শুক্রবার ● ২৯ জুন ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » আলীকদমে বিয়ের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যুবক খুন
আলীকদমে বিয়ের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যুবক খুন
আলীকদম প্রতিনিধি :: (১৫ আষাঢ় ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ রাত ৯.২৫মি.) বিয়ে হতে না হতেই খুন হয়েছেন আব্দু শুক্কুর(২৪) নামে এক যুবক। আট জনকে আসামী করে থানা এজাহার দায়ের করেছে মৃত যুবকের বড় ভাই মোঃ উছমান। খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে এজাহার নামীয় আসামীরা। গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) সকালে নিহত যুবককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন আজ শুক্রবার বিকেলে বড়ভাই মো. উছমান বাদী হয়ে নিহত যুবকের কথিত স্ত্রী মরিয়ম খাতুন, ঘটনার উস্কানীদাতা মাস্টার জিয়াউল হকসহ ৮ জনকে আসামী করে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা অনেকেই পালাতক রয়েছে। নিহত আব্দু শুক্কুর আলীকদম উপজেলাধীন ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের আকবর আহামদ পাড়ার খোরশেদ আলম এর ছেলে।
থানায় প্রদত্ত এজাহারে প্রকাশ, গত ২৬ জুন সন্ধ্যায় উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের খোরশেদ আলমের ছেলে মো. আব্দু শুক্কুর (২৪) সদর ইউনিয়নের দানু সর্দার পাড়ার মৃত মোঃ হোসেনের মেয়ে মরিয়ম খাতুন (২৮) এর বাড়িতে বেড়াতে যায়। এরপর মরিয়ম পূর্বপরিকল্পনামতে বাস টার্মিনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হকের সহায়তায় এজাহারে বর্ণিত আরো ৬ আসামীকে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে যায়। মরিয়ম ও মাস্টার জিয়াউল হকের নির্দেশে অপর আসামীরা আব্দু শুক্কুরকে ঘরের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। রাত দশটার সময় আব্দু শুক্কুরের বড় ভাই মরিয়মের বাড়িতে গিয়ে ছোটভাইকে ছেড়ে আনতে চেষ্টা করেন।
মামলার বাদী মো. উছমানের দাবী, আমি এ সময় কক্ষের ভেতর থেকে আমার ভাই আব্দু শুক্কুরের আর্তগোঙানীর আওয়াজ শুনতে পাই। আমি আমার ভাইকে ছেড়ে দিতে বললে মাস্টার জিয়াউল হক হুমকি দিয়ে বলে, মরিয়মকে তোর ভাইয়ের বিয়ে করতে হবে, নতুবা আমাদেরকে নগদ ২ লাখ টাকা দিতে হবে। অন্যথায় তোর ভাইকে এখানে মেরে লাশ বানিয়ে ফেলব’।
এজাহারে আরো প্রকাশ, এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আবু ছালাম আটক আব্দু শুক্কুরকে তার ভাইয়ের জিম্মায় ছেড়ে তেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু মাস্টার জিয়াউল হকের নির্দেশে অন্যান্য আসামীরা শুক্কুরকে ছেড়ে দেয়নি। রাত তিনটার দিকে শুক্কুরের আত্মীয়-স্বজন ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
এদিকে, পরদিন ২৭ জুন স্থানীয় কাজী মাওঃ কুতুব উদ্দিনকে মরিয়মের বাড়িতে নিয়ে মরিয়মের সাথে আব্দু শুক্কুরের বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ের কাবিন নামায় মামলার বাদীকে আসামীরা অভিভাবকের স্বাক্ষর করতেও বাধ্য করে। কথিত বিয়ে পড়ানোর পরেও বুধবার সারাদিন ও দিবাগত রাতে আব্দু শুক্কুরকে আটক রাখা হয় মরিয়মের বাড়িতে।
উল্লেখ্য, এর আগে মরিয়মের দুইবার বিয়ে হয়েছিল। দুই স্বামীর ঘরে তার দুইটি সন্তান আছে।
এজাহারে প্রকাশ, ২৭ জুন দিবাগত রাতের যেকোন সময়ে মরিয়ম ও জিয়াউল হকের সহায়তায় আব্দু শুক্কুরকে অন্যান্যরা আসামীরা অন্ডকোষ চেপে এবং গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে আসামীরা হত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শুক্কুরের মৃতদেহটি উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে আনার পূর্বের শুক্কুর মারা গেছেন। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেলে মারা যাওয়ার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
কাজি মাওলানা কুতুব উদ্দিন বলেন, বুধবার সকালে আমাকে আফসার নামে একব্যক্তি বিয়ে পড়ানোর জন্য ডেকে নিয়ে গেলে আমি এ বিয়ে পড়াই। ওয়ার্ড মেম্বার আবু ছালাম বলেন, ঘটনা শুনে ২৬ জুন (মঙ্গলবার) রাতে আমি মরিয়মের বাড়িতে যাই। তখন আব্দু শুক্কুরকে তার ভাই ও ভগ্নিপতির জিম্মায় ছেড়ে দিতে বলি। কিন্তু মরিয়মরা তাকে ছাড়তে রাজি হয়নি। পরে ঘটনাটি আমি থানায় ও চেয়ারম্যানকে জানাই।
এ ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত জিয়াউল হক জানান, ঘটনার দিন রাতে আমাকে কিছুলোক মোবাইল করলে বলি যে, আমি বান্দরবান আছি। এরপর ওয়ার্ড মেম্বার আবু ছালাম ফোন করলে বলি যে, আমি বাসায় আছি। মেম্বারের ডাকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি যে, সেখানে ১০/১২ জন লোক উপস্থিত। আমি মরিয়ম ও শুক্কুরকে কিছু গালি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসি। পরের ঘটনা নিয়ে আমি কিছুই জানি না।
জানতে চাইলে থানার অফিসার ইনচাজ (ওসি) রফিক উল্লাহ্ বলেন, আমি অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি আছি। এ ঘটনার এজাহার থানায় গেলে সেকেন্ড অফিসার রিসিভ করবেন। সেকেন্ড অফিসার এসআই আজমগীর বলেন, এ ঘটনায় একটি এজাহার পেয়েছি। স্যারকে জানিয়েছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।