বুধবার ● ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » ধর্ম » স্মৃতিখন্ডে গৌতমবুদ্ধের বাংলাদেশ
স্মৃতিখন্ডে গৌতমবুদ্ধের বাংলাদেশ
অনলাইন ডেক্স :: আড়াই হাজার পূর্বে প্রাচীন বাংলাদেশে মহাস্থানের পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) এবং পাহারপুরে (রাজশাহীর সোমপুরী বিহার) বসে গৌতমবুদ্ধ দিনের পর দিন বাঙালি সমাজকে দান, শীল, ভাবনা এবং সুন্দর ভাবে জীবন যাপনের শিক্ষা দিয়েছেন এবং স্মৃতির মনিমালায় পোড়ামাটির শিল্পকর্মে “গৌতমবুদ্ধ ধর্মচক্র মূদ্রায়” আজ ও বাংলাদেশে বিরাজমান। মন বলে, “প্রতিদিন আমি হে জীবন স্বামী / দাঁড়াব তোমার সন্মুখে।” তবু তা যে অছে তা অনুভব করা যায়, উপলব্ধি করা যায় পবিত্র মন ও শ্রদ্ধা নিয়ে উক্ত বুদ্ধমূর্তির সামনে এসে দাঁড়ালে। মহাকবি সত্
যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়,
“বঙ্গে এল বুদ্ধবিভা, কিন্তু সে নাই বেঁচে,
নগর পুন্ড্রবর্ধনও নেই স্বপ্ন হয়ে গেছে;
নেই বালিকা উপাসিকা, আমরা তারই হয়ে,
বরণ করি বুদ্ধবিভা চিত্তপ্রদীপ লয়ে;
চৈত্য দিয়ে যতে ঘিরি বুদ্ধবিভূতিরে,
নিরঞ্জনা তীরের স্মৃতি ভাগীরথির তীরে।”
অনেকের মতে, বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ এবং বাংলাদেশে মাটির নীচে অনেক বুদ্ধমূর্তি এবং বৌদ্ধ বিহার পাওয়া গেছে। বৌদ্ধধর্ম, বাংলাভাষা ও বাঙালি জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিনত হয়েছে রাজপুত্র সিদ্ধার্থের (গৌতমবুদ্ধ) বঙ্গলিপি অধ্যয়ন এবং ১৯০৭ সালে নেপালের সাবেক রাজকীয় লাইব্রেরী থেকে মহামহোপধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক ‘চর্যাপদ’ আবিস্কারের মাধ্যমে। গৌতমবুদ্ধের পূর্বে সংস্কৃত ভাষার কোন লিপি ছিল না। পরে অশোকের শিলালিপির ভাষা ব্রাহ্মী ভাষা (প্রায় ৪০ টা ভাষায় বর্ণমালার জনক), অনুকরন করে দেবনাগরী লিপি বা বর্ণমালা প্রতিষ্ঠিত হয়। সমস্ত ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতিতে লিপির কোন স্থান নেই। কারন স্বরস্বতী বাগদেবী, লিপির দেবী নন। তাই কলিকাতার বিখ্যাত কেন্দ্রীয (ইম্পেরিয়েল) লাইব্রেরীতে গৌতমবুদ্ধের ছবি বিরাজমান। অবিশ্বাস্য হলে ও সত্যি যে, গৌতমবুদ্ধের সময় বাংলাদেশে দনোত্তম কঠিন চীবর দানের ইতিহাস সহ বাংলা ভাষার আদিরূপরেখার অস্তিত্ব বগুড়ার মহাস্থানগড়ে সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে আজ থেকে দুই হাজার তিনশত বছর আগেই বিদ্যমান ছিল। উক্ত ঐতিহাসিক শিলালিপি খন্ডখানি আজ ও কলিকাতা যাদুঘরে দৃশ্যমান।
বিশ্বকোষ (১৩শ ভাগ, পৃষ্ঠা ৬৫) থেকে একটি ঐতিহাসিক উদ্ধৃতি উল্লেখ করা গেল, “কিয়ৎকাল পরে সিদ্ধার্থ গুরুগৃহে গমনের পূবেই তিনি ব্রাহ্মী … বঙ্গলিপি … সহ ৬৪ প্রকার লিপি অবগত ছিলেন।” লেখক মুকুল সাহার মতে, “সমস্ত ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতিতে লিপির কোন স্থান নেই। সরস্বতী বাগদেবী। লিপির দেবী নন। ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি লেখাকে নরকের দ্বার স্বরুপ জারি করে জনগণকে শোষনের একটি মোক্ষম ব্যাবস্থায় নিজেদের স্বার্থ অটুট রাখতে প্রয়াসি হয়েছে। ভারতবর্ষের এই ট্র্যাডিশলান বিকৃতির হাত থেকে দেশবাসীকে অব্যাহতি দিতে অবশ্যই বুদ্ধ সর্বপথম চেষ্ঠা করেন এবং সফল ও হন।”
ধর্মচক্র মূদ্রা বা ভূমিস্পর্শ মূদ্রায় বজ্রসত্ত্ব বা বুদ্ধকে বর্ণনা করার মতো কলম, অথবা এঁকে দেখাবার মতো তুলি আমার নেই। শুধু আমি আমার বিদ্যাবুদ্ধিতে এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের বুদ্ধমূর্তির চিত্রে এমন একটা কিছু আছে যার জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা যায়। বাব বার ফিরে ফিরে এঁকে দেখলে ও চোখ ক্লান্ত হয় না, পীড়িত হয় না। বাংলাদেশে একাধিক বুদ্ধমূর্তি আছে যা নাকি শুধু বিভিন্ন পদার্থ দিয়ে বানানো নয়, যেন তাঁর মধ্যে হাজার বছর ধরে বন্দী হয়ে আছে শিল্পীর অনুক্ত কথা, একটি অপ্রকাশিত ধ্যানের মন্ত্র। যা খোলা নয়, ঢাকা।
লেখক : সোনা কান্তি বড়ুয়া, গবেষক, টরন্টো থেকে
আপলোড : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : রাত ১২.৪৬ মিঃ