বৃহস্পতিবার ● ১২ জুলাই ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » লেখক প্রমথ চৌধুরীর স্বাক্ষর জাল করে জমি দখলকারীর বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি
লেখক প্রমথ চৌধুরীর স্বাক্ষর জাল করে জমি দখলকারীর বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :: দেশের প্রখ্যাত লেখক প্রমথ চৌধুরীর মৃতের ৩৩ বছর পর তার এবং তার স্বজনদের স্বাক্ষর জাল করে ২১ একার ৬৫ শতাংশ জমি দখলের বিষয়ে দায়ের করা মামলায় আদালতে দোতরফা শুনানী শেষে জমির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ লুনা ফেরদৌস এ আদেশ জারি করেন। আদেশে বলা হয়েছে বিবাদীগন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমিতে প্রবেশ, পুকুর থেকে মাছ ধরা, গাছ কর্তন, কোন প্রকার ফসল, বসতভিটা নির্মাণ করতে পারবে না। এদিকে,ভুমিদুস্যু সৈয়দ গংদের কাছ থেকে জমি উদ্ধার হওয়ায় প্রমথ চৌধুরী ভক্তসহ স্থানীয়দের মধ্য আনন্দ বিরাজ করছে।
মামলা সুত্রে জানা যায়, প্রমথ চৌধুরী যশোর জেলায় জন্ম গ্রহন করলেও তার পিতৃ নিবাস ছিল পাবনার চাটমোহর থানার হরিপুর গ্রামে। ওই সময় সিরাজগঞ্জ জেলা পাবনার একটি মহকুমা শহর থাকায় প্রমথ চৌধুরীরা খাদুলী গ্রামে বহু সম্পত্তি ক্রয় করেছিল। প্রমথ চৌধুরী ও তার স্বজনরা পাক-ভারত বিভক্তির পরেই জমিজমা রেখে ভারতে চলে যায়। সেখানেই প্রমথ চৌধুরী ১৯৪৬ সালে মৃত্যুবরন করেন। কিন্তু সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়নের খাদুলী গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে মৃত সাইফুল ইসলাম ওরফে সয়ফল রাজাকার ও তার বাবা আবেদ আলী প্রখ্যাত লেখক প্রমথ চৌধুরীর মৃতের ৩৩ বছর পর ১৯৭৮ সালের ১৪ নভেম্বরের তার স্বাক্ষর জাল করে সোলেনামা (যার নম্বর-৩৩/৭৭) তৈরী করেন। সেই সোলেনামার ভিত্তিতে উল্লাপাড়া সহকারী আদালত মামলা করে ডিগ্রী লাভ করে (ডিগ্রী নং-৪৪/০১) এবং ২১ একর ৬৫ শতাংশ জমি দখল করে নেয়। তবে ওই সময় সরকার পক্ষের আইনজীবীর ব্যর্থতার কারণে জাল সোলেনামাটি সঠিক বলে প্রমানিত হয়েছিল বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। অন্যদিকে সরকার প্রমথ চৌধুরী ও তার স্বজনদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ক গেজেটে অন্তভর্’ক্ত করেন। এ অবস্থায় সয়ফলের ছেলে সৈয়দ আলী ২০১২ সালে প্রমথ চৌধুরীর জাল স্বাক্ষরকৃত সোলেনামা ও আদালতের ডিগ্রী মুলে পুনরায় অর্পিত ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-২২৯০/১২)। কিন্তু অদ্যাবদি পর্যন্ত আদালতে মুল কাগজপত্র জমা দেয়নি। অন্যদিকে, সরকার পক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক প্রমথ চৌধুরী ও তার স্বজনদের স্বাক্ষরকৃত জাল সোলেনামা বাতিলের জন্য আদালতে মামলা (অপর প্রকার-৮৬/১৭) দায়ের করেন। এ মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী জমির উপর নিষেধাজ্ঞার আবেদন জানান।আদালত দোরতরাফ শুনানীশেষে প্রাথমিকভাবে বিবাদীগনের কাগপত্র জাল প্রমানিত হওয়ায় জমিতে বিবাদীগন যাতে জমিতে প্রবেশসহ জমিতে প্রবেশ, পুকুর থেকে মাছ ধরা, গাছ কর্তন, কোন প্রকার ফসল, বসতভিটা নির্মাণ করতে পারবে না বলেনিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা খাদুলী গ্রামের নান্নু মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে সৈয়দ আলীসহ তার স্বজনরা সরকারের জমি জাল-জালিয়াতি করে ভোগ দখল করছিল। পরে জেলা প্রশাসন কর্তৃক মামলা পরিচালনার জন্য নিজ খরচায় ডকুমেন্ট ও পাবলিক আইনজীবী নিয়োগের আদেশ দেন। প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক সব জাল-জালিয়াতির ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জমা দেয়া হয়। আদালত ডকুমেন্টের সত্যতা প্রমান পাওয়ায় এ অস্থায়ী নির্দেশনা জারি করেছেন।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাহিদ হোসেন, স্বপন মন্ডল ও মোবারক হোসেন জানান, আদালতে বিবাদী প্রমথ চৌধুরী স্বাক্ষরিত যে সোলেনামা জমা দিয়েছে তা সম্পন্ন জাল। ১৯৭৮সালে প্রমথ চৌধুরী স্বাক্ষরিত সোলেনামা দেয়া হয়েছে অথচ প্রমথ চৌধুরী ১৯৪৬ মারা গেছেন। এনিয়ে আদালতে দোরতরফা শুনানী হয়। শুনানী শেষে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এছাড়াও পরবর্তী শুনানীসহ আরো আদেশের জন্য দিনধার্য্য করেছেন।