শুক্রবার ● ২ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বিএনপি-জামায়াত সরকারে থাকার সময় ময়মনসিংহে পাকিস্তানি বাহিনীর মতো অত্যাচার করেছিল : প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি-জামায়াত সরকারে থাকার সময় ময়মনসিংহে পাকিস্তানি বাহিনীর মতো অত্যাচার করেছিল : প্রধানমন্ত্রী
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :: (১৮ কার্তিক ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৪৫মি)‘বিএনপি-জামায়াত সরকারে থাকার সময় ময়মনসিংহে পাকিস্তানি বাহিনীর মতো অত্যাচার করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শুক্রবার (২ নভেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এ অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৪টা ২৮মিনিটে জনসভার মঞ্চে দাঁিড়িয়ে তিনি ৫টা ০৭ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ৩৯ মিনিটি বক্তব্য রাখেন। তার আগে সরকারপ্রধান মঞ্চের পাশে ১৯৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা ‘জাতির জনককে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার কথা স্মরণ করে বলেন, মানুষ তার আপনজনকে হত্যার বিচার চাইতে পারে, আমি এবং আমার বোনকে সেই বিচার চাওয়ার সুযোগও দেওয়া হযনি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করতে চেয়েছিল জিয়াউর রহমান।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করে। এই ময়মনসিংহে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর মতো অত্যাচার করেছিল।
২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনে হারানো হয় বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারপর ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ দেশকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে মারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মানুষ মারে, নির্যাতন করে, আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কোনো নির্যাতন করে না।
তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহে পৌছে এ বিভাগের ১৯৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিকেল সাড়ে তিনটায় তিনি ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছান। পরে তিনি বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন। বিকেল ৪টা ২৮মিনিটে জনসভায় মঞ্চে দাঁিড়িয়ে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এসব প্রকল্পের কথা জন সভায় তুলে ধরেন।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, ময়মনসিংহ এফএম রেডিও, শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ময়মনসিংহ সদর এবং ত্রিশাল উপজেলা। নেত্রকোনায় মোহনগঞ্জ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র্র, শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা আটপাড়া ও খালিয়াজুড়ি। শেরপুর জেলার ৪৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে নালিতাবাড়ি উপজেলা পরিষদ ভবন, নালিতাবাড়ি উপজেলায় ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল, একই উপজেলার রাজনগর এলাকায় কৃষক সেবাকেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান মডেল কলেজের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস, একই উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৮টি ডাগওয়েল নির্মাণ, তারাকান্দা রাবার ড্যাম, উরফা ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল, গণপদ্দী ইউনিয়নে এসইএসডিপি ভবন, নকলা-নালিতাবাড়ি ফোরলেন সড়ক, চন্দ্রকোণায় পুলিশ ফাঁড়ি, ধনাকুশা বিদ্যালয়ে চারতলা ভবন, বানেশ্বরদী দিশারী উচ্চ বিদ্যালয় ভবন, ডেবুয়াচার সোলারচালিত ডাগওয়েল, চন্দ্রকোনা থেকে ডোয়াতলা পর্যন্ত সড়ক, নকলা পৌরসভার শাহরিয়া মাদ্রাসায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, চরমধুয়া সোলারচালিত ডাগওয়েল, স্থল বন্দর সংলগ্ন সড়ক, রূপনারায়ণকুড়া এইচএসডিপি স্কুল, রূপনারায়ণকুড়া নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়, রূপনারায়ণকুড়া ধারা থেকে পাইকাতলী হয়ে কদমতলী পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়ক, যোগানিয়া ফ্লাড সেন্টার কাম স্কুল নিম্ন মাধ্যমিক ভবন, বালুঘাটা ব্রিজ, বালুঘাটা বাজার থেকে রসুলপুর বাজার পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এলজিইডি সড়ক, পাগলাজানী ও দক্ষিণ নাকশির দুইটি প্রাইমারি স্কুলকে হাইস্কুলে রূপান্তর, বাঘবেড় রাবার ড্যাম, বাঘবেড় চেল্লাখালি নদী খনন, উত্তর রাণীগাঁও থেকে গাজীরখামার মেইন রোড পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলজিইডি সড়ক স্থাপন, নালিতাবাড়ি পৌর ভবন ও নাজমুল স্মৃতি কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণ।
জামালপুর জেলায় ১৯টি প্রকল্প। এগুলো হলো- বকশীগঞ্জ উপজেলার জব্বারগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ ভায়া মাদারের চর সড়কে পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদের ওপর ৫৮৫ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ, জামালপুর-চেচুয়া-মুক্তাগাছা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ (ব্রক্ষপুত্র সেতু এপ্রোচসহ) প্রকল্প ও মেলান্দহ উপজেলায় ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট।
প্রধানমন্ত্রী সভাস্থলে আসার আগে জনসমুদ্রে পরিণত হয় জনসভাস্থল। সড়কজুড়ে নাচ-গান আর বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে জনসভায় যোগ দিতে থাকে নেতাকর্মীদের ¯্রােত।
জনসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ‘বিএনপি ও গণফোরামসহ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সদ্য-অনুষ্ঠিত সংলাপ প্রসঙ্গে বলেন, এই বিএনপি-জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছে। খুনিদের বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। এই বিএনপি ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। যারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপের কোনো কথাই ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার উদারতা দেখিয়ে সংলাপে বসেছেন। এটা তার উদারতার প্রকাশ।
‘আমরা কারও কাছে নতি স্বীকার করিনি, কারও চাপের মুখেও সংলাপে বসিনি’- বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট জহিরুল হক খোকার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ছাড়াও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য,২০১৩ সালের জুনে সর্বশেষ ময়মনসিংহ এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নৌকার পক্ষে তিনি ভোট চেয়েছিলেন এবং নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি সব রকমের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়ে কথা রাখায় স্থানীয় জনসাধারণও খুশি বলে জানান মাঠে আগত জনসাধারণ।