শুক্রবার ● ৩ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » ব্রহ্মপুত্র নদ খনন প্রকল্প কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ
ব্রহ্মপুত্র নদ খনন প্রকল্প কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদের নব্যতা ফেরাতে ও ফেরি চলাচল সুবির্ধাতে বাহাদুরাবাদ থেকে বালাসীঘাট পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এলাকা খনন কাজ শুরু করেছে বিআইডাব্লিউটিএ। কিন্তু খনন প্রকল্প কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাদের অভিযোগ, অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করে খনন কাজ করা হচ্ছে ফসলি জমিতে। এতে জমির ভূট্টা, বাদাম ও কাউনসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে কাজ করছে অন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ কারণে প্রকল্প নিয়ে লুকোচুরির অভিযোগও তুলেছেন স্থানীয়রা। অনিয়ম ও দায়সারা গোছের নদ খননে উপকার তো হবেই না, বরঞ্চ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন নদী পাড়ের মানুষরা।
এদিকে, নদ খননের নামে অনিয়ম-দুর্নীতিতে কোটি টাকা লুটপাটের কারণে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে ও সঠিকভাবে প্রকল্পের কাজ সম্পনের দাবিতে বিআইডাব্লিউটি, জেলা প্রশাসক ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু অভিযোগের পরেও প্রকল্প এলাকা তদন্ত বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, গাইবান্ধা শহরের পুর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। নদের মুল অংশ ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। নদের বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। ফলে এই নদ হারিয়ে ফেলেছে তার সৌন্দর্য। পলি জমে নদটি আজ মৃত্যু প্রায়। নব্যতা ফেরাতে এবং ফেরি চলাচলের সুবির্ধাতে নদের খনন কাজের প্রকল্প হাতে নেয় বিআইডাব্লিউটিএ। প্রয় পৌনে চারশত কোটি টাকা ব্যয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট থেকে বালাসীঘাট পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এলাকায় খনন কাজ দায়িত্ব পায় নারায়নগঞ্জের ডকেয়ার লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ বিক্রি করেন দেন অন্য ঠিকাদারের কাছে। গত এক মাস ধরে নদ খনন কাজ শুরু হয়েছে। খনন কাজের শুরু থেকেই এলাকাবাসির অভিযোগ, নকশা পরিবর্তন ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে যেনতেনভাবে কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় টাঙানো হয়নি সাইনবোর্ড। অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি খনন কাজের নকশা অনুযায়ী কোন লাল পতাকা নিশানও।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজ শুরুর সময় নদ খনন নীতিমালা ও প্রকল্পের বিধিমালা তোয়াক্কা না করে অনিয়মের মাধ্যমে কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অপরিকল্পিতভাবে নদীতে কয়েকটি ছোটবড় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। আবার নদীর তলদেশ থেকে উত্তোলন করা বালু ফেলা হচ্ছে নদের তীরেই। নদের পুর্ব অংশে মুল গভীরে খননের কথা থাকলেও তা মানছেনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অর্থ বাঁচাতে প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করে ফসলি জমিতে করা হচ্ছে খনন কাজ। অথচ যেখানে খনন কাজ চলছে সে জমি মালিকানাধীন। এসব জমিতে বিভিন্ন ফসল করে জীবিকা নির্বাহ করেন চরাঞ্চলসহ নদী পাড়ের মানুষরা। কিন্তু খনন কাজ চলমান থাকায় এসব জমির ভুট্টা, গম, বাদাম ও কাউনসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ‘নদ খননে আমরা কোন সুফল দেখছি না। খনন কাজে মানুষের লাভের চেয়ে জমি এবং জমির ফসল হারিয়ে ক্ষতি হচ্ছে। আর লাভ হচ্ছে খননকাজে জড়িতদের। খনন করা বালু নদীর তীরের ফেলা হচ্ছে, আবার সেই বালু বৃষ্টি ও বর্ষাতে নদেই চলে যাবে। তাই অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সরকারের টাকা পানিতে অপচয় হবে’।
এদিকে, অনিয়মের বিষয়ে জানতে খোঁজাখুজি করেও প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বা বিআইডাব্লিউটিএ’র সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওযা যায়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনও কিছু জানেন না বলে অভিযোগ এড়িয়ে যান। তবে বিআইডাব্লিউটি-এর তদারিকতে থাকা নুরুল ইসলাম নামে এক স্টাফ মুঠোফোনে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী খনন কাজ করছেন তারা। মালিকানাধীন কোন জমি দখল করা হয়নি। এছাড়া খনন কাজে কোন অনিয়মও হয়নি বলে দাবি করেন তিনি’। এ বিষয়ে জানতে বিআইডাব্লিইটিএ’র প্রধান কার্যালয় এবং কার্যদেশ পাওয়া নারায়নগঞ্জ ডকেয়ার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিসের টেলিফোন নাম্বারে একাধিকবার ফোন করেও কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বলেন, ‘প্রকল্পের নকশা ও নিয়ম অনুযায়ী খনন কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু কোন অনিয়ম হলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে নদীতে মালিকাধীন কারো জমি থাকতে পারেনা বলেও জানান তিনি’।
তবে দ্রুতই অনিয়ম খতিয়ে দেখে নিয়ম ও নকশা অনুযায়ী নদীর খনন কাজ সম্পন্ন হলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক হবে, এতে ভাঙন রক্ষার পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনে সহায়ক হবে- এমনটাই দাবি নদী পাড়ের মানুষের।
গোবিন্দগঞ্জে পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ডোবার পানিতে পড়ে আঁখি নামের ১৫মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বহস্পতিবার উপজেলার রাখাল বুরুজ ইউনিয়নের উত্তর মিয়া পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আঁখি ওই গ্রামের জাফু মিয়ার কন্যা।
নিহত আঁখির মা ফেন্সি বেগম ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সদ্য হাটতে শেখা শিশু আঁখি বাড়িতে খেলা করছিলো। বাড়ির সবাই ধান কাটা ও মাড়াই কাজে ব্যস্ত থাকার কোন এক ফাঁকে আঁখি হাটতে হাটতে বাড়ির পাশের ডোবায় পড়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে বাড়ির পাশের ডোবা থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।