সোমবার ● ১৩ আগস্ট ২০১৮
প্রথম পাতা » নওগাঁ » ২৩ বছরের স্কুল ভবন পরিত্যক্ত দেখিয়ে ১৯ হাজার টাকায় বিক্রি : ৫৫ বছরের স্কুল ভবন নিলাম হয়নি
২৩ বছরের স্কুল ভবন পরিত্যক্ত দেখিয়ে ১৯ হাজার টাকায় বিক্রি : ৫৫ বছরের স্কুল ভবন নিলাম হয়নি
নওগাঁ প্রতিনিধি :: (২৯ শ্রাবণ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৪৯মি.)নওগাঁর রাণীনগরে কনৌজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ভবন প্রকাশ্য নিলামের নামে গোপনে মাত্র ১৯ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। অথচ ওই স্কুলের ৫৫ বছরের ভবন পরিত্যক্ত বা নিলাম করা হয়নি। গত ২৩ বছর আগে এলজিইডি থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয় এই স্কুল ভবন। এত অল্প সময়ে ভবনটি কি ভাবে পরিত্যক্ত দেখিয়ে এত অল্প টাকায় নিলামে বিক্রি করলো তা নিয়ে জনমনে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাশা-পাশি স্কুলের লক্ষাধিক টাকা মূল্যের তিনটি মেহগনি গাছও নিলাম বা টেন্ডার ছাড়াই বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে ওই স্কুলের প্রভাবশালী সভাপতি। এ নিয়ে গ্রমবাসি আন্দোলন করলেও প্রভাবশালী সভাপতির ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।
স্থানীয় ও স্কুল সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার কনৌজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত ১৯৪৮ সালে স্থাপিত হয়। এরপর সেখানে বাশের বেড়া দিয়ে পাঠ্য কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১৯৭২ সালে অফিস ঘরসহ ৪টি কক্ষ বিশিষ্ট পাকাঘর উপরে টিনশেড নির্মিত হয়ে প্রায়৫০ বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। গত ১৯৯৪-৯৫ অর্থ বছরে শিক্ষার মান উন্নয়নে নওগাঁ এলজিইডির বাস্তবায়নে তিনটি ক্লাসরুম এবং একটি অফিস রুমসহ চার রুম বিশিষ্ঠ একতলা ভবন নির্মান করা হয়। এতে নির্মান ব্যয় হয় ৫ লক্ষাধিক টাকা। এপর্যন্ত ওই ভবনে সুষ্ঠুভাবে পাঠদান অব্যাহত থাকলেও গত ২০১৭ সালে স্কুলের সভাপতি সাহেব আলী ও রানীনগর উপজেলা প্রকৌশলীকে উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ভাল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে পরিত্যক্ত ঘোষনা করেন। কিন্তু এর আগের নির্মিত টিনশেডের পাকা ঘর কোন পরিত্যক্ত বা ঝুকিপূর্ন ঘোষনা করেনি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরপর প্রতিষ্ঠালগ্নে নির্মিত পুরাতন ভবনগুলোতে পুনরায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়া ওই বিদ্যালয়ে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের একটি মেহগনি,একটি আম ও একটি কৃষœচুরার গাছ সহ ওই স্কুল ভবন পরিত্যাক্ত দেখিয়ে গত ১৯ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি প্রকাশ্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি জারী করে প্রচারের জন্য স্কুলে পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু ভবন ও গাছগুলো বিক্রির ঘোষনা প্রচার না করে গত ২৬ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি সাহেব আলী তার নিজস্ব মাত্র পাঁচ জন ডাককারীর নিয়ে উপস্থিত হন।ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি সাহেব আলী ১৯ হাজার টাকায় তার নিজ নামে ভবনটি ক্রয় করেন। অথচ ওই বিদ্যালয়ের প্রায় ৫৫ বছরের টিনসেড পাকা ঘর এখনও কোন পরিত্যক্ত ঘোষনা বা নিলাম করা হয় নি। স্থানীয়দের অভিযোগ স্কুলের সভাপতি সাহেব আলী এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অফিসের সাথে যোগসাজস করে কাউকে না জানিয়ে তিনি নামমাত্র টাকায় এই ভবনটি নিজে ক্রয় করেছেন। ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনটি কিভাবে এতো অল্প টাকায় বিক্রি হলো এবং আগের টিন সেডের অতি পুরাতন স্কুল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষনা বা নিলাম না করে ২৩ বছর আগের করা নতুন ভবন গোপনে তড়িঘড়ি করে নিলামে সভাপতি নিজ নামে নেয়া তা নিয়ে সচেতন মহলের মনে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । এছাড়া ওই স্কুলের ৩ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের মহগনি কৃষনচুড়া ও আম গাছ জাহাঙ্গীর আলম নামের ওই স্কুলের সাব ঠিকাদার ৫৭ হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও ওই স্কুলের একটি মরা রেইন্ট্রি গাছ কোন নিলাম করা হয় নি। যে কোন মুহুর্তে ওই গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে ছাত্রছাত্রীদের বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঘটতে পারে বলে জানান এলাকাবাসীরা।
গত বৃহস্পতিবার গাছ গুলো কাটতে গেলে স্থানীয় লোকজন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির নিকট পূনরায় নিলাম ডাকের দাবি জানান। স্কুলের সভাপতি বিষয়টি সমাধান এর নাম করে রাতারাতি গ্রামের আরো কয়েকজন প্রভাবশালীদের সাথে নিয়ে গ্রামবাসির আন্দোলন ধামাচাপা দিতে অভিনব কৌশলে কনৌজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত প্রায় লক্ষাধিক টাকা মুল্যের মরা রেইনটি গাছ গ্রামবাসিকে স্বল্প মুল্যে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোন সমাধান না করেই গত শনিবার গাছগুলো তরিঘরি করে কেটে নেয়। কিন্তু এখনও স্কুল ভবন ভাঙ্গতে পারে নি। গ্রামের অনান্য প্রভাবশালীরা সভাপতিকে সমর্থন করায় মুখ খুলতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। এ ঘটনায় গ্রামবাসি নামমাত্র নিলামের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে পুর্বের নিলাম বাতিল করে নতুন ভাবে নিলামের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান।