করা হয়নি, ওই পাঁচশত মিটার অংশ বাদে অবশিষ্ট তিনশত মিটার মাটি দ্বারা উন্নয়ন করা হয়েছে।
ওই প্রকল্পের অতিদরিদ্র তালিকাভূক্ত ৮৩ জন শ্রমিকের মাঝে দোকান্দার শেখ এমদাদুল হক, কৃষক পলাশ চন্দ্র দাস, রাজ মিস্ত্রী নিমাই বালা, কৃষক ওয়াসিম সরকার ও পরশ চন্দ্র খানসহ কয়েকজন বলেন,তারা কেউই ওই প্রকল্পে কাজ করেন নি, এমন কি অনেকের জানা নেই কোন প্রকল্প/কোন রাস্তার কাজে তাদের নাম দেয়া হয়েছে, কেবল স্থানীয় মেম্বারগণ গত ৪মার্চ নসিমন যোগে তাদেরকে রূপালী ব্যাংক মোল্লাহাট শাখায় নেয় এবং তাদের প্রত্যেকের নামে ওই ব্যাংক হতে আট হাজার করে টাকা উত্তোলন করা হয়। পরে তাদের থেকে সকল টাকা মেম্বাররা নিয়ে মাত্র পাঁচশত টাকা করে প্রত্যেক হিসাব ধারীকে দেয়। এছাড়া ওই দিন তাদেরকে দুপুরে হোটেলে খাবার খাওয়ান।
ওই প্রকল্পের সিপিসি ইউপি সদস্য বদর মোবাইল ফোনে বলেন, তিনি নামমাত্র সিপিসি, উক্ত প্রকল্পে মোট ৮৩জন শ্রমিকের তালিকায় তার মাধ্যমে ২৭ জন, ইউপি সদস্য জাহিদের ২৭ জন ও ইউপি সদস্য হান্নান’র ২৭ জন শ্রমিক রয়েছে। এছাড়া কোন শ্রমিক না থাকলেও তাদের সঙ্গে সমান ভাগা/অংশ নেন মহিলা সদস্য মনোয়ারা।
তিনি আরো বলেন,প্রত্যেক হিসাবধারীকে পাঁচশত টাকা দেয়াসহ দুপুরের খাবার ও যাতায়াত মিলে ৭/৮’শ টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়া ইউপি সদস্য জাহিদ ও হান্নানের মাধ্যমে পিআইও অফিসে প্রতি শ্রমিক বাবদ পনের শত টাকা দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে তালিকাভুক্ত শ্রমিক ঝুটেশ্বরী গ্রামের পরেশ বালার ছেলে বিনোদ বালা ক্যান্সারে ভুগে গত ৪ জানুয়ারী মৃত্যু বরণ করার পরও তাকে জিবীত দেখিয়ে একই দিনে তার নামেও ৮হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য জাহিদ বলেন, সঠিক নিয়মে কাজ হয়েছে এবং লেবাররা টাকা পেয়েছে, তার মাধ্যমে মাত্র ১৭ জন লোক ওই প্রকল্পে দেয়া হয়েছে। যদি কেউ পাঁচশত টাকা পাওয়ার কথা বলে তবে, সে কথা সঠিক না বলেও দাবী করেন তিনি। মৃত ব্যক্তির নামে টাকা তোলার বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি এখন ব্যস্ত আছেন এবং পরে সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে মোবাইল সংযোগ বিছিন্ন করেন ইউপি সদস্য জাহিদ।
মৃত ব্যক্তি বিনোদ বালা’কে তার হিসাব থেকে টাকা দেয়া হয়েছে স্বীকার করে রূপালী ব্যাংক মোল্লাহাট শাখা ব্যাবস্থাপক সমর কুমার দাস বলেন, ভিড়ের মধ্যে এটা হয়েছে, তাছাড়া ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কোন তথ্য তাকে কেউ জানায়নি। উক্ত ব্যাবস্থাপক আরো জানান,তিনি শ্রমিকদের টাকা দেয়ার পর ব্যাংকের নিচ থেকে ওই সকল শ্রমিকের সকল টাকা নিয়ে তাদেরকে মাত্র পাঁচশত টাকা করে দেয় ইউপি মেম্বাররা, যে কারনে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ধাওয়া করলে দৌড়ে উপজেলায় গিয়ে প্রানে রক্ষা পায় ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন।
পিআইও অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ত্রাণ) উজ্জল মন্ডল বলেন,আপনারা (সাংবাদিক) যদি চাপে রাখেন, তাহলে আমাদের জন্য (উজ্জল মন্ডল) ভালো হয়, তাছাড়া অতিদরিদ্র তালিকা প্রস্তুত করে চেয়ারম্যান/মেম্বার, সেখানে আমাদের কিছু করার থাকেনা। শ্রমিক প্রতি পনের শত টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,বদর মেম্বার (সিপিসি) লেনদেন করে নাই, (ওই প্রকল্পের) লেনদেন করছে জাহিদ মেম্বার, সে কি কিছু বলছে ? মৃত ব্যক্তি কিভাবে তার হিসাব থেকে টাকা তুল্লেন ? এমন প্রশ্নোত্তরে উজ্জল মন্ডল বলেন, এটা ব্যাংকের ম্যানেজারের বিষয়।
এছাড়া ৬নং কোদালিয়া ইউপি’র অপর দুই’টি প্রকল্প “ইমরানের বাড়ী হতে দেলোয়ার সরদারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন” ও “রাঙ্গামাটিয়া পূর্বপাড়া দূর্গামন্দিরে মাটি ভরাট এবং কচুড়িয়া মেইন রাস্তা হতে রজ্জব আলীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন”। ওই দুটি প্রকল্পের কাজে আরো বেশী অনিয়ম-দূর্নীতি ও অর্থলোপাট/আত্মসাত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
“ইমরানের বাড়ী হতে দেলোয়ার সরদারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন” প্রকল্পের সিপিসি ইউপি সদস্য আকাশ মোবাইল ফোনে বলেন,ভাই আমরা একটু মেম্বারি করে খাই, দেখেন যেন কোন সমস্যা না হয়।
প্রকল্প সমূহের অর্থ আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সংসদ সদস্য জননেতা শেখ হেলাল উদ্দীনসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।