শুক্রবার ● ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরের কালীগঞ্জে বিপুল আনন্দ-উত্সাহে বড়দিন উদযাপিত
গাজীপুরের কালীগঞ্জে বিপুল আনন্দ-উত্সাহে বড়দিন উদযাপিত
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি:: গাজীপুরের কালীগঞ্জে পাপমুক্তি আর মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে বিপুল আনন্দ-উত্সাহ-উদ্দীপনায় ও বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহত্ ধর্মীয় অনুষ্ঠান বড়দিন৷ ‘খ্রিষ্ট প্রভু মুক্তিদাতা ইহলোকে এসেছেন শান্তি দিতে’ এ কামনায় কালীগঞ্জের গির্জাগুলোতে দুই দফায় খ্রিষ্টযাগ করা হয়েছে৷ মোমবাতি জ্বালিয়ে আবৃত্তির ভঙ্গিমায় উপজেলার গির্জাগুলো মুখরিত হয়ে উঠেছে যিশুভক্তদের শান্তি কামনায়৷
২৫ ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে শীতের হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে হাজার হাজার যিশুভক্ত ভিড় করেছেন গির্জাগুলোতে৷ সকাল ৭টায় খ্রিষ্টযাগের (প্রার্থনার) মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা৷ প্রার্থনার শুরুতেই মঙ্গলবাণী পাঠের মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধি এবং জগতের সব মানুষের মঙ্গল কামনা করা হয়৷ পরে সকাল ১০টায় বড়দিনের কেক কেটে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর শুরু হয় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের আকর্ষণীয় আয়োজন কীর্ত্তন অনুষ্ঠান৷
উপজেলার ৫টি মিশনের তুমলিয়া গির্জায় ফাদার টেনিস লাস গমেজ, নাগরী গির্জায় ফাদার আলবিন গমেজ, মঠবাড়ি গির্জায় ফাদার সুব্রত টলেন টুনু, রাঙ্গামাটিয়া গির্জায় ফাদার শ্যামল লরেন রেগো ও দড়িপাড়া গির্জায় ফাদার আলফ্রেড গমেজ প্রার্থনা করেন৷ প্রভু যিশু ইহলোকে এসেছেন শান্তির বাণী নিয়ে৷ তারা প্রার্থনা করেন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সবাই আলাদা না থেকে একসঙ্গে বসে সুষ্ঠু সমাধান করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য৷ তাহলে মুক্তি ও শান্তি ফিরে আসবে দেশে৷ মুক্তিদাতা যিশুকে বরণ করার জন্য নিজেদের মধ্যকার স্বার্থপরতা বিভেদ এবং যা অন্যায় তা পরিহার করে অন্তরে অন্তরে নতুন হয়ে ওঠার আহ্বান জানান৷ নতুন ভ্রাতৃত্ব সমাজ গড়ে তোলার জন্য প্রভু যিশুকে বিশ্বাস করে আরো উদ্যোমী হয়ে ওঠার কথাও বলেন৷
প্রার্থনা শেষে সবাই আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়৷ বড়দিনের উত্সবের আনন্দে উপজেলার পাঁচটি মিশনের তুমলিয়া, নাগরী, মঠবাড়ি, রাঙ্গামাটি ও দড়িপাড়া গির্জাকে গির্জাগুলো বর্ণিল আলোক সজ্জায় সজ্জিত হয়েছে ৷ বাড়িতে এবং গির্জাগুলোতে সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি৷ এখানকার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে তৈরি হয়েছে বাহারি রকমারি পিঠা ও কেক৷ তবে শিশুদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ ছিল লাল রঙের পোশাক পরিহিত বুড়ো সান্তা ক্লজের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ৷
বড়দিনের অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন গির্জাগুলোতে তাদের সঙ্গে উত্সবে যোগ দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক মিলন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মনিরুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ৷
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মনিরুজ্জামান আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, বড়দিনের অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার থেকেই উপজেলার সব গির্জায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ এ জন্য অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কালীগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় টহল ও অনুষ্ঠানস্থলে র্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে৷
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, উপজেলার সব গির্জায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কালীগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় টহল ও অনুষ্ঠানস্থলে র্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে৷
প্রসঙ্গত, ২৫ ডিসেম্বরকে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন বড়দিন বা ক্রিস্টমাস ডে হিসাবে পালন করেন সারা বিশ্বের খ্রিস্টান সমপ্রদায়৷ তিনি ইসলামে ধর্মে হযরত ঈসা (আ.) নামে পরিচিত৷ দুই হাজার চৌদ্দ বছর আগে মানুষকে পাপের আবর্ত থেকে মুক্তি দিতে পৃথিবীর বুকে আবির্ভাব হয় তাঁর৷ বর্তমান ফিলিস্তিনের বেথেলহেম নগরীতে কুমারী মাতা মেরির গর্ভে জন্ম নেন তিনি৷