রবিবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » দশ বছরে বদলেছে বাঘা-চারঘাটের ভাগ্য
দশ বছরে বদলেছে বাঘা-চারঘাটের ভাগ্য
মাইনুল হাসান, রাজশাহী প্রতিনিধি :: (১৫ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.০১মি.) ২০০৮ সালের আগে রাজশাহীর যে জনপদ ছিলো অপেক্ষাকৃত অনুন্নত ও অবহেলিত সে জনপদ এখন উন্নয়নের মডেল। শুধু একজন মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উন্নয়নের বদলে যাওয়া জনপদের নাম চারঘাট-বাঘা। রাস্তা-ঘাট, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য ছাড়াও সব সেক্টরে এ দুই উপজেলায় লেগেছে ব্যাপক উন্নয়নের ছোয়া। গ্রামের অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক সবখানে এখন মসৃন পথ। আর বিদ্যুতের আলো প্রান্তিক মানুষের ঘরে ঘরেও।
এ দুই উপজেলায় গত ১০ বছরে গ্রামের চিত্রপট পরিবর্তনের কারিগর শাহরিয়ার আলম এমপি। বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তিনি। ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী এলাকা বাঘা-চারঘাটের উন্নয়নে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জয়ি হয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন করেন তিনি। রাষ্ট্রিয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে সদা সজাগ তিনি। তাই তার প্রচেষ্টায় অবহেলিত দুটি উপজেলায় এখন সর্বত্র উন্নয়নের দৃশ্যমান চিত্র।
দুই উপজেলার বাসিন্দারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলমের নেতৃত্বের কারণে এসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের ১০ বছরে শুধু বাঘা উপজেলাতে গ্রামীন অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন হয়েছে প্রায় ৭৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার। এ সকল উন্নয়ন মূলক কাজের মধ্যে রয়েছে-রাস্তা ঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, ব্রীজ-কালভাট স্থাপন, স্যানিটেশন স্থাপন, বাস টার্মিনাল নির্মাণ, স্কুল-ঘর নির্মান ও সংস্কার, ফায়ার স্টেশন নির্মান, আবাসন প্রকল্প ও পুলিশ ফাঁড়ি এবং মুক্তিযোদ্ধা কমপে¬ক্স ভবন নির্মাণ। প্রায় সমপরিমানণ উন্নয়ন হয়েছে জেলার চারঘাটেও। দুই উপজেলার বাসিন্দারা বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজশাহীর এ দুই উপজেলায় অসংখ্য উন্নয়ন হয়েছে।
আম উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলা। ১০ বছর আগেও রাজশাহীর এ দুটি উপজেলা ছিলো অনেকটায় অন্ধকারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো অপ্রতুল। রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের বানেশ^র থেকে ঈশ^রদী প্রধান সড়ক ছাড়া কোনো সড়কই পাকা ছিলো না। তবে দ্রুত উন্নয়নের ছোয়ায় পাল্টে গেছে এ দুটি উপজেলার দৃশ্যপট। কয়েক বছরের মধ্যে গ্রামে গ্রামে পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, সৌর বিদ্যুৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মানে পুরদস্তুর পাল্টে গেছে চারঘাট ও বাঘা উপজেলা। বদলে গেছে এ দুটি উপজেলার মানুষের জীবনচিত্র।
এলাকাবাসীর ভাষ্য গত ১০ বছরের এ দুই উপজেলায় সব রাস্তায় প্রায় পাকা হয়ে গেছে। অনেকে চ্যালেঞ্জ চুড়ে বলেন, এখন আর কাচা রাস্তা নেই এ দুই উপজেলায়। শুধু রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন নয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন মসজিদ-মন্দির, গির্জা-প্যাগোডা, পার্ক-বিনোদনকেন্দ্র, হাসপাতাল-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।
যেখানে আগে কাঁচা রাস্তা পর্যন্ত ছিল না, সেখানে এখন মসৃণ পাকা সড়ক। ভাঙা-চোরা মাটির রাস্তার বদলে কার্পেটিং রাস্তা। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। অবসান ঘটেছে ‘চরমপন্থার’। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গেও নেই দাঙ্গা-ফ্যাসাদ, হানা-হানি! অনেকটায় শান্তিময় এখন এ দুটি উপজেলা। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, দুই উপজেলার আমূল পরিবর্তনের ‘নায়ক’ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঘা-চারঘাট আসনটি বরাবরই ছিল বিএনপির দখলে। ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি ছিলো। ২০০৮ সালে নৌকার গণজোয়ারের মধ্যে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহরিয়ার আলম। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও ভোটযুদ্ধেই অবতীর্ণ হয়ে বিপুল ভোটে জয়ি হন তিনি। এরপর সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। আগেও টার্মে এমপি থাকা অবস্থায় এলাকার উন্নয়নে নেমে পড়েন তিনি। আর প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর উন্নয়নের মাত্রা যোগ হয়। শুধু তার প্রচেষ্টায় নানামূখি উন্নয়ন শুরু হয় দুটি উপজেলায়। এ উন্নয়নের বদলে যায় প্রতিটি গ্রামের পাড়া-মহল্ল থেকে অলিগলি পর্যন্ত। স্থানীয় লোকজন মনে করছেন, বাঘা-চারঘাটের মানুষ শাহরিয়ারের উন্নয়নে অনেক খুশি। তারা মনে করেন সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে এসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাঘা-চারঘাটের তিনটি পৌরসভা, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস এবং ১৪ ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) আফিস ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি দফতরের মাধ্যমে গত ১০ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
ভূমিহীন ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে এ দুটি উপজেলার চরাঞ্চলেও। গ্রামে গ্রামে কাচ রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন জনদুর্ভোগে থাকার পর সবগুলো পিচঢালা পথে রূপান্তরে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন দুই উপজেলার মানুষ।
স্থানীয়রা বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ দুটি উপজেলায় গত ১০ বছরে অসংখ্য উন্নয়ন মূলক কাজ হয়েছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে লোকজন আবারও শাহরিয়ারকে মূল্যায়ন করবে। মুল্যায়ন করবে বর্তমান সরকারকে।
সূত্রে জানা গেছে, শুধু বাঘা উপজেলায় ১৪৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯ টি কলেজ, ৯ টি মাদ্রাসা, ৫টি ভোকেশনাল ও ২টি স্কুল এ্যান্ড কলেজ। এর মধ্যে বাঘা উচ্চ বিদ্যালয়, খালিদাস খালি, জোতরাঘর, চন্ডিপুর, দাদপুর ও মনিগ্রাম এই ৬ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩০ টি করে ল্যাবটপ বিতরণের মাধ্যমে “ল্যাব ভবন প্রকল্প’’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২০০ টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ এবং ১০০ টি প্রাথমিক, ২১ টি মাধ্যমিক ও ১১ টি কলেজে নতুন অত্যাধনিক ভবন নিমান সম্পন্য করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর ৪৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৭ টি কম্পিউটার এবং ৩৫ টি পিন্টার বিতরণ করা হয়। একইভাবে উন্নয়ন হয়েছে চারঘাটেও।
রাজশাহীর বাঘা-চারঘাটের মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত। শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ কৃষক। এখানকার প্রধান অর্থকারী ফসলের মধ্যে অন্যতম আম, খেজুরের গুড়, ধান, পাট, আখ এবং আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। পদ্মার চরাঞ্চল এ উপজেলার মধ্যে পড়ায় সেখান থেকেও বিপুল পরিমান কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয় এবং চরের ফসল স্থানীয় চাহিদা পুরনের পাশা-পাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী করা সম্ভব হয়। বাঘায় দু’টি পৌরসভার মাধ্যমে গত ১০ বছরে প্রায় ১১০ কোটি টাকার উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ সমস্ত উন্নয়নের মাধ্যমে বদলে গেছে উপজেলার গ্রামীন জনপদ।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ শাহারিয়ার আলমের এপিএস সিরাজুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, বাঘা চারঘাটের তৃণমূল লোকজনের চাহিদা বিবেচনা করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উন্নয়ন কাজে হাত দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিগত ও বর্তমান সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক সহযোগীতায় শুধু বাঘা-চারঘাট নয়, বৃহত্তর রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। আগামি অর্থ বছরেও এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, শুধু রাস্তা-ঘাট নয়, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বয়স্ক ভাতা, বিধাব ভাতা এবং মাতৃত্বকালীন ভাতার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
এ দুটি উপজেলায় বাস্তবায়ন হয়েছে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস জানিয়েছেন, সড়কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গত দুই বছরে প্রায় দেড় হাজার সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং টিয়ার-কাবিখা কর্মসুচির মাধ্যমে অসংখ উন্নয়ন মূলক কাজ করেছেন। অপরদিকে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ উপজেলার অন্যান্য দফতরের মাধ্যমেও ঘটেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
এ দুটি উপজেলা ঘুরে উন্নয়নের চিত্র দেখা গেছে। রাস্তা-ঘাটের পাশাপাশি বিদ্যুতায়নের ক্ষেত্রে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম এমপি বলেন, তৃণমূল মানুষের চাহিদা বিবেচনা করে বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক সহযোগীতায় শুধু বাঘা-চারঘাট নয়, বৃহত্তর রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। আগামিতেও এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।