সোমবার ● ৪ জুন ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সিসিক নির্বাচনে নিজ দলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে আরিফ-কামরান
সিসিক নির্বাচনে নিজ দলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে আরিফ-কামরান
সিলেট প্রতিনিধি :: (২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৪৯মি.) সিসিক নির্বাচনের আমেজ এবং উত্তাপ দুনুটাই ছড়িয়ে পড়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। বড় দুই দল তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানা চুলচেরা বিশ্লেষণ। এই বিশ্লেষণে ঘুরেফিরে আসছে সিসিকের বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী এবং সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নাম।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এখনও পর্যন্ত এ দুজনই আছেন এগিয়ে। তবে মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে এ দুই নেতাকে ঘরের লড়াই সামলাতে হচ্ছে। উভয় নেতাই নিজ নিজ দলে মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বির মুখোমুখি হচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গেল সপ্তাহে সিলেট সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুসারে ৩০ জুলাই হবে ভোটগ্রহণ। এর আগে ১৩ জুন থেকে ২৮ জুন জমা দেয়া যাবে মনোনয়নপত্র। এই তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সিসিকের নির্বাচনী পালে লেগেছে নতুন হাওয়া। নগরবাসী, ভোটার, দলীয় নেতাকর্মী-সবার মুখে মুখে ঘুরছে নির্বাচনের বিষয়টি। সম্ভাব্য প্রার্থী, বিশেষ করে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘিরে চলছে নানামুখী আলোচনা।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। গেল বছর কামরান জানিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের জন্য তাকে ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। এরপর তিনি জোরেশোরে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেন। অবশ্য সিসিকের গত নির্বাচনে বড় ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর মাঠছাড়া ছিলেন না কামরান। দলের অনেক তৃণমূল নেতাকর্মীরাও মনে করছেন, বিএনপি থেকে এবারও শক্তিশালী প্রার্থী থাকবে।
তবে দল থেকে মনোনয়ন পেতে কামরানকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এবার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও টানা তিনবারের সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ।
কামরান গত নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই মাঠে সক্রিয় অবস্থান ধরে রেখেছেন আসাদ। বিগত দিনে তিনি একাধিকবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছি। আমার একটা শক্ত অবস্থান তৈরী হয়েছে। দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে আমাকে নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করা হবে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি মানুষের জন্য কাজ করি। গত নির্বাচনে হারলেও সবসময় আমি নগরবাসীর পাশে থেকেছি। বৃহৎ দল হিসেবে আওয়ামী লীগে সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী থাকতেই পারে। কিন্তু দল অভিজ্ঞতা, কর্মতৎপরতা, মানুষের চাওয়া সবকিছুকে মূল্যায়ন করেই মনোনয়ন দেবে।’
এদিকে, বিএনপি থেকে এবারও মনোনয়ন পেতে পারেন আরিফুল হক চৌধুরী-এমন জোর গুঞ্জন রয়েছে। গত বছর নভেম্বরে ঢাকায় খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে নির্বাচনের জন্য ‘সবুজ সংকেত’ পান বলে জানিয়েছিলেন আরিফ। গত নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হওয়া আরিফ প্রায় দুই বছরই কারান্তরীণ ছিলেন। বাকি সময়ে প্রতিশ্রুত উন্নয়নকাজের সিংহভাগই শেষ করেছেন বলে দাবি তার।
দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিমত, আওয়ামী লীগ থেকে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মনোনয়ন পেলে তার বিপক্ষে টেক্কা দিতে বিএনপি থেকে শক্ত অবস্থান আছে আরিফের।
অবশ্য আরিফের জন্য দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সহজ হচ্ছে না। মেয়র পদে নির্বাচন করতে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ও টানা তিনবারের সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী আছেন মেয়র পদে নির্বাচন করার দৌড়ে। তবে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের অভিমত, দলীয় কাজে নাসিম, সেলিমরা সক্রিয় থাকলেও ভোটের মাঠে তাদের শক্ত অবস্থান নেই।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘নির্বাচন করতে সবাই আমাদে উৎসাহ দিচ্ছেন। দল চাইলে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি।’
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য গত এক বছর ধরে কাজ করে চলেছি আমি। সিলেটকে তিলোত্তমা হিসেবে গড়ে তুলতে আমার নিজস্ব কিছু পরিকল্পনাও আছে। দল মূল্যায়ন করলে আমি নির্বাচন করব।’
সিসিকের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের রায় নিয়ে গত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলাম। বাকি সময়ে প্রতিশ্রুত উন্নয়নকাজ শেষ করার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি দলীয় কাজেও সময় দিয়েছি। দল নিশ্চয়ই এসব বিবেচনা করে মনোনয়ন দেবে।’