রবিবার ● ৬ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সুবিধায় বিএনপি-জাপা আওয়ামী লীগে বিভক্তি
সুবিধায় বিএনপি-জাপা আওয়ামী লীগে বিভক্তি
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (২৩ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.২৩মি.) সিলেট-২ আসনে কে কোন দল থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে আলোচনার শেষ নেই। গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন দলের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় এ আসন ফের কোন দলের দখলে যাবে তা নিয়েও প্রশ্নের শেষ নেই।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। আর ২০০১ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ‘নিখোঁজ’ এম ইলিয়াস আলী। ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন বড় তিনটি দলের প্রভাবশালী চার নেতা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সুদূর লন্ডনে লেগেছে এর হাওয়া। মাঠে থাকা তিন দলের চার নেতা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া, আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী, নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এই চার নেতার মধ্যে দলীয় দিক দিয়ে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইলিয়াসপত্নী লুনা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও তিন চৌধুরীর ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ ও জাপার জোটগত সিদ্ধান্তের ওপর। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী। সে সময় এহিয়া চৌধুরীর ভাগ্য খুলে গেলেও ধারণা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এবার জোটগত নির্বাচন হলেও এ আসনে আর জাপাকে ছাড় দেবে না দলটি।
১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় শফিকুর রহমান চৌধুরী এ আসন আর জাপাকে দেওয়া হবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে এ আসন জাপা ফের চাইবে, এমন গুঞ্জনও জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এমন ইঙ্গিত দিয়েই আসছেন এহিয়া চৌধুরী। জাতীয় পার্টির হাইকমান্ডের কাছে এহিয়া চৌধুরী যেমন পছন্দের প্রার্থী, তেমনি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছেও পছন্দের তালিকায় শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ তিনজন যখন দলীয় হাইকমান্ডে জোর লবিং চালাচ্ছেন, তখন অনেকটাই নির্ভার ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তাকে দল থেকে অনেকটা সবুজ সংকেত দিয়েই দেওয়া হয়েছে। ইলিয়াসের মা সূর্যবান বিবিকে বিশ্বনাথে দেখতে এসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সে ইঙ্গিত স্পষ্টই দিয়ে গেছেন। জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের খুব পছন্দের প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সিলেট-২ আসনের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে আসছেন। তাই তাকেই এ আসনে ফের প্রার্থী করা হবে।
এ আসনের আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীদের কথা হচ্ছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের স্বার্থে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়ে উদার রাজনৈতিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। তার এ ত্যাগের বিনিময়েই দলীয় সভানেত্রী এবার এ আসনে তাকেই প্রার্থী ঘোষণা করবেন। তবে আওয়ামী লীগের অপর অংশের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, নানা কারণে এবার সিলেট-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। অন্যদিকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা এ আসনে বিএনপির হাল ধরেছেন। তার নেতৃত্বেই সিলেট-২ আসনের আওতাধীন তিন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জয় পান। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও চমক দেখান তিনি। এখন সাংগঠনিকভাবেও ওই আসনে বিএনপি অনেক শক্তিশালী। ইলিয়াসের ইমেজের ওপর নির্ভর করে লুনা এ আসনে প্রার্থী হলে বাজিমাত করবেন— এমনটি মনে করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া সাংবাদিকদের বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ে তুলনায় বর্তমানে সিলেট-২ আসনে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। এর ধারা অব্যাহত রাখতে আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশব্যাপী যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধিত হচ্ছে, সরকারদলীয় এমপি না থাকায় ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত এসব উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছে সিলেট-২ আসন। যে কারণে জনগণের প্রাণের চাওয়া এ আসন থেকে আবারও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হয়ে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়েই বিএনপি সংশয়ে আছে। আমাদের সামনে এখন বড় ইস্যু ম্যাডামের (বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া) মুক্তি। তার মুক্তির পর যদি বিএনপি নির্বাচনে যায়, তাহলে অবশ্যই সিলেট-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। যুক্তরাজ্য আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এই এলাকার মানুষ পরিবর্তন চায়। তাই জনগণের কল্যাণে কিছু করার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকেই মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষেই দলীয় নেতা-কর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।