সোমবার ● ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » চট্টগ্রামে ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক
চট্টগ্রামে ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :: নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা বাড়ছে। প্রার্থীদের ঘরে ওঠাবসায় দেখা যাচ্ছে অপরিচিত লোকজন। তারা ভাড়া করা সন্ত্রাসী বলে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক।
কোথাও কোথাও গুঞ্জন চলছে, ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে হবে না কাউকে। কেন্দ্র দখল করে ভোট নিয়ে নেবেন প্রার্থীরা। এ জন্য সন্ত্রাসীদের হাট বসেছে প্রার্থীদের ঘরে।
এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের প্রার্থীদের দিকে অভিযোগের তীর বেশি। তবে অভিযোগ আছে বিএনপির প্রার্থীর ক্ষেত্রেও।
স্থানীয় একাধিক সূত্রের অভিযোগ, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে সন্ত্রাসী তৎপরতা ততই বাড়ছে নির্বাচনী এলাকায়। ইতিমধ্যে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভায়। সন্ত্রাসীদের ভয়ে সাতকানিয়া পৌরসভার বিএনপির প্রার্থী ও রাউজানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর খবর ছড়িয়ে পড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, মিরসরাই, বারইয়ারহাট, সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, পটিয়া ও চন্দনাইশে ভোটকেন্দ্র দখল করার জন্য নীরবে সন্ত্রাসী ভাড়া করে আনছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ঠেকাতে সন্ত্রাসীদের প্রস্তুত রাখছেন বিএনপির প্রার্থীরাও।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক প্রার্থী বলেন, “এ সরকারের আমলে ভোট কাউকে দিতে হয় না। ভোট হয়ে যায়। সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে আগের সব কটি নির্বাচনে আমরা তা দেখেছি। পৌরসভা নির্বাচনেও একই কায়দায় ভোট করবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। কেন্দ্র দখল করতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভাড়া করে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনেছেন বলে খবর পেয়েছি আমরা।”
তিনি আরো বলেন, “কেন্দ্র দখল ঠেকাতে আমিও প্রস্তুত থাকছি। যদিও সবাই জানে, কেন্দ্র দখলের কাজে সরকারি দলের পক্ষ নেবে প্রশাসন; কিন্তু নির্বাচনী মাঠ তো একতরফা ছেড়ে দেওয়া যায় না।”
প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করেছেন, সীতাকুণ্ড পৌরসভার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত নায়েক শফিউল আলম। তিনি বলেন, “রবিবার সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার জন্য উপস্থিত হওয়ার পর দলের মনোনীত প্রার্থী বদিউল আলমের অনুসারী সন্ত্রাসীরা প্রেসক্লাবে হামলা চালায়।এ সময় তারা ১০-১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। রকেট লঞ্চার নিক্ষেপ করে প্রেসক্লাবে। মারধর করে ১০ জন সাংবাদিককে আহত করে। এ থেকে সহজে অনুমেয়, তারা নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোট নিয়ে নেবে।”
প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম বলেন, “তাদের ঠেকাতে আমার কোনো প্রস্তুতি নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে। যা ব্যবস্থা নে্ওয়ার প্রশাসনই নেবে।”
সাতকানিয়া পৌরসভা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপির প্রার্থী রফিকুল আলমকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রসীরা। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ষড়যন্ত্রে পুত্রবধূকে দিয়ে মামলা করিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ।
বাঁশখালী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিমুল হক চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, “বিএনপির প্রার্থী কামরুল ইসলাম হোসাইনী সন্ত্রাসী দিয়ে কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা করছেন। এ জন্য তিনি বিএনপি ও জামায়াতের বিপুলসংখ্যক সন্ত্রাসী এনেছেন। এসব সন্ত্রাসীর অনেকেই বিএনপির প্রার্থীর ঘরে অবস্থান করছেন।”
সন্দ্বীপ পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী আজমত আলী বাহাদুর জানান, নির্বাচনী প্রচারণার নামে গত কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগত লোকজনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। তারা কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা করছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, “প্রচারণার শুরু থেকে আচরণবিধি লঙ্ঘন, ভয়ভীতি ও হামলা এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের তৎপরতার বিষয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একাধিক অভিযোগ এসেছে। এমনকি সন্ত্রাসীদের একটি তালিকাও আমাদের হাতে এসেছে, যা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের হাতে পৌছেছে। এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা এলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, “সন্ত্রাসীর ভয়ে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভোটকেন্দ্র দখল হলে পুলিশ প্রশাসন চেয়ে চেয়ে দেখবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। সন্ত্রাসী ধরতে ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে যৌথ বাহিনী।” নির্বাচনের আগেই সন্ত্রাস আতঙ্ক কেটে যাবে বলে জানান তিনি।
আপলোড : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : ৫.০০মিঃ