মঙ্গলবার ● ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » রেশম চাষে ভাগ্য ফিরছে হত দরিদ্র মানুষের
রেশম চাষে ভাগ্য ফিরছে হত দরিদ্র মানুষের
মোঃ ওমর ফারুক, কাউখালী (রাঙামাটি) থেকে::পার্বত্য তিন জেলার জলবায়ু,মাটি ও মানুষের পারিপার্শিক অবস্থা রেশম চাষের জন্য খুবই উপযোগি৷ রেশম চাষের মাধ্যমে বেকার জনগোষ্ঠিকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন, আয় বৃদ্ধি,মহিলাদের কর্মসংস্থান ওক্ষমতায়নের অনন্য অবদান রেখে চলেছে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড। পাশাপাশি পাহাড়ের বেকার জনঘোষ্ঠিকে রেশম চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে ৷ তারই ধারাবাহিকতায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বেশ কিছু সংখ্যক গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র মানুষ আজ এই রেশম চাষ করে দরিদ্রতাকে পিছনে ফেলে আর্থিকভাবে হয়েছেন মোটামুটি ভাবে স্বচ্ছল৷ ঘাগড়া ইউনিয়নের বেতছড়ি গ্রামের হতদরিদ্র ফেরদোসি বেগম বলেন, আমি আমার বড় পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে অনাহারে অর্ধাহারে দিন যাপন করে চলছিলাম এর মধ্যে রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বাড়ির আশেপাশে রেশম চাষ করে আজ আমি
মোটামুটি স্বচ্ছল৷ পাশের কলম পতি ইউনিয়নের পোয়া পাড়া গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা লায়লা বেগম জানান, আমার স্বামী আমাকে তিনটি ছেলে মেয়েসহ রেখে চলে যায়, আমি গরীব ঘরের মেয়ে দু চোখে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার দেখছিলাম খেয়ে না খেয়ে কোনরকম দিন কাটাচ্ছিলাম, অন্যদিকে ছেলেমেয়ের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কি করব ভেবে পাচ্ছিলামনা ঠিক এ সময় খবর পেলাম কাউখালীতে রেশম চাষের জন্য প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করে রেশম চাষের উপর প্রশিক্ষন নিলাম। পরে বাড়ির পাশে খালী জায়গায়, রাস্তার পাশে রেশম গাছ লাগিয়ে রেশম চাষ শুরু করলাম। আজ আমি রেশম চাষ করে দরিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে ছেলেমেয়ে নিয়ে মোটামুটিভাবে ভাল আছি, ছেলেমেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছি৷
অপরদিকে কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের রেশম চাষী আবদুস সবুর বললেন অন্য কথা, আমি খুবই গরীব শাররীকভাবে অসুস্থ ছিলাম টাকার অভাবে চিকিত্সা করতে পারছিলামনা ছেলেমেয়ে নিয়ে খুবই কষ্টে দিন যাচ্ছিল চিকিত্সার টাকার জন্য অনেক জায়গায় গিয়েছিলাম কিন্তু কেউ তেমন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি, পরে কাউখালী রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সুপার ভাইজার ফরিদা আপার মাধ্যমে আমি রেশম চাষের উপর প্রশিক্ষন নিয়ে আমার বাড়ির আশে পাশে ছেলেমেয়েকে নিয়ে শুরু করি রেশম চাষ, এই রেশম চাষ করে আজ আমি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, চেলেমেয়েকে সুখেই আছি কিন্তু এই রেশম চাষে একটু কষ্ট বেশি ।তবে পাহড়ের মাটি সমতলের মাটির চেয়ে উর্বরতা ভাল৷ আর আমরা যারা রেশম চাষী তাদের আরো উন্নত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থাকরলে ভাল হতো৷ তার সাথে একই পাড়ার বাসিন্দা সুকু মনি চাকমা বলেন, রেশম চাষ নিয়ে বলেন অন্য কথা তিনি বলেন, এই রেশম চাষ যদি সরকারী এবং বে-সরকারীভাবে উদ্যোগ নিয়ে করা হতো তাহলে সাধারন লোকজন আরো বেশি আগ্রহী হতো এবং রেশম চাষের দিকে ধাবিত হতো৷ এবং রেশম চাষ ভাল হয় পাহাড়ের ঢালু জায়গাতে ৷ তাছাড়া আরো বেশি প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করলে চাষিরা রেশম চাষে আরো বেশি সাফল্য বয়ে আনতে পারবে বলে তিনি মনে করেন৷
জানা যায়, রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলা, কাপ্তাই উপজেলা এবং বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় রেশম উত্পাদনের জন্য ২ টি রেশম কারখানা রয়েছে ৷ এসব রেশম বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানী করা হয়৷ রেশম সমম্প্রারন কার্য্যক্রমের কাউখালী উপজেলার সুপার ভাইজার মিসেস ফরিদা আক্তার বলেন, রেশম চাষ লাভজনক চাষ কিন্তু এই চাষের জন্য দরকার উদ্যোগ আর এই উদ্যোগ যদি সরকারী ,বে-সরকারী ভাবে ভালভাবে উদ্যোগ নেয়া হয় সহজ কিস্তিতে ঋনের ব্যবস্থা করা যায় এবং কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন দরিদ্র এলাকায় হত দরিদ্র লোকজনদের ভাল প্রশিক্ষনের মাধ্যমে রেশম চাষের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে অনেকেই এই রেশম চাষে এগিয়ে আসবেন বলে আমার দৃড় বিশ্বাস৷ তা ছাড়া ইতি পূর্বে এই রেশম চাষে এগিয়ে এসে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন বর্তমানে অনেকেই স্বাবলম্বী৷
রাঙামাটি আঞ্চলিক রেশম সম্প্রসারন কার্য্যালয়ের ম্যানেজার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, পার্বত্য জেলা সমুহে রেশম চাষ সম্প্রসারন শীর্ষক প্রকল্পটি ৩ বছর মেয়াদি (জুলাই -২০১৩ হতে জুন- ২০১৬) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে রেশম শিল্প সম্প্রসারন অধিদপ্তর কাজ করে আসছে৷ বর্তমানে কাউখালী উপজেলার ৩ টি ইউনিয়নে আমরা রেশম চাষের কার্য্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি, জনবল সংকট থাকা সত্বেও আমরা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছি আর সেটা সম্ভব হয়েছে এই এলাকার লোকজন, চাষী, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতার ফলে৷ গত ৬ ই ডিসেম্বর/২০১৫ কাউখালী উপজেলার রেশম চাষীদের মাঝে ( পোকা পালন কারী) মোট চাষী ৬৪জন, তার মধ্যে রেশম পোকা (গুটি ) দেন ৩৪জন৷ বর্তমানে কাউখালী উপজেলায় রেশম চাষী ৪৭৬জন৷
রেশম উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত গুটি পোকা ক্রয় সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিসেস আফিয়া আখতার বলেন, অনেক প্রতিকুলতা সত্বেও এই উপজেলার অনেক হত দরিদ্র পরিবারের সদস্য, সদস্যারা প্রশিক্ষন নিয়ে রেশম চাষ করে আজ দেখিয়ে দিয়েছেন কোন কাজই ছোট নয়, এই রেশম চাষে আজ অনেকেই মোটামুটি ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন, সত্যি এটা গর্বের একটা বিষয় বলে আমি মনে করি, তাছাড়া এই প্রচেষ্টা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে৷ অপরদিকে বর্তমান সরকার পার্বত্য এলাকায় রেশম শিল্পের মাধ্যমে পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য রেশম চাষ সম্প্রসারন ও উন্নয়নের মাধ্যমে পার্বত্য জেলাসমুহে দারিদ্র বিমোচন শীর্ষক বড় আকারে একটি প্রকল্প গ্রহন করতে যাচ্ছে ৷ এই প্রকল্পটি চালু হলে পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠির দারিদ্র বিমোচন সহ রেশম শিল্পের মাধ্যমে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ৷