রবিবার ● ৪ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন আ’লীগ-জাপা মুখোমুখি
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন আ’লীগ-জাপা মুখোমুখি
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (২০ কার্তিক ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৩৭মি) আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে নিবার্চনী হাওয়া বইছে। সিলেট জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি। বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরের প্রায় তিন লাখ ভোটার নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসন। সবের্শষ ২০১৭ সালের হালনাগাদকৃত ভোটারের মধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলায় ১,৫০,৬০৩ এবং ওসমানীনগর উপজেলায় ১,৩৫,৮০০ ভোটার রয়েছেন।
এ আসনের রয়েছে অনেক স্মৃতিকথা। কারণ, দেশ স্বাধীনের পর থেকে কোনো রাজনৈতিক দল, এমনকি সাবেক কোনো সাংসদ দ্বিতীয়বারের মতো এ আসন দখলে রাখতে পারেনি। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ আসনে জাতীয় পার্টির ও বিএনপির একক প্রার্থীর থাকলেও আ’লীগে রয়েছেন একাধিক প্রার্থীর। এবারের নিবার্চনে খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের নেতৃবৃন্দসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর ও নতুন-পুরাতন মিলে প্রায় দশজন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।
এ আসন জোটগত কারণে জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ এবার তাদের নিজেদের প্রার্থীর চায়। এজন্য তারা জোর লবিং ও নানাবিধ তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে এখানে আ’লীগ ও জাতীয় পার্টির মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ দুজনেই সামাজিক, সাংস্কৃতিক, দলীয়, ধর্মীয় ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানে প্রচারণায় সরকারের উন্নয়নের চিত্র সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নৌকার জন্য ভোট চাইছেন এবং সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন বলে ওয়াদা করছেন।
বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও এই আসনের সাবেক সাংসদ এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে উপজেলা বিএনপি একটু কোণঠাসা অবস্থায় পড়েছে। স্থানীয় পর্যায় দীঘির্দন যাবৎ রাজনৈতিক মাঠে তাদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে নিবার্চনে বিএনপি যাবে কি না কিংবা কারাবন্দি অবস্থায় তিনি নিবার্চন করতে পারবেন কি না, এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।
এলাকাবাসী জানান, জাতীয় সংসদ নিবার্চন যদি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণর্ভাবে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে এই আসনে আ’লীগ আর বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে ভোটের লড়াই হবে। বিএনপি তাদের প্রচার-প্রচারণায় কী কারণে নীরব, নাকি জোটগত কারণে তারা নীরব রয়েছে কেউ সঠিক বলতে পারেননি।
আ’লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দুজনেই বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরে নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন এবং বিভিন্নভাবে জোর প্রচার-প্রচারনাসহ গণসংযোগ-পথসভা করে যাচ্ছেন।
শফিকুর রহমান চৌধুরীকে গত এক মাস উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়। এলাকায় তার নাম ২৪ ঘণ্টার রাজনীতিবিদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ আসনটি আ’লীগের আসন। বঙ্গবন্ধুর আমল এবং শেখ হাসিনার আমলে এই আসন ছিল আ’লীগের। যখন তিনি এই আসনে নিবাির্চত হন তখন এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছিল। এবারও সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে মনোনয়নের আশাবাদীও তিনি। তবে দলের সিদ্ধান্তকে তিনি প্রাধান্য দিচ্ছেন। নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন এবং যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে নিয়ে মাঠে কাজ করবেন বলে তিনি জানান।
শফিক চৌধুরী বলয়ের উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক আমির আলী চেয়ারম্যান বলেন, বিগত পাঁচ বছর বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তবে সরকারের উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরীকে এবার সিলেট-২ আসনে মনোনয়ন দিতে হবে।
অন্যদিকে, আ’লীগ থেকে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দেশে-বিদেশে প্রচার-প্রচারণা শেষে এখন বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরের বিভিন্ন ইউনিয়নে মোটরসাইকেল শোডাউন ও গণসংযোগ-পথসভা করে যাচ্ছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ নিতে তিনি প্রস্তুত আছেন। তবে দলের ঊর্ধ্বে কেউ নন। দলীয় হাইকমান্ড আ’লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা মেনে নেবেন। দল চাইলে নিবার্চন করবেন। আবার দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার হয়ে একসঙ্গে কাজ করবেন বলে তিনি জানান।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলয়ের উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদের মতে, জাতীয় নিবার্চনে নৌকাকে বিজয়ী করতে হলে নতুনত্ব এবং গ্রহণযোগ্য নেতা প্রয়োজন। ইতিহাস বলে এ আসনে সাবেক কোনো প্রার্থী কখনও দুইবার নিবাির্চত হননি। তারা মনে করছেন এই আসনে আনোয়ার চৌধুরীর বিকল্প আর কাউকে দেখছেন না।
অন্যদিকে, গত বছরের ডিসেম্বরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর মা সূযর্বান বিবিকে দেখতে এসে বিএনপি থেকে এ আসনের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ইলিয়াস আলীর সহধমির্ণী তাহসিনা রুশদীর লুনার নাম ঘোষণা করে যান।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি একটি নিবার্চনমুখী গণতান্ত্রিক দল। তাই দল যে সিদ্ধান্ত নেবে তারা সেটাই করবেন। নেত্রীর কারামুক্তি না হওয়া পযর্ন্ত বিএনপি নিবার্চনে অংশ নেবে না। আর নিবার্চনে গেলে এ আসনে তাহসিনা রুশদির লুনা নিবার্চনে অংশ নেবেন।
অন্যদিকে, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ মুনতাসির আলী বলেন, দল থেকে তাকেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোট থেকেই তিনি সিলেট-২ আসনে নিবার্চন করার আশাবাদী। যদি বিএনপি সমঝোতা ছাড়া তাদের দল থেকে প্রার্থী দেয়, তাহলে খেলাফত মজলিসেরও নিবার্চন করার অধিকার আছে।
বতর্মান সাংসদ জাতীয় পাটির্র ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া নিবার্চনে অংশ নেবেন বলে আগে থেকেই প্রচার-প্রচারণায় মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্র থেকে গ্রিন সিগন্যাল তাকে দেয়া হয়েছে। আর দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নিভর্র করবে জোট থাকবে কি না বা কার সাথে জোট হবে। কিন্তু এই মুহূতের্ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় পার্টি একক নিবার্চন করবে। সেই হিসাবে তার এ আসনে নিবার্চনের প্রস্তুতি রয়েছে।
ইমরান আহমদ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. এনামুল হক সরদার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নিবার্চনে অংশ নেবেন। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংসদের তিনশটি আসনেই নিবার্চন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তাই এ আসন থেকে নিবার্চনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলের বিশ্বনাথ উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ আমির উদ্দিন। তিনি বলেন, নিবার্চনে অংশগ্রহণ করার লক্ষ্য হচ্ছে দেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে দুনীির্ত, অরাজকতা ও সন্ত্রাস। আর এসব দূর করতে হলে সৎ, নীতিবান ও আল্লাহ-ভীরু নেতৃত্বের প্রয়োজন। ইসলাম প্রতিষ্ঠা ছাড়া সঠিক নেতৃত্ব আসবে না। একমাত্র ইসলাম প্রতিষ্ঠাই পারে সমাজের সকল অরাজকতা দূর করতে।
আবার ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা যুগ্ম সম্পাদক আ ক ম এনামুল হক এ আসনে নিবার্চন করবেন বলে বেশ আগে থেকেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, এ আসনের বিশাল ভোটার শ্রেণি বিকল্প নেতৃত্বের প্রত্যাশী। তারা আদর্শ ও উন্নয়ন সমন্বিতভাবে চান। জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণের জন্য দল তাকে প্রার্থী করেছে। জনগণের পাশাপাশি বিভিন্ন দলেরও সমর্থন রয়েছে বলে তার দাবি। তাই একাদশ সংসদ নিবার্চনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।