রবিবার ● ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » মরণোত্তর ‘শ্মশানবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হলেন উখিয়ার নির্মল বড়ুয়া : অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন
মরণোত্তর ‘শ্মশানবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হলেন উখিয়ার নির্মল বড়ুয়া : অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন
পলাশ বড়ুয়া, উখিয়া :: উখিয়ার সমাজ সেবক নির্মল বড়ুয়া ২৬ ডিসেম্বর (শনিবার) দিবাগত রাত ২টা ৪০ মিনিটের সময় বার্ধক্য জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ পরলোক গমণ করেছেন (অনিচ্চবত সংখারা——– তেসং বুপো সামো সুখো)৷ তিনি উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের দক্ষিণ ক্লাশ পাড়া গ্রামের মৃত অখিল বড়ুয়ার কনিষ্ঠ পুত্র ৷ মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ ছেলে, ২ কন্যা সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন ৷
শনিবার বিকেল ৪ টায় প্রথম দফায় নিজ বাস ভবনে অনিত্য সভায় প্রয়াত নির্মল বড়ুয়া’র সামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে স্মৃতিচারণ কালে অন্যতম সাহচয্য ও বৌদ্ধ মহাশ্মশানের সাবেক সভাপতি মধু সুধন বড়ুয়া মেম্বার বলেন, তিনি দীর্ঘ সমাজ জীবনে বয়জৈষ্ঠ্য পরিমাপের শ্মশান প্রতীক হিসেবে মাইলফলক ছিলেন তাই তাঁকে “শ্মশান বন্ধু” উপাধিতে ভুষিত করার প্রস্তাব করলে উপস্থিত সংঘ পরিষদ ও হাজারো অধিক উপস্থিতিতে সাধুবাদের সহিত তা অনুমোদিত হয় ৷
তাঁর অনিত্য সভায় সংঘদান প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদক এবং মিয়ানমার সরকার কর্তৃক অগ্গমহাসদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ প্রাপ্ত, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপসংঘরাজ, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার অধিপতি শ্রীমত্ সত্যপ্রিয় মহাথের ৷ অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটির প্রফেসর শ্রীমত্ জিনবোধি মহাথের, উখিয়া ভিক্ষু সমিতির সভাপতি শ্রীমত্ রেবতপ্রিয় মহাথের, মহাসচিব এস. ধর্মপালং মহাথের, জ্ঞানসেন বৌদ্ধ ভিক্ষু-শ্রামণ প্রশিক্ষণ ও সাধনা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শ্রীমত্ কুশলায়ন মহাথের, বিদর্শন সাধক জ্ঞানীশ্বর থের, শ্রীমত্ শাসনপ্রিয় থের সহ শতাধিক অনুত্তর পূণ্যক্ষেত্র ভিক্ষু উপস্থিত ছিলেন৷
শ্মশান চত্বরে দ্বিতীয় দফা অনিত্য সভায় পাতাবাড়ী আনন্দ ভবন বিহারের উপাধ্যক্ষ শ্রীমত্ প্রজ্ঞাবোধি থের বলেন, নির্মল বড়ুয়া ব্যক্তি জীবনে কোন সাধারণ মানুষ ছিলেন না ৷ তিনি ১৯৩৭ইংরেজীতে এন্ট্রাস পাস করেন এবং ১৯৩৯ইং সনে স্বল্পকালীন ডিষ্ট্রিক্ট বোর্ডের অধীনে কলেরা, বসস্ত রোগের টিকাদান কর্মসূচীতে ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত থাকলেও পরবর্তীতে জেলায় ভুমি পরিমাপক (সার্ভেয়ার) হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন৷ সদ্ধর্মপ্রাণ নির্মল বড়ুয়ার সারা জীবন কোটবাজারস্থ বৌদ্ধ মহাশ্মশান ও বোধিজ্ঞান ভাবনা কেন্দ্র রক্ষা তথা সমাজের কল্যাণকর কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন ৷ তিনি সুশিক্ষিত ও সম্বান্ত বৌদ্ধ পরিবারের সন্তান হলেও নিজের সংসার তথা পুত্রাদিকে নিয়ে কখনো সেই উচ্চতায় ভাবেনি ৷ আজ তাঁকে সেই সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে তা যথোচিত বলে আমি মনে করছি ৷ তবে মরণের পূর্বে তা করা হলে জাতি সমাজের আরো শ্রীবৃদ্ধি পাবে এই প্রত্যাশা করছি ৷
তৃতীয় বারের মত বিশ্বশান্তি কামনায় পঞ্চশীল সহ অনিত্য সভায় প্রয়াত নির্মল বড়ুয়া সম্পর্কে শোক প্রকাশ করতে গিয়ে ঢাকা থেকে আগত বোধিজ্ঞান ভাবনা কেন্দ্রের পরিচালক আসি্ন জিন রক্ষিত থের বলেন, যথাযথ দায়িত্ব পালন করে নির্মল বড়ুয়া প্রয়াত হয়েছেন এখন আপনাদের দায়িত্ব এই শ্মশান ভুমিকে রক্ষা তথা উত্তোরত্তর শ্রীবৃদ্ধি করে নির্মল বড়ুয়ার কর্মকান্ডে বাঁচিয়ে রাখা ৷ সন্ধ্যা ৬টায় আসি্ন জিন রৰিত থের’র নেতৃত্বে নির্মল বড়ুয়া শবদাহ ক্রিয়ায় অগি্নসংযোগ করেন শ্রীমত্ শাসনপ্রিয় থের, মধু সুধন বড়ুয়া সহ নির্মল বড়ুয়ার ৫পুত্র শোনাধন বড়ুয়া, সুদর্শন বড়ুয়া, সুনীল বড়ুয়া, মিন্টু বড়ুয়া ও রূপন বড়ুয়া প্রমুখ ৷