রবিবার ● ২৯ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » ভয়াল ২৯ এপ্রিল বাঙ্গালী গনগত্যা দিবস : খাগড়াছড়িতে বাঙ্গালী ছাত্র ফোরামের মানববন্ধন
ভয়াল ২৯ এপ্রিল বাঙ্গালী গনগত্যা দিবস : খাগড়াছড়িতে বাঙ্গালী ছাত্র ফোরামের মানববন্ধন
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: (১৬ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.৩৩মি.) আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল বাঙ্গালী গণ গত্যা দিবস। এই দিনটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন উপজেলায় শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সংগঠিত বাঙ্গালি গণহত্যার বিচার দাবীতে ৩২তম দিবসে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে তথাকথিত শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পরিচালিত গনহত্যার মিশনে প্রাণ হারায় পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা খাগড়াছড়ি জেলার ২৪৩৫ জনের অধিক নিরীহ নিরস্ত্র বাঙ্গালি। আহত হন আরো ২৫০০ হাজারের বেশি বাঙ্গালী। এই বর্বোরচিত গণহত্যার ধারাবাহিক বিচার দাবীতে আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি সদরের শাপলা চত্ত্বরে পার্বত্য অধিকার ফোরাম ও বৃহত্তর পার্বত্য বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে।
“সর্বক্ষেত্রে জনসংখ্যানুপাতে পার্বত্য বাঙ্গালিদের সাংবিধানিক অধিকার দিতে হবে” পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় আহবায়ক মো. মাঈন উদ্দীন এর নেতৃত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তাগন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম হল ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিলে সংঘটিত তিন তিনটি গণহত্যা।
এলাকা গুলো হল : পানছড়ির গণহত্যা, দিঘীনালার গণহত্যা ও মাটিরাঙার গণহত্যা। সে দিন দিবাগত রাত আনুমানিক ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত একযোগে চালানো হয় পানছড়ি, দিঘীনালা ও মাটিরাঙায় গণহত্যা চালানো হয়। এ দিনে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার লোগাং, চেঙ্গী, পানছড়ি, লতিবান, উল্টাছড়ি এই ৫টি ইউনিয়নের ২৪৫টি গ্রামে, দীঘিনালা উপজেলার মেরুং, বোয়ালখালী, কবাখালী, দিঘীনালা, বাবুছড়া এই ৫টি ইউনিয়নের ২৪৫টি গ্রামে, এবং মাটিরাংগা উপজেলার তাইন্দং, তবলছড়ি, বর্ণাল, বেলছড়ি, আমতলি, গোমতি, মাটিরাংগা, গুইমারা এই ৮টি ইউনিয়নের ৩২৫টি বাঙ্গালি ঙ্গ্রামে অগ্নিসংযোগসহ লুটতরাজ, হত্যা, বাঙালি নারীদের গণধর্ষণ ও পরে হত্যা করে নারকীয়তা সৃষ্টি করেছিলো সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর সশস্ত্র সংগঠন শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীরা। মাত্র কয়েক ঘন্টা সময়ের মধ্যে তারা পানছড়ি এলাকায় ৮৫৩ জন, দিঘীনালা এলাকায় ৮৯৮ জন এবং মাটিরাঙ্গা এলাকায় ৬৮৯ জন নিরস্ত্র নিরীহ বাঙ্গালি নারী, শিশু, আবাল-বৃদ্ধ বনিতাকে হত্যা করে। হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, দা-দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে, জবাই করে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নানা ভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছিল এই অসহায় বাঙ্গালি মানুষ গুলোকে। প্রতিটি লাশকেই বিকৃত করে সেদিন চরম অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তারা।
ওই ঘটনায় পানছড়ি এলাকায় আহত হয় ৫০০ জনের অধিক বাঙ্গালি। ৬২৪০টি বাঙ্গালিদের বাড়ি লুটতরাজ করে সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেয় উপজাতি সন্ত্রাসীরা। দিঘীনালা এলাকায় আহত হয় ১২০০ জনের অধিক বাঙ্গালি। ৭৩০৪টি বাড়ি লুটতরাজ করে সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেয় উপজাতি সন্ত্রাসীরা। মাটিরাঙ্গা এলাকায় আহত হয় ৮০০ জনের অধিক বাঙ্গালি। ৯০৪৮টি বাড়ি উপজাতি সন্ত্রাসীদের কর্তৃক লুটতরাজ করে সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেয়া হয়। তিনটি ঘটনাতে অপহরণ ও গুমের শিকার হয় কয়েক হাজার বাঙ্গালি। সেদিন কতিপয় বাঙ্গালি প্রাণে বেঁচে গেলেও এই ঘটনায় গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার বাঙ্গালি পরিবার। ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখা এবং বেঁচে যাওয়া কিছু কিছু সাক্ষী আজো আছে। কিন্তু ঘটনার বীভৎসতার কথা মনে পড়লে আজও তাদের চোখে মুখে আতঙ্ক ফুটে ওঠে।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বৃহত্তর পার্ব্ত্য বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক এস এম মাসুম রানা, জৈষ্ঠ্য সহ-সভাপতি মহিউদ্দীন, যুগ্ন-সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, সহ-সম্পাদক রবিউল হোসেন, সহ-সাংগঠনিক পারভেজ আলম ও অন্যান্য শাখার নেতাকর্মীরা। বক্তারা বলেন গণহত্যার ৩২ বছর পূর্তি এদিনে আজ আমাদের দাবি হল ২৯শে এপ্রিলে নিহত শহীদদের স্বরণে শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেখানে শহীদদের নামের লিষ্ট টানিয়ে তা সংরক্ষণ করা, শহীদের প্রতি পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং ২৯শে এপ্রিলে হত্যাকান্ডে দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার বাদী হয়ে একটি মামলা করে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দ্বারা তদন্ত করে তথাকথিত শান্তি বাহিণীর সদস্যদের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার এবং নির্দেশ দাতা হিসেবে সন্তু লারমা’র ফাঁসী দেয়া। ৩০ হাজার বাঙ্গালীর খুনী, দেশদ্রোহী জ্যোতিরিন্দ্রবোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা ও তার দোসরদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণ করে বাঙ্গালী হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে
বিনীত নিবেদক
সংগঠনটির সহ-সাংগঠনিক মো. পারভেজ আহম্মেদ কতৃক প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, গত ১৬ এপ্রিল-২০১৮ উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহৃত ৩ বাঙ্গালি ব্যবসায়ীকে উদ্ধারের দাবী জানান। অন্যাথায় আগামী ৩রা মে বৃহস্প্রতির সকল উপজেলায় মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ, ৫ মে শনিবার খাগড়াছড়ি জেলা সদরে লাটি মিছিল, ৬ মে রবিবার হতে লাগাতার হরতাল কর্মসূচি পালন করা হবে।